দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে মেরুকরণের রাজনীতি আরও তীব্র করছে বিজেপি

নয়াদিল্লি: লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার সম্ভাব্য ফলাফল আন্দাজ করে, রাজ্যগুলি থেকে আসা নির্বাচনী প্রচারের রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রচারে মেরুকরণ আরও তীব্র করতে চলেছে বিজেপি। প্রচারে কেন্দ্রের শাসক দল সচেতনভাবেই বিভাজনমুখী রাস্তা নিয়েছে, জাতীয়তাবাদের পোশাকে সাম্প্রদায়িক উপাদান প্রায় রোজই সামনে আনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী থেকে দলের সভাপতি, মুখ্যমন্ত্রী, সাংসদরা সমবেতভাবে মেরুকরণের পথ নিয়েছেন। তা পরের দফাগুলির আগে ক্রমশ

দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে মেরুকরণের রাজনীতি আরও তীব্র করছে বিজেপি

নয়াদিল্লি: লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার সম্ভাব্য ফলাফল আন্দাজ করে, রাজ্যগুলি থেকে আসা নির্বাচনী প্রচারের রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রচারে মেরুকরণ আরও তীব্র করতে চলেছে বিজেপি। প্রচারে কেন্দ্রের শাসক দল সচেতনভাবেই বিভাজনমুখী রাস্তা নিয়েছে, জাতীয়তাবাদের পোশাকে সাম্প্রদায়িক উপাদান প্রায় রোজই সামনে আনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী থেকে দলের সভাপতি, মুখ্যমন্ত্রী, সাংসদরা সমবেতভাবে মেরুকরণের পথ নিয়েছেন। তা পরের দফাগুলির আগে ক্রমশ তীব্রতর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নির্বাচনে বিজেপি সাম্প্রদায়িক সুরে আগেও প্রচার করেছে, এবারেও তার ব্যতিক্রম হতো না। নতুন মাত্রা এসেছে ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে। এই ঘটনার পরপরই বিজেপি’র প্রচারে তথাকথিত ‘জাতীয়তাবাদের’ উপাদানকে যুক্ত করা হয়। পাক ভূখণ্ডে ভারতীয় বায়ুসেনার হানার পরে এই উপাদান স্বভাবতই সামনে চলে আসে। গত দু’মাসে বিজেপি’র প্রচারে পুলওয়ামা থেকে অন্তত তিনটি উপাদানকে যুক্ত করা হয়েছে। প্রথমত, পাকিস্তান ভারতের নির্বাচনে আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বলার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধীদের ‘পাকিস্তানপন্থী’ বলতেও আটকায়নি প্রধানমন্ত্রীর মুখে। স্বয়ং মোদী বারংবার বলছেন, বিরোধীরা পাকিস্তানকে ‘সাহায্য করছে’। বালাকোট হামলায় প্রমাণ চেয়ে বিরোধীরা পাকিস্তানকে সুবিধা করে দিচ্ছে। তিনি ও তাঁর দলের সভাপতি এখন নিয়ম করেই পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের ওপরে অত্যাচার থেকে মহিলাদের দুর্দশা নিয়ে প্রচার করছেন। পর্যবেক্ষকদের অনেকেরই অভিমত, পাকিস্তানের দিকে অভিযোগের তির ঘুরিয়ে নিজের সরকারের দিকে ধেয়ে আসা প্রশ্নের তির সামলাচ্ছেন মোদী।

দ্বিতীয় উপাদান হিসাবে যুক্ত হয়েছে কাশ্মীর। পুলওয়ামার পরেই কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাপন্থী এবং মূলস্রোতেরও রাজনৈতিক সংগঠনগুলিকে নিষিদ্ধ করার রাস্তা নেয় কেন্দ্র। কাশ্মীরে রাজনৈতিক সমাধানের ন্যূনতম সম্ভাবনাও আর জিইয়ে না রেখে পেশিশক্তির প্রদর্শনী শুরু হয়ে যায়। তা যত না কাশ্মীরে উগ্রপন্থা দমনের লক্ষ্যে, তার থেকে অনেক বেশি বাকি ভারতকে দেখানোর জন্য। পর্যবেক্ষকরা অনেকেই বলেছেন, কাশ্মীর বনাম অবশিষ্ট ভারতের দ্বন্দ্ব নির্মাণ করে বিজেপি প্রচার করছে। এটিও উপাদান হিসাবে সাম্প্রদায়িক চরিত্রের, কেন না বরাবর হিন্দুত্ববাদীরা কাশ্মীরকে ‘মুসলিম প্রশ্ন’ হিসাবে দেখে থাকে। কাশ্মীরে মোদী সরকার গত পাঁচ বছরে এক পদক্ষেপও এগতে পারেনি, কাশ্মীরে উগ্রপন্থা বেড়েছে, নিরাপত্তা জওয়ান ও সাধারণ নাগরিকদের প্রাণহানি বেড়েছে। কিন্তু সেইসব প্রশ্নকে ঠেলে সরিয়ে ‘কাশ্মীরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের’ আওয়াজ তুলেছে বিজেপি। যদিও মুখে বলা হচ্ছে ‘কাশ্মীর রক্ষার লড়াই’। এই উপাদানও যথেষ্ট পরিমাণে ব্যবহার করা হচ্ছে। পুলওয়ামা থেকে পাওয়া তৃতীয় উপাদান হলো সেনাবাহিনী। বিজেপি নির্বাচনী প্রচারে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করছে নির্বাচনী আচরণবিধির তোয়াক্কা না করে। প্রধানমন্ত্রী রোজ বালাকোটে হানা দেওয়া সেনাদের নাম করে ভোট চাইছেন। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ভারতীয় সেনাদের ‘মোদীর সেনা’ বলে চিহ্নিত করেছেন। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বালাকোটে বায়ুসেনার হানাকে ‘মোদীর প্রতিহিংসা’ বলে চিহ্নিত করেছেন। বিজেপি’কে ভোট দেওয়া আর ভারতীয় সেনাবাহিনীকেই ভোট দেওয়া সমার্থক বলে কার্যত প্রচার করছে বিজেপি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *