দেবময় ঘোষ: গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রধান বিমল গুরুং দীর্ঘদিন ছিলেন লোকচক্ষুর আড়ালে। মহাপঞ্চমীতে তার কলকাতায় পদার্পণ কোনও টানটান উত্তেজনাপূর্ণ সিনেমার ক্লাইম্যাক্সের থেকে কম কিছু নয়। তিন বছর অজ্ঞাতবাসে থাকার পর বুধবার কলকাতায় ফিরে পুলিশের চোখের সামনেই তিনি সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়ে দেন ২০২১ সে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চান। এরপরই বোঝা যায়, কলকাতায় নির্ভয় হয়ে গুরুংয়ের পা-রাখার কারণ ঠিক কী।
তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সম্পর্ক ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। জিটিএ চুক্তির সময় মমতাকে দিদি হিসাবে মেনে নিয়েছিলেন গুরুং। আবার, গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে অবরুদ্ধ দার্জিলিং খোলার মরিয়া প্রয়াসে গুরুং বাহিনী এবং রাজ্য পুলিসের গুলির লড়াইয়ের ঘটনাও মনে পড়ে যায়। পুলিশকর্মী অমিতাভ মালিক গুলির লড়াইয়ে প্রাণ দেন। তৃণমূলের নেতারা গুরুংকে দেশদ্রোহী, সন্ত্রাসবাদী বলেছিলেন। শারদীয় সন্ধ্যা চেপে থাকা প্রশ্নটা উঠে আসে – মমতা কী তা ভুলে গিয়েছেন?
গোর্খাভবনে নয় (কারণ সেটি সরকারি বাড়ি। অভিযুক্ত ব্যক্তি কীভাবে ওই বাড়িতে যেতে পারেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে) বরং কলকাতার একটি হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলন করেন গুরুং এবং ঘনিষ্ঠ সঙ্গী রোশন গিরি। গুরঙ্গ ও গিরি দার্জিলিং থেকে পালানোর পর পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ একটি খুনের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার চেয়েছিল। ২০১৭ সাল। পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে ওই বছর দার্জিলিং এবং কালিস্পং এলাকায় বোমা বিস্ফোরণ ও সহিংসতার অভিযোগ এনেছিল পুলিশ। প্রশ্ন, সেই অভিযোগ থেকে কী সরে আসবেন মমতা? অমিতাভ মালিকের দেহ ধরে তার নববিবাহিত স্ত্রীর কান্না কী ভুলে যাবেন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কর্তারা?
গুরুং-গিরির অনুপস্থিতিতে, মোর্চায় গুরুংয়ের প্রাক্তন সহায়ক বিনয় তামাং ক্ষমতার কেন্দ্রে আসেন। তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের পক্ষে বিনয়। তিনি প্রতি মুহূর্তেই বিমলকে চ্যালেঞ্জ করে এসেছেন। তৃণমূল – মোর্চার নতুন বন্ধুত্বে কী শরিক হতে পারবে বিনয়? পাহাড়ি রাজনীতিতে তার রাজনৈতিক অবস্তান কী আদৌ সুরক্ষিত থাকবে? – এই প্রশ্নও ঘোরাফেরা করছে।
তবে গোর্খাল্যান্ডের দাবির প্রশ্নটি প্রধান ইস্যু। গুরুং দাবি করেছেন, গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে তিনি অটুট। তবে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ তাকে হতাস করেছে। এখনও পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একমেবাদ্বিতীয়ম। “একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দেখলাম, যা বলেন সে কথা রাখেন।” গোর্খাল্যান্ডের রাজনৈতিক সমাধান চান গুরুং। তৃণমূল মনে করে দার্জিলিং এর সমস্ত সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পরিস্থিতিতে গুরুং কী স্বার্থে মমতার হয়ে গলা ফাটাবে? গোর্খাল্যান্ড প্রশ্নে মমতা নরম হতে পারবেন না। তবে, কোনও লুকানো স্বর্ত আছে কী? সেই প্রশ্নে ইতিমধ্যেই সরব বিজেপি৷
তবে রাজনীতির ছাত্ররা একটি বিষয় খালি চোখে যা দেখা যায়না তা পড়ে ফেলেছেন। মমতার প্রচ্ছন্ন মদত ছাড়া অভিযুক্ত গুরুং-গিরি শহরে সাংবাদিক বৈঠক করল কী করে? প্রশ্ন, তবে কী গুরুং আত্মসমর্পন করতে পারেন?