বোমা, পিস্তল, ইট, লাঠি, কাঁদানে গ্যাস! বিজেপির নবান্ন অভিযানে পুলিশের ‘হোলি’!

বোমা, পিস্তল, ইট, লাঠি, কাঁদানে গ্যাস! বিজেপির নবান্ন অভিযানে পুলিশের ‘হোলি’!

7445e8475f5698b91f0b895e5c2ba9a5

তপন মল্লিক চৌধুরী :  রাজ্যে গণতন্ত্র ফেরানো, বেকারদের কর্মসংস্থান ইত্যাদি সাত দফা দাবিতে বিজেপি যে গেরিলা কায়দায় নবান্ন অভিযান করবে তা আগেই জানিয়েছিল যুব মোর্চা। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে নবান্ন অভিযানের মধ্যে দিয়েই শক্তি পরীক্ষায় নামতে চায় বিজেপি। আর তা সফল করতে মরিয়া ছিল পদ্ম বাহিনী। তাই বৃহস্পতিবারের অভিযানকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিল আগে থেকেই। প্রশয়াসনও হাত গুটিয়ে বসে ছিল না, অভিযান মোকাবেলা করার সব ব্যবস্থাই অটুট ছিল।

বিজেপির অভিযোগ, মিছিলের উপর যথেচ্ছ জলকামান চালিয়েছে পুলিশ। সেই জলে বিশেষ ধরনের কেমিক্যাল মেশানো ছিল। এমনটাও অভিযোগ করেছে বিজেপি। অন্য দিকে বিজেপি কর্মীরাও দিকে দিকে পুলিশকে আক্রমণ করেছে বলে অভিযোগ জানিয়েছে প্রশাসন। বিভিন্ন জায়গায় ইটবৃষ্টি হয়েছে। বোমাবাজি হয়েছে হাওড়া ময়দানে। অভিযোগ, বিজেপির একজন কর্মীর কাছ থেকে পিস্তল উদ্ধার হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে, রাজনীতির পারদও তত চড়ছে। শহরে জেলায় বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষ হচ্ছে। একাধিক বিজেপি কর্মী খুন হয়েছে বলে অভিযোগ। গত কয়েক বছরে একশরও বেশি বিজেপি কর্মী রাজ্যে খুন হয়েছে৷ এই হিসেব দিচ্ছে রাজ্য বিজেপি। সম্প্রতি টিটাগড়ে খুন হয়েছেন যুব বিজেপির বাহুবলী নেতা মনীশ শুক্ল। তাঁকে সামনে থেকে ১৪টি গুলি ছুড়ে হত্যা করা হয়েছে। সেই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত সিআইডি দুই জনকে গ্রেফতার করেছে। বিজেপির অভিযোগ তারা তৃণমূল আশ্রিত গুন্ডা৷

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মদতেই একের পর এক খুন হচ্ছে বলে বিজেপির অভিযোগ। অন্য দিকে তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি রাজ্যে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাজ্যের প্রশাসনিক সদর দফতর নবান্নে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি। বৃহস্পতিবার সকালেই যুব বিজেপির নেতা সৌরভ সিকদার জানিয়েছিলেন, চারটি মিছিল করে নবান্নকে ঘিরে ফেলা হবে৷ তবে পুলিশও সকাল থেকেই বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড করে রেখেছিল বিজেপি কর্মীরা, যাতে নবান্নের ধারেকাছে পৌঁছতে না পারে। রাস্তায় মোতায়েন ছিল প্রচুর পুলিশ৷ রাজ্য বিজেপির মিডিয়া সেলের ইনচার্জ সপ্তর্ষি চৌধুরী অভিযোগ করেন, পুলিশ বিভিন্ন জেলা থেকে বিজেপি কর্মীদের কলকাতায় ঢুকতেই দেয়নি। বিভিন্ন জায়গায় তাদের আটকে দেওয়া হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে।

এ দিকে বুধবার বিকেলেই নোটিশ দিয়ে দুই দিন নবান্ন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেখানে বলা হয়, স্যানিটাইজ করা হবে বলে নবান্ন বন্ধ রাখা হচ্ছে। সপ্তাহের মাঝখানে এ ভাবে নবান্ন বন্ধের সিদ্ধান্ত নজিরবিহীন। বিজেপির দাবি, ভয় পেয়েই সরকার নবান্ন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা মুকুল রায়ের বক্তব্য, যুব মোর্চার মিছিলের ভয়েই মমতা নবান্ন বন্ধ করে দিয়েছেন। এমন ঘটনা রাজ্যের ইতিহাসে কখনও ঘটেনি।

একদিকে বিশাল পুলিশ বাহিনী, অন্য দিকে বিজেপি কর্মীদের মিছিল। সকাল থেকেই সারা কলকাতা উত্তেজনার আগুনে পুড়েছে। বেলা ১২ টা নাগাদ সেই আগুনে ঘি ঢালে হাওড়ার সাঁতরাগাছিতে যুব মোর্চার একটি মিছিল। তারা শুরুতেই পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে দেয়। পাল্টা কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। একই সঙ্গে জল কামান ব্যবহার করা হয়। প্রায় একই সময়ে কলকাতার হেস্টিংসে আরেকটি মিছিল পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙে। সেই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির সহ সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ, সেই মিছিল ব্যারিকেড ভাঙার পরেই জলকামান থেকে রং মেশানো জল স্প্রে করতে শুরু করে পুলিশ। রাজু জল কামানে আহত হয়ে রাস্তায় বসে পড়েন। অভিযোগ, জলে মেশানো কেমিক্যাল থেকে তাঁর রক্ত বমি হতে শুরু করে। বাইপাসের ধারে একটি হাসপাতালে তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে৷ পরে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যসচিব স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, রাসায়নিক নয়, হোলির রং ব্যবহার করা হয়েছে জলকামানে৷

 

পুলিশের বক্তব্য, বিজেপি কর্মীরা ব্যারিকেড ভাঙার পরেই তাঁদের উপর জল কামান চালানো হয়েছে। জলে খারাপ কেমিক্যাল ব্যবহারের অভিযোগও পুলিশ অস্বীকার করেছে। পুলিশের অভিযোগ, হেস্টিংস, হাওড়া ব্রিজ এবং হাওড়া ময়দানের মিছিল থেকে বিজেপি কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, বোতল ছুড়তে থাকে। হাওড়া ময়দানে তারা বোমাবাজি করেছে। পুলিশও পাল্টা বেধরক লাঠিচার্জ করে। হেস্টিংসের মিছিলে আহত হয়েছেন সর্বভারতীয় বিজেপির নেতা অরবিন্দ মেনন। প্রতিবাদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির কাছাকাছি অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কৈলাস বিজয়বর্গীয় সহ বিভিন্ন নেতারা।

আজকের ঘটনা বড় কিন্তু আসন্ন নির্বাচনের হাওয়া গরম করতে দু’পক্ষের তরফে ককোনও খামতি নেই । করোনাকালেও তৃণমূল এবং বিজেপি দুই পক্ষই রাস্তায় নেমে রাজনীতি করেছে। হাতরাসের ঘটনার পরে মিছিল করেছেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য দিকে বিজেপিও নবান্ন অভিযানের বিশাল আয়োজন করেছিল। উত্তেজনার পারদ চড়ছে বিভিন্ন জেলাতেও। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও সংঘর্ষ হচ্ছে। প্রাণহানি ঘটছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদে বক্তব্য, শাসক দলের মদতেই প্রতিদিন সংঘর্ষ হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী কোনো পদক্ষেপ করছেন না। রাজ্যে অশান্তি সৃষ্টি করে বিজেপিকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্য দিকে বিজেপিও পাল্টা সংঘর্ষের পথ বেছে নিচ্ছে। বোঁঝাই যাচ্ছে এ রাজ্যে নির্বাচনের আগে আরও বহু ঘটনা ঘটবে। রাজনৈতিক সংঘর্ষ থেকে শুরু করে রক্তাত্ত ঘটনা কোনওটাই বাদ যাবে না।তার জন্য পুরোপুরি দায়ি থাকবে শাসক দল এবং বিরোধি শক্তি। যে কোনও ঘটনার জন্য চলবে পারস্পরিক দোষারোপ। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে বাংলা আরেকবার রক্তাত্ত হতে চলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *