মোদী-রাহুলের নির্বাচনী সভা, প্রথম দফার নির্বাচনে তপ্ত বিহার

মোদী-রাহুলের নির্বাচনী সভা, প্রথম দফার নির্বাচনে তপ্ত বিহার

পাটনা: উৎসব এবং করোনার আবহে দিনভর খবরে থাকল পূর্ব ভারতের একটি রাজ্য, বিহার৷ রাজ্যের একাংশে প্রথম পর্বের ভোটগ্রহণ, অন্যদিকে একই রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাহুল গান্ধীর জনসভা ঘিরে দিনভর রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়াল বিহারে৷ অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বেশ খানিকটা উত্তাপ উপভোগ করল বিহারবাসী৷

করোনা, লকডাউন, পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে তৈরি হওয়া পরিস্থিতি এবং বিতর্ক, সবকিছুটা সামাল দিয়ে এই প্রথম ভোট বিহারে৷ এখনও বেশ কিছু জায়গায় করোনা পরিস্থিতির জন্য কনটেনমেন্ট জোন রয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে বিধানসভা নির্বাচন করানো যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং কমিশনের কাছে৷ ২৮ অক্টোবর বিহারে প্রথম দফার নির্বাচন মোটামুটিভাবে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হল৷ তবে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়াল ভালোই৷ যার ভরকেন্দ্র হয়ে উঠল পশ্চিম চম্পারণ এবং পটনা৷

এদিন পটনায় সভা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পশ্চিম চম্পারণে রাহুল গান্ধী৷ দ্বারভাঙ্গা, মুজফ্ফরপুর এবং পটনায় সভা করেন নরেন্দ্র মোদী। তিনটি সভাতেই টার্গেট করেন মহাজোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তথা লালুপুত্র তেজস্বী যাদবকে৷ তাঁকে জঙ্গলরাজের যুবরাজ বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘যদি জঙ্গলরাজের প্রবর্তক ক্ষমতায় আসে, তাহলে বিহারে দু’দিক থেকেই হাহাকার নেমে আসবে এই অতিমারীর সময়ে৷ আপনারা ভাবতে পারছেন, ওঁরা ক্ষমতায় এলে কোভিড ফান্ডের কী অবস্থা হবে?’’ শুধুমাত্র জঙ্গলরাজের প্রবর্তক বলেই ক্ষান্ত থাকেননি প্রধানমন্ত্রী৷ একইসঙ্গে আরজেডিকে কিডন্যাপিংয়ের কপিরাইট দল বলেও তোপ দাগলেন তিনি৷

রাজ্যের উন্নয়নের ওপর জোর দিয়ে ভোটারদের সতর্কবার্তা দিলেন, ‘‘লোভী দৃষ্টিতে যারা কোভিড ফান্ডের দিকে তাকিয়ে, তাঁদের থেকে সাবধান৷’’ মঞ্চে উপস্থিত থাকা বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকেই আগামী পাঁচ বছরের জন্য মুখ্যমন্ত্রী বলে ঘোষণা করে রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করলেন৷ তার জন্য প্রশংসা করলেন নীতীশ কুমারের৷ আরজেডি প্রশাসন বিহারে জঙ্গলরাজ কায়েম করেছিল৷ মহিলাদের স্বাভাবিক জনজীবন নিশ্চিত করতে পারেনি বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী৷ চাকরির জন্য ঘুষ নিত তাঁরা৷ কৃষি ঋণ মকুবের নামে টাকা নয়ছয় করা হত৷ মোদীর দাবি, উন্নয়নের পক্ষেই বরাবর সওয়াল করেছে এবং চেষ্টা করেছে এনডিএ সরকার। রামমন্দিরের প্রসঙ্গও এদিনের মঞ্চ থেকে তুলে ধরেন তিনি। বলেন, ‘‘সীতা মায়ের জন্মস্থানে এসে আমি খুব খুশি হয়েছি। অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। যারা মন্দির নির্মাণের দিন জানতে চেয়ে আমাদের কটাক্ষ করত, তারাই এখন আনন্দে হাততালি দিতে বাধ্য হচ্ছে৷’’

প্রধানমন্ত্রীর জঙ্গলরাজের অভিযোগ দমন করতে রাহুল গান্ধির হাতিয়ার কর্মসংস্থান। পশ্চিম চম্পারণের নির্বাচনী সভা থেকে পকোড়া ভাজার প্রসঙ্গ তুলে পদ্মে কাঁটা ফোডানোর চেষ্টা করলেন কংগ্রেসের যুবরাজ। হাততালিতে ফেটে পড়া জনতাকে উদ্দেশ্য করে সনিয়া-তনয় বলেন, ‘‘আপনারা কি পকোড়া ভেজেছেন? পরেরবার যখন আসবেন, মোদিজি এবং নীতীশজিকে পকোড়া দেবেন৷’’ তাঁর কথায়, ‘‘এখন আর প্রধানমন্ত্রী বলেন না যে, ২কোটি যুবকে চাকরি দিয়েছেন”। রাহুল গান্ধির যুক্তি, “তিনি জানেন, মিথ্যা বলছেন, মানুষও তা জানে। আমি নিশ্চিত তিনি যদি এখানে এসে বলেন, ২ কোটি যুবকে চাকরি দিয়েছি, তাহলে মানুষকে তাঁকে তাড়া করবে৷’’ এদিনের নির্বাচনী সভায় রাহুল গান্ধি বলেন, সারা দেশের ছোটো ব্যবসায়ী, যুব, কৃষক ও শ্রমিক মোদিজীর ওপর ক্ষুদ্ধ এবং বিহারে তা নীতীশ কুমারের ওপর। দ্বারভাঙ্গাতেও সভা করে রাহুল গান্ধি বলেন, “আপনারা নীতীশ কুমারকে ১৫ বছর এবং ৬ বছর নরেন্দ্র মোদিকে দিয়েছেন, তারপরেও বিহার সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য৷’’  এদিন সকালে ট্যুইট করে মহাজোটকে ভোটদানের আহ্বান করেন  রাহুল গান্ধি। তা নিয়ে আদর্শ আচরণ বিধি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপি।

লকডাউন পর্বে বিহারে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। রাজ্যের সীমানায় দাঁড়িয়ে থাকা শ্রমিকদের ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, তারপরেও তাঁদের কাজে বহাল করা বা রাজ্যের অন্যান্য পরিষেবা ঠিকমতো না পাওয়া সহ একাধিক ইস্যুতে প্রতিষ্ঠান বিরোধী ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে একদা দেশের রাজনীতির বদল ঘটানোর সাক্ষী থাকা বিহারে। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধেও লকডাউন, কোভিড মোকাবিলা, পরিযায়ী শ্রমিক, অর্থনীতি কর্মসংস্থানের মতো সাধারণ বিষয়গুলি নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তবে সবকিছুর জনমাসনে যে প্রতিফলন, তা প্রথম পর্বে ইভিএম বন্দি হয়েছে। ফলাফল ১০ নভেম্বর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *