বিহারে সব হিসাবই বদলাতে পারে, ভোটের ফলাফল তেমন ইঙ্গিত দিচ্ছে

বিহারে সব হিসাবই বদলাতে পারে, ভোটের ফলাফল তেমন ইঙ্গিত দিচ্ছে

 তপন মল্লিক চৌধুরী : বুথফেরত সমীক্ষা যে সব সময় মিলে যায় তেমনটা নয়। কিন্তু রায়দানের পর তার ফলের প্রবণতা বুঝতে এই সব সমীক্ষার ওপর নির্ভর করতেই হয়। এবারঅধিকাংশবুথফেরত সমীক্ষা আরজেডি, কংগ্রেস ও বামেদের মহাগঠবন্ধন-এর জয়ের কথা বলেছে। সে সব সমীক্ষা তেজস্বী যাদবকেই বিহারের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখছে বলেও জানিয়েছে।

বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গননার শুরুটা কিন্তু বুথফেরত সমীক্ষা অনুযায়ী চলছিল। মানে প্রবণতা ছিল মহাগঠবন্ধন-এর পক্ষে এবং তেজস্বীর নেতৃত্বে নতুন বিহার জন্মের দিকেই।অন্তত সকালটাতো এনডিএ-র চেয়ে এগিয়ে ছিল মহাজোট। কিন্তু বেলা বাড়তেই সব হিসাব কেমন ওলটপালোট হয়ে গেল। ভোট প্রবণতায় ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে এগিয়ে গেল এনডিএ ফলে পিছতে থাকল মহাজোট।

উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, বিহার বিধানসভা ভোটের গণনা প্রক্রিয়া শেষ হতে মধ্যরাত হয়ে যাবে। কারণ, বেলা পর্যন্ত বিহারে মোট ৪.১০ কোটি ভোটারের ৯২ লক্ষ ভোটের গণনা শেষ হয়েছে। আগে যেখানে২৫-২৬ রাউন্ড গণনা হতো করোনাকালে সেখানে এখন ৩৫ রাউন্ড গণনা হচ্ছে।তবে প্রাথমিক ভোট প্রবণতায় এনডিএএগিয়ে ১২৭টি আসনে আর মহাজোট১০০টিতে। বিহার বিধানসভার২৪৩ আসনেম্যাজিক ফিগার ১২২।ইতিমধ্যেএনডিএর ১২৭টি আসনে এগিয়ে থাকার অর্থ তারা ম্যাজিক ফিগার প্রায় জয় শুধু নয় অতিক্রম করে ফেলেছে। তেমন কোন ঘটনা না ঘটলে এনডিএ-ই যে বিহারে সরকার গড়ছে তা বলাই যায়।

তবে এই এগিয়ে থাকার মধ্যেও বলার বিষয় হল বিজেপির তুলনায় জেডিইউ-র পিছিয়ে পড়া। অর্থাৎ এতদিন বিহারে দাদা ছিল নীতিশ কুমারের জেডিইউ, এবার সেই জায়গা দখল নিটে চলেছে বিজেপি। ভোটপ্রবণতাই স্পষ্ট করে দিচ্ছে এবারজেডিইউ-র চেয়ে বেশি আসন পাবে বিজেপি। অর্থাৎ বিহারে বিজেপিই এখন থেকে  বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি।

সাত বছর আগে এই নীতিশ কুমার ও তার দল জেডিইউ ১৭ বছরের জোট ভেঙে এনডিএ ছেড়ে বেড়িয়ে গিয়েছিল। এর ঠিক দু’বছর পরে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে জেডিইউ আরজেডির হাত ধরে অন্যদিকেবিজেপি এলজেপির সঙ্গে। কিন্তু ভোটের ফলাফলে বিজেপি জোট পিছিয়ে পডড়ায়ক্ষমতায় আসে জেডিইউ-আরজেডি জোট। আবার ২ বছরের মাথায় নীতীশ কুমার আরজেডির হাত ছেড়ে ফিরে আসে এনডিএতে। রাজনীতিতে সুবিধা বুঝে হাত ধরা বা ছাড়ার খেলায় পটু নীতিশ কুমার। এবার শেষতক যদি জেডিইউকে অনেকটাই পিছনে রেখে বিজেপি সামনে এগিয়ে আসে এবং বিহারে নিজেদের সবথেকে শক্তিশালী দল হিসেবে তুলে ধরতে পারে তাহলে এনডিএ-তে জেডিইউ-র কতটুকু গুরুত্ব থাকবে? বিহার ভোটের ফলের প্রবনতা যেদিকে এগচ্ছে, তাতে এতা স্পষ্ট হচ্ছে যে হিসেব পালটাচ্ছে। বিজেপিই শেষপর্যন্ত বিহারে বৃহত্তম দল হয়ে উঠছে। এই নতুন পরিস্থিতিতে বিজেপি কি নীতীশ কুমারকেই মুখ্যমন্ত্রী করবে, নাকি বিজেপি তাদের দেওয়া কথা ফিরিয়ে নিয়ে ভাববে?

বিহার বিধানসভা ভোটের নির্ঘন্ট প্রকাশিত হওয়ার অনেক আগে থাকেই বিজেপি বারবার প্রকাশ্যে জানিয়েছিল, নীতীশ কুমারের নেতৃত্বেই তাদের বিহার বিধানসভা নির্বাচন যুদ্ধ। রামবিলাস তনয় চিরাগ পাসওয়ানের এলজেপির সঙ্গে নীতীশের হ্যাঁচকা-হেঁচকির পরেও বিজেপি জেডিইউ বা নীতিশ কুমারের পক্ষেই দাঁড়িয়েছে। কারণ ভোট বড় বালাই, আর তখনও নীতীশ ছিলেন বড় শরিক। সে সময় শরকের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বিজেপিকে মানায় না। কিন্তু বিহার ভোটের যে পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে তাতে বিজেপির তো আর জেডিইউ বা নীতিশ কুমারের অনুগত থাকার দরকার নেই। বিহারে তো বিজেপি এখন অধমর্ন নয়। হিসেব যে পালটাচ্ছে তা অত্যন্ত স্পষ্ট।

অন্যদিকে নীতীশও আগেই জানিয়েছেন, এটাই তাঁর শেষ ভোট। সেই সঙ্গে তিনি এও বলেছিলেন, সব ভাল যার শেষ ভাল। কিন্তু শেষটা ভাল কিনা সেটা বোঝা যাবে আর কয়েকদিন পর। শেষ ভাল কিংবা মন্দ বিচারের সময় এখনও এসে পৌঁছয় নি। তবে এটুকু বোঝা যাচ্ছে যে, নীতীশ কুমারের শেষটা তেমন ভাল হবে না। কারণ,বিজেপি যদি বিহারে এনডিএর বড় শরিক হয়, তবে নীতিশের মুখ্যমন্ত্রীত্বকে তাঁরা মানতে যাবে কেন? তবে ইতিমধ্যে কৈলাস বিজয়বর্গীর একটি কথা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠোছে। তিনি বলেছেন, নরেন্দ্র মোদির ভাবমূর্তিতে তাদের বিহার জয়। বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নেও তিনি জানান, বিজেপি তাদের প্রতিশ্রুতি রাখবে, নীতীশ কুমারই মুখ্যমন্ত্রী হবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − 9 =