মাড়গ্রামে জোড়া খুন, অপসারিত পুলিশ সুপার! কেন বারবার উত্তপ্ত হচ্ছে বীরভূম?

মাড়গ্রামে জোড়া খুন, অপসারিত পুলিশ সুপার! কেন বারবার উত্তপ্ত হচ্ছে বীরভূম?

নিজস্ব প্রতিনিধি: পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ফের রক্ত ঝরল বীরভূমে। খুন হলেন দুই তৃণমূল কর্মী। তাঁদের বোমা মেরে খুন করার অভিযোগ উঠল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ছয় কংগ্রেস নেতা কর্মীকে। আর তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় দ্রুত সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠিকে। মৃতরা হলেন নিউটন শেখ (৩৭) ও লাল্টু শেখ (৩৮)। তাঁদের দু’জনেরই বাড়ি বীরভূমের মাড়গ্রাম থানার  হাসপাতাল পাড়ায়। শনিবার রাত ন’টা নাগাদ মাড়গ্রাম হাসপাতাল পাড়ায় ঘটনাটি ঘটে। অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা ঝোপের মধ্যে থেকে দুই তৃণমূল কর্মীর মোটরবাইক লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়ে। বোমায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় নিউটনের। এরপর গুরুতর আহত অবস্থায় লাল্টু শেখ নামে অপর তৃণমূল কর্মীকে রামপুরহাট হাসপাতালে  ভর্তি করা হয়। পরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা করা যায়নি।

রবিবার সকালে হাসপাতালে মৃত্যু হয় লাল্টু শেখের। উল্লেখ্য বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বহুদিন ধরেই জেলবন্দি রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কিছুদিন আগেই বীরভূমে গিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন তিনি নিজেই বীরভূমে দলীয় সংগঠন দেখবেন। বিষয়টিকে তিনি রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এরপরই যে জেলায় এত বড় ঘটনা ঘটে যাবে তা ভাবতে পারেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। যথারীতি এই ঘটনায় তাঁদের দলের কারও জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব। কিন্তু প্রশ্ন, অভিযুক্তরা যে দলেরই হোন না কেন, জেলা জুড়ে পুলিশ প্রশাসনের মনিটরিং থাকবে না কেন? কীভাবে জেলা জুড়ে এত বোমা গুলি বন্দুক মজুত হচ্ছে তার উত্তর দেবে কে? আসলে বীরভূমে এই ধরনের ঘটনা প্রথম নয়।

অনুব্রত মণ্ডল জেলে যাওয়ার আগেও বীরভূমের পরিস্থিতি যথেষ্ট উত্তপ্ত ছিল। জেলায় তৃণমূলের তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে একের পর এক অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। তাতে মৃত্যুও হয়েছে বেশ কয়েকজনের। তাই মুখ্যমন্ত্রী যখন নিজেই বীরভূমে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন তিনি এবার থেকে জেলার সাংগঠনিক কাজকর্মের পাশাপাশি সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন, তার কয়েক দিনের মধ্যেই মাড়গ্রামের ঘটনায় হতবাক সবাই। তবে কি বীরভূমের আইনশৃঙ্খলার  পরিস্থিতি প্রশাসনের হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে? পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বীরভূম জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দুষ্কৃতীরা? এই প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উঠছে। আর তাতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জেলার মানুষ। এখনও পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়নি। তার আগে থেকেই জেলার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলো। জোড়া খুনের ঘটনা নিয়ে শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে চাপানউতোর চলবে, কিন্তু তাতে তো আর সমস্যার সমাধান হবে না। এই পরিস্থিতিতে বীরভূমের নতুন পুলিশ সুপার হয়েছেন ভাস্কর মুখোপাধ্যায়। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তাঁকে যে কঠিন চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছে সেটা স্পষ্ট। নতুন পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে প্রশাসনের কাজে এবার কতটা গতি আসে সেটা সময়ই বলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 + 20 =