তপন মল্লিক চৌধুরী : বিহারে ২৪৩ আসন বিশিষ্ট বিধানসভায় মোট তিন দফার ভোটেপ্রথম দফার ভোট কাল বাদ পরশু। জন সমীক্ষা বলছেবিহারে ফের মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন নীতিশ কুমার। সমীক্ষা অনুযায়ী বিজেপি-জেডিইউ জোট এই নির্বাচনে প্রায় দুই তৃতীয়াংশ আসন দখল করতে পারে। সমীক্ষার আভাষ অনুযায়ী এনডিএ পেতে পারে ১৬০ আসন। অন্যদিকে বিরোধী জোট পেতে পারে ৭৬। এনডিএ-র মধ্যে বিজেপি পেতে পারে ৮৫, জেডিইউ ৭০ ও অন্যান্য ছোটো শরিকরাপেতে পারে ৫ টি আসন। সেই সঙ্গে নিশ্চিত করেই বলা যাচ্ছে যে বিহারে এনডিএ-র নেতা হচ্ছেন নীতিশ কুমার। আর তিনিই হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিহারে নীতিশ কুমারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। কিন্তু তা স্বত্বেও নীতিশ কুমার ধৈর্য হারাচ্ছেন, নিজেকে সংযত রাখতে পারছেন না, মেজাজ হারিয়ে তিনি মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন। বিহারের বিধানসভা নির্বাচন উপলক্ষে পরপর কয়েকটি প্রচার সভায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল।
লক্ষ্যনীয় বিষয় হল ভোট প্রচারের সভায় নীতিশ কুমার তার বক্তৃতায় লালুপ্রসাদ যাদব ও তাঁর পরিবারকে আক্রমণ করছেন আর সভায় বিক্ষোভের মুখে পড়ে মেজাজ হারাচ্ছেন। দু’দিন আগে মুজফ্ফরপুরে বিধানসভা নির্বাচনউপলক্ষ্যে প্রচার সভায় নীতীশের বিরুদ্ধে যুব সম্প্রদায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। তারা বিহারে কর্ম সংস্থানের দাবি তুলে‘নীতীশ ওয়াপস যাও’স্লোগান দিতে থাকে। এরপরই নীতিশ মেজাজ হারান। একই ঘটনা ঘটে বেগুসরাইয়ের একটি নির্বাচনী প্রচার সভায়।সেখানে যখন নীতীশ কুমার বক্তব্য রাখছিলেন, কিছু মানুষসেই সময় লালুপ্রসাদের সমর্থনে স্লোগান দিতে শুরু করেন। এই ঘটনায় রীতিমতো রেগে যান নীতীশ এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং লালু ও তাঁর পরিবারকে আক্রমণ করেন।
নির্বাচনী প্রচার সভায় নীতিশ কুমারকে রেগে ধৈর্য হারাতে দেখা গিয়েছে ছাপড়ার পারসাতেও। সেখানেও নির্বাচনী সভায় দলীয় প্রার্থীর হয়ে নীতিশ যখন বক্তব্য রাখছিলেন তখন বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ লালুপ্রসাদের সমর্থনে স্লোগান দিলে ভারের মুখ্যমন্ত্রী লাউ সমর্থকদের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন। ঔরঙ্গাবাদের রফিগঞ্জে একই ঘটনায় নীতিশকে জনগনের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল। তাঁকে সভা থেকে সরিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ ও দলীয় সদস্যরা।
পরপর নীতিশ কুমারের একই ধরণের রাগ-ক্ষোভ এবং ধৈর্য হারানোর ঘটনা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট হচ্ছে যে একজন এই নির্বাচনে জনসমক্ষে না থাকলেও তাঁর প্রভাব কিন্তু এসে পড়ছে নির্বাচনে। তিনি নেপথ্যে থাকলেও নির্বাচনের কার্যকলাপের ওপর তাঁর ভূলিকা কোনও না কোনওভাবে ছাপ ফেলছে। এক্ষেত্রে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচার সভায় লালুর লোকেরা যখনই লালুর নামে স্লোগান দিচ্ছে তখনই ধৈর্য হারিয়ে ফেলছেন নীতিশ কুমার। অথচ তিনি রাজনৈতিক মহলে ধৈর্যশীল, শান্ত মানুষ বলেই পরিচিত। তেমন একটি মানুষ সংযম হারাচ্ছেন কেন? কেন দল ও নির্বাচন প্রার্থীর হয়ে প্রচার করতে এসে তিনি লালু ও তার তাঁর পরিবারকে আক্রমণ করছেন, কেন জনগনের ক্ষোভের মুখে পড়ছেন?
বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ এখন জেলে। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির মামলায় তিনি অভিযুক্ত।তবে কি লালুর অনুপস্থিতিতেও লালুর দল আরজেডিএই ভোটে নীতীশকে উদবেগে রেখেছে? কারণ যখনই সভায় আরজেডিসমর্থকরা লালুর সমর্থনে স্লোগান তুলছে, তখনই নীতিশ ধৈর্য হারাচ্ছেন। লালু ও লালুর পরিবারকে আক্রমণ করছেন। বোঝা যাচ্ছে লালু আড়ালে থাকলেও লালু তনয় তেজস্বী নীতীশকে যথেষ্ট চাপে রেখেছে। তাই সমীক্ষার ফলাফল অনুসারে বিহারে আবার মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসা নিশ্চিত হয়ে গেলেও নীতীশ কুমার ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চিন্তি বোধ করতে পারছেন না।
প্রসঙ্গত, ২০১৫-র বিহারনির্বাচনে লড়াই হয়েছিল বিজেপির সঙ্গে বিরোধী মহোজোটের।সেই মহাজোটে নীতীশ কুমার ও লালুপ্রসাদ যাদবছিলেন পাশাপাশি।ওই নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল ৫৩টি আসন। মহাজোটের মধ্যে বেশি আসন পেয়েছিল আরজেডি ৮০টি, জেডিইউ ৭১টি এবং কংগ্রেস ২৭টি।আরজেডি বেশি আসন পেয়েও লালু মুখ্যমন্ত্রী পদ ছেড়ে দেন জেডিইউ-প্রধান নীতিশ কুমারকে। লালু তনয় তেজস্বী হন উপ-মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু দু’বছরের মধ্যেই নীতীশলালুর হাত ছেড়ে পুরনো জোটসঙ্গী বিজেপির হাত ধরে বিহারে সরকার গড়েন। উপ মুখ্যমন্ত্রী হন বিজেপির সুশীল মোদী। সেই ঘটনাকে তেজস্বী ভোটের প্রচারে এনেছেন। নীতিশের প্রচার সভাতেও লালুর সমর্থকরা ঢুকে পড়ে সেই ঘটনাকে সামনে আনছেন। তাতেই বোধহয় চাপে পড়েছেন নীতীশ। ২০১৫-র বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে লালুর দলের সঙ্গেই হাত মিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন নীতীশ।