কলকাতা: রাজ্যে করোনা যুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল রাজ্য বিজেপি। কিন্তু, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখর তাঁর চেনা ছন্দে নেই। যে তীব্র এবং তীক্ষ্ণ ভাষায় তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করেন, তা তিনি করছেন না। সেক্ষেত্রে কিছুটা বিভ্রান্ত বিজেপি প্রায় এক ডজন অভিযোগ নিয়ে রাজ্যপালের কাছে পৌঁছে হারলেও মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে কড়া বার্তা দেননি তিনি।
রাজ্যপাল জগদীপ ধনখরের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্ক অম্ল-মধুর। কখনও তিনি মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে পুজো দেখতে গিয়েছেন, আবার কখনও তাঁর সরকারকে ঘুরিয়ে অপদার্থ বলেছেন। নবান্ন এবং রাজভবনে দূরত্ব যখন দিন-দিন বেড়েই চলেছে, সেই সময় এই দ্বন্দ্বের রাজনৈতিক ডিভিডেন্ট ভোগ করছে ৬ নম্বর মুরলিধর সেন লেনে বসা রাজ্য বিজেপির স্ট্রাটেজিস্ট'রা। কিন্তু, করোনা মোকাবিলার প্রশ্নে মমতাকে বিধলেন কই রাজ্যপাল। বিভ্রান্ত বিজেপি রাজ্যপালের কাছে গিয়েছে বেশ কিছু অভিযোগ নিয়ে। বিজেপি সূত্রে খবর, রাজ্যপালকে স্মারকলিপি দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ সহ বাকি নেতারা বলছেন, রাজ্য সরকার করোনা নিয়ে যাবতীয় তথ্য গোপন করছে। কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের তথ্যের এই ফারাক মূল সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিজেপির পক্ষ থেকে রাজ্যোপালকে বিষয়টি দেখার অনুরোধ করা হয়েছে। প্রয়োজনে একটি 'সেন্ট্রাল মনিটরিং কমিটি' গঠনের পক্ষে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের 'কো-মর্বিডিটি' তত্ত্ব'র বিরুদ্ধে রাজ্যপালকে নালিশ জানিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। দিলীপ বলেছেন, বেশিরভাগ মানুষের সুগার, প্রেসার থাকে। সেই মানুষগুলি করোনার শিকার হলে, লেখা হচ্ছে কো-মর্বিডিটি। বিজেপির বক্তব্য, ডাক্তারদের নিরাপত্তা নেই। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ, হাওড়া হাসপাতালের সুপার নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পিপিই নেই। তার বদলে 'raincoat' দেওয়া হচ্ছে। বিজেপি বক্তব্য, উত্তরবঙ্গের করোনা কোয়ারেন্টিনে কেন্দ্র এবং রাজারহাট কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র থেকে রোগী পালাচ্ছে। রাজ্যের কোনও নজর নেই।
তবলীগ জামাত ইস্যুতেও বিজেপি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ করেছে। বিজেপির বক্তব্য, রাজ্যে এই রকম কতজন আছে এবং তাদের কী করা হয়েছে স্পষ্ট জানানো হোক। সেই সঙ্গে ত্রাণ নিয়ে রাজনীতি বন্ধ হোক। বিজেপি কর্মীরা ত্রাণ দিতে গেলে পুলিশ কেন গ্রেফতার করেছে, সেই প্রশ্নের জবাব প্রশাসনের থেকে রাজ্যপাল চেয়ে দেখুক, চায় বিজেপি। করোনা নিয়ে কেন কোনও জেলা শাসক সর্বদল বৈঠক ডাকেনি এবং তৃণমূল ছাড়া কেন অন্য রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের কাজে লাগানো হচ্ছে না, তা রাজপালকে দেখার দাবি জানিয়েছে বিজেপি। বাজারেও উপরের সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই, জিনিসপত্রের দাম চড়চড় করে বাড়ছে, ফোঁড়ে রাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না রাজ্য, দাবি বিজেপির।
কিন্তু, প্রশ্ন, রাজ্যপাল কী মমতাকে চাপে রাখতে পালটা রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন? করোনা মোকাবিলার প্রশ্নে, রাজ্যপাল সরকার বিরোধিতায় যায়নি। যদি ভবিষ্যতেও না যাও, বিজেপির পাল্টা চাপ বাড়বে।