কলকাতা: কেন কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলতে গেলেন বাংলায় বিজেপির কোনও মুখ্যমন্ত্রীত্বের মুখ নেই? বিধানসভায় বিজেপি সংখ্যা গরিষ্ঠতা প্রমাণ করে তবেই মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করবে, এমন ইঙ্গিত আগামী বিধানসভা নির্বাচনের ৮ মাস আগেই দিয়ে রেখেছেন কৈলাস। কৈলাসের স্পষ্ট বক্তব্য ছিল, বাংলায় দল ক্ষমতায় আসবে। বিধানসভায় দল, কেন্দ্রীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা করে তবেই নেতা ঠিক করবে। এটা ঠিক যে, বিজেপির রাজনৈতিক ‘স্ট্রাটেজি’ বিভিন্ন সময় বদলেছে।
বিভিন্ন সময়, বিধানসভা নির্বাচনের মুখ ঠিক করে যেমন লড়াই করতে নেমেছে বিজেপি, তেমন-ই আবার আবার ভোটের পরেও মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তুলে ধরেছে কোনও এক নতুন মুখকে। যখন যেমন, তখন তেমন। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গের মত এক অতি স্পর্শকাতর তথা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক রণক্ষেত্রে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীত্বের মুখ নিয়ে কেন বাড়তি সতর্ক তার যথাযথ কারণ রয়েছে। নানান সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীত্বের পদ নিয়ে এত চর্চা হচ্ছে, তা খুশি করতে পারেনি কেন্দ্রীয় বিজেপিকে। কে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী হবেন তা নিয়ে চর্চার বহর শুনে স্বয়ং অমিত শাহ যারপরনাই বিরক্ত। অনুমান করা যেতে পারে, কৈলাস বিজয়বর্গীয় কার নির্দেশে সংবাদমাধ্যমে এই বার্তা দিয়েছেন।
এর পর থেকেই বিজেপি নেতারা বলছেন, একুশে তাদের একমাত্ৰ মুখ নরেন্দ্র মোদি। বাংলার জনতা মোদিকে দেখেই ইভিএম-এ পদ্ম ফুল চিহ্নের পাশের বোতামে চাপ দেবে। কিন্তু, স্বাভাবিক প্রশ্ন, মোদি কী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হবেন, নাকি এখানে ভোটে দাঁড়াবেন? যদি উত্তর না হয়, তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে তার জায়গায় কে বসবেন ক্ষমতার চেয়ারে? বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন? এই উত্তর পরিষ্কার ভাবে না দিতে পারলে বাংলায় বিজেপির সুযোগ সীমিত থেকে যাবে। ‘ভোটে জিতব, তারপর দল দেখবে, কাকে মুখ্যমন্ত্রী করা যায়৷’ – এই যুক্তিতে বাংলার জনতা কতটা প্রভাবিত হবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী কে হতে পারেন তা নিয়ে ‘ভাইরাল’ চর্চায় কেন কেন্দ্রীয় পার্টি বিরক্ত তা বুঝে নেওয়া যাক। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হোক তা দলের অভ্যন্তরে অনেকে চাইলেও আম জনতা তাকে কতটা গ্রহণ করবেন তা নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে দিলীপের বিরুদ্ধ বাবুল সুপ্রিয় শিবির এই বিষয়ে যে খুশি হবে না তাও আলোচিত হয়েছে। বাবুল মোদি এবং বাবা রামদেব ঘনিষ্ঠ। তিনি মুখ্যমন্ত্রীত্বের দাবিদার হতে পারেন বলে শোনা গিয়েছে। রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি এবং ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় আবার বঙ্গ রাজনীতিতে ফিরে এসেছেন। তিনিও মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হতে পারেন বলে জোর আলোচনা। অন্যদিকে, অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও পিছিয়ে নেই। বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি এবং রামকৃষ্ণ মিশনের সক সাধুর নাম উঠে আসছে। কিন্তু, এই স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে ‘বটতলার আলোচনা’ চায় না বিজেপি। কৈলাসবাবুর বক্তব্যের কারণ হিসাবে অনেকেই তা বলছেন।