দেবময় ঘোষ: টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, মোবাইল ফোন, শাড়ি, বাসনপত্র, নগদ টাকা। খুঁজলে আরও অনেক কিছু পাওয়া যাবে হয়ত। ভোটের সময় জনতাকে খুশি করতে উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি এদেশে চিরাচরিত। শাসক বা বিরোধী রাজনৈতিক দলের ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছে বারবার। সেক্ষেত্রে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের প্রতিশ্রুতি একটি বিষয় নিশ্চিত করেছে – শুধু কোনও একটি বিশেষ রাজ্য নয়, সমগ্র দেশবাসী এই ভ্যাকসিন বিনামূল্যে পাবে। বিহারে বিজেপি এবং নীতীশ ফের ক্ষমতায় এলে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন শুধু ওই রাজ্যের জন্যই সীমাবদ্ধ থাকবে তা নয় – একথা অর্ধ সত্য। বরং, দেশের অন্যান্য অংশেও বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। এছাড়া, মোদি সরকারের আর অন্য কোনও পথ আছে কি? বিনামূল্যে ভ্যাকসিনের প্রতিশ্রুতি কোনও নির্দিষ্ট রাজ্য বা জনগোষ্ঠীতে আটকে রাখা সম্ভব নয়। সে দিক থেকে, বিনামূল্যে ভ্যাকসিনের প্রতিশ্রুতিকে আমি সাধুবাদ জানাব। অন্তত পক্ষে তা, টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, মোবাইল ফোন, শাড়ি’র থেকে ভাল সময়োপযোগী প্রস্তাব।
পশ্চিমবঙ্গে ভোটে জেতার জন্য বিজেপি কি একই পদ্ধতি নিতে পারে? আমার উত্তর – না। পশ্চিমবঙ্গে ভোটে জেতার ভ্যাকসিন পায়নি বিজেপি। অথবা বলা যেতে পারে, সেই ভ্যাকসিনের সাফল্য সম্পর্কে তারা এখনও নিশ্চিত নয়। বাংলায় সংখ্যালঘু ভোটব্যাংক বহুকাল ধরে নির্দিষ্ট। বামফ্রন্ট এক সময় উপকৃত হয়েছে। এখন যা সম্পূর্ণ তৃণমূলের কব্জায়। আদিবাসী ভোট রাজ্যের কিছু অংশে বেশি হলেও তা ভোটের ফলাফলে তেমন প্রভাব ফেলেনি কখনই। যদিও মতুয়াদের ভোট দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক দলগুলির লক্ষ্য। দেশের অন্যান্য রাজ্যের মত বাংলার ভোট মানচিত্রে, জাত-পাত, শ্রেণী বৈষম্য সেভাবে প্রভাব ফেলেনি। একমাত্র ধর্মীয় সংখ্যালঘু ভোটব্যাংক কিছুটা গুরুত্ব পেয়েছে। বাম জমানার পর প্রায় দশ বছর কেটে গিয়েছে। বাংলায় অবাঙালি বা হিন্দি ভাষাভাষী মানুষের পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। তবে অবাঙালি মানুষের ভোট বাংলায় সরকারের ভাগ্য নির্ধারণ করবে, এমন পরিস্থিতিও আসেনি। যদিও তৃণমূল কংগ্রেস বা বিজেপি কিছুটা জাতি এবং ধর্মভিত্তিক তোষণের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে, যা বাম রাজনীতির থেকে পৃথক।
কিন্তু এত সব কিছুর পরও দ্বর্থ্যহীন ভাবে যা বলা যায় তা হল, বিনামূল্যের ভ্যাকসিনের কথা বলে বাংলায় ভোট পাবে না বিজেপি। বিজেপির শীর্ষ স্থানীয় নেতারাও তা জানেন। বাংলায় ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে অনেকাংশে বিজেপিকে সাফল্য এনে দিয়েছে। সি এ এ, এন আর সি-র কথা বলে , কিছুটা ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি করে ভোট পাওয়া যায় তা দেখেছে বিজেপি। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতি গেরুয়া শিবিরকে সুবিধা করে দিয়েছে। ২১-শে সেই চেষ্টাই থাকবে।