প্রথম দফার ভোট থেকেই কঠিন লড়াইয়ে পড়ে গেছে বিজেপি। বুধবার দেশের ৯১ আসনে ভোট গ্রহণ হয়েছে। ২০১৪’র ভোটে ৩২আসন ছিল বিজেপি’র দখলে। এই সংখ্যা ধরে রাখা কেন্দ্রের শাসক দলের পক্ষে প্রায় অসম্ভবই বলে রাজনৈতিক মহলের গণনা।
অন্ধ্রপ্রদেশে ২৫ লোকসভা কেন্দ্রের সঙ্গে বিধানসভার ভোটও হয়েছে। তেলেঙ্গানায় হয়েছে লোকসভার ১৭টি আসনেরই ভোট। এই দুই রাজ্য বাদ দিয়ে যে ৪৯ আসন, তার ২৯টিতেই গতবার জিতেছিল বিজেপি। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, উত্তরাখণ্ডের যে ১৭ আসনে এদিন ভোট হয়েছে তার ১৬টিতে জয়ী হয়েছিল তারা।
রাজনৈতিক পরিস্থিতির গুরুতর বদল হয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। উত্তর প্রদেশে আজ ভোট হওয়া ৮ আসনের সব আসনেই জিতেছিল বিজেপি। ৭আসনে নিকটতম প্রার্থীর থেকে ২০শতাংশ ভোটের ব্যবধান ছিল। পশ্চিম উত্তর প্রদেশের এই আট আসনে গতবার ভোট হয়েছিল মুজফফরনগর সাম্প্রদায়িক সংঘাতের প্রেক্ষাপটে। মেরুকরণ ছিল তীব্র। সেই বিভাজনের তীব্রতা এবার নেই। যদিও চেষ্টা হয়েছে। বিশেষ করে শেষ দিকে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি সাম্প্রদায়িক উসকানি দেবার চেষ্টা করেছেন। রাজনৈতিক বিন্যাসের পরিবর্তন হয়েছে সমাজবাদী পার্টি-বহুজন সমাজ পার্টি-আর এলডি’র জোট হওয়ায়। পশ্চিম উত্তর প্রদেশে বৃহস্পতিবার বিজেপি’র বিরুদ্ধে ঢেলে ভোট পড়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। জাঠ-মুসলিম-দলিত একসঙ্গে ভোট দিয়েছেন। কৈরানায় দলিতদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার, মুজফফরনগরের দাপুটে বিজেপি সাংসদ সঞ্জীব বালিয়ান অভিযোগ করেছেন সংখ্যালঘু নিবিড় এলাকায় ‘ভুয়ো ভোট’ পড়েছে।
বিহারে যে ৪ আসনে ভোট হয়েছে তার তিনটি ছিল বিজেপি’র হাতে। চতুর্থ আসন ছিল শরিক এলজেপি’র। এবারে বিহারে পরিস্থিতির বদলে জেতা আসনও জোট শরিককে ছেড়ে দিতে হয়েছে। শুধু অওরঙ্গাবাদ আসনে বিজেপি লড়াই করছে। বিহারেও বিরোধীদের বড় জোট হয়েছে। আরজেডি-কংগ্রেস ছাড়াও আরও তিনটি দল নিয়ে জোট হয়েছে। বামপন্থীদের সঙ্গে আসন বোঝাপড়া না হলেও আরজেডি জোট সামাজিক বিন্যাসের দিক থেকেও বিভিন্ন অংশকে এক জায়গায় জড়ো করতে পারছে। এদিনের ভোট চিত্রে সেই ছবি প্রতিফলিত হয়েছে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা। এদিনের চার আসনে কংগ্রেস ছিল না।
কংগ্রেস আশাবাদী মহারাষ্ট্র নিয়ে। মহারাষ্ট্রের ৭ আসনে ভোট হয়েছে। সাতটিই ছিল বিজেপি-শিবসেনা জোটের হাতে। বিজেপি’র ছিল পাঁচ, শিবসেনার দুই। বিদর্ভ এলাকার এই সাত আসনে জনসমর্থনের ভারসাম্য বড় আকারে বদলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতটাই যে নাগপুরে নীতিন গড়করি বিপদের মধ্যে রয়েছেন। গড়করি তাঁর নেতৃত্বে নাগপুরের উন্নয়নের গল্প শোনালেও কর্মহীনতা বড় আলোচ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বিদর্ভে খরা চলছে, তীব্র কৃষি সঙ্কট। সব ছাপিয়ে এই প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। গত নির্বাচনের মুখে বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল পৃথক বিদর্ভ রাজ্য গঠনের। এখন সেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে রাজ্য ও কেন্দ্রের শাসক দলের নেতাদের। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, কংগ্রেস নেতা পৃথ্বীরাজ চৌহান বিদর্ভে ‘বিস্ময়কর ফল’ হবে বলে দাবি করেছেন। বিজেপি’র আশা, প্রকাশ আম্বেদকারের দল কংগ্রেসের ভোট কাটবে। বিজেপি নেতারা অবশ্য মানছেন, গতবারের ফল কোনও অবস্থাতেই ধরে রাখা যাবে না।
ছত্তিশগড়ে গতবার লোকসভা ভোটের সময়ে রাজ্যে বিজেপি সরকার ছিল। এবারে কংগ্রেসের সরকার। বৃহস্পতিবার ভোট হয়েছে শুধু বস্তার কেন্দ্রে। কংগ্রেসের দখলে এদিন ভোট হওয়া আসনের ৭টি ছিল। কংগ্রেসের পক্ষেও পরিস্থিতি খুব স্বস্তিকর নয়। তেলেঙ্গানার দুটি আসন নিয়ে কংগ্রেসের চিন্তা রয়েছে। পাঁচ মাস আগেই রাজ্যের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস মাত্র ১৯ আসন পেয়েছে। রাজ্যের সব লোকসভা আসনেই টিআরএস জিতে যেতে পারে বলে কোনও কোনও সমীক্ষায় দেখা গেছে। তেমনই অরুণাচল, মেঘালয়, মণিপুর, মিজোরামের আসন কংগ্রেস ধরে রাখতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্র প্রদেশে আঞ্চলিক দলেরই প্রাধান্য। বৃহস্পতিবার এই দুই রাজ্যের ৪২ লোকসভা আসনে ভোট হয়েছে। তেলেঙ্গানায় বিজেপি তৃতীয় শক্তি, অন্ধ্রে পঞ্চম। এখান থেকে আদৌ কোনও আসন না পেতে পারে তারা। বিজেপি তেলুগু দেশমের সঙ্গে জোটে থেকে তিন আসন পেয়েছিল ২০১৪’তে। এবার চন্দ্রবাবুর সঙ্গে জোট নেই। তেলেঙ্গানাতেও বিজেপি একা লড়ছে। বস্তুত অন্ধ্রে বিজেপি’র আশা ওয়াইএসআর কংগ্রেস বেশি আসন পেলে নাইডুর সঙ্গে কংগ্রেসেরও আসন কমবে। তেলেঙ্গানাতেও টিএসআর’ই বেশি আসন পাক, চাইছে বিজেপি। সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের আসন কমবে, পরবর্তী সময়ে টিআরএস’কে জোটেও পাওয়া যেতে পারে।