তপন মল্লিক চৌধুরী : করোনা পরিস্থিতিতে বিহারই প্রথম রাজ্য যেখানে বুধবার প্রথম ভোট হল। করোনা পরিস্থিতির কারণেই একটি বুথে ভোটারের সংখ্যা ১ হাজার ৬০০ থেকে কমিয়ে ১ হাজার করা হয়। বুধবার বিহারে মোট ভোটার ছিল প্রায় ২.১৪ কোটি। তাঁদের মধ্যে ১.০১ কোটি মহিলা। এদিন মোট প্রার্থীর মধ্যে ৯৫২ জন পুরুষ ও ১১৪ মহিলা প্রার্থী। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম দফার প্রথম ৪ ঘণ্টায় ১৮.৩ শতাংশভোট পড়ে। শুরুটা ঢিমেতালে হলেও বেলা গড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটগ্রহণের হারও বাড়তে থাকে। ভোট পড়ার সর্বাধিক শতাংশ হার ছিল লক্ষ্মীসরাই, নওদা, আর কম ভোট পড়ে পটনা ও ভাগলপুরে।
বিহার বিধানসভা ভোটের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একাধিক গুরত্বপূর্ণ বিষয়। বলা যায়, এই গণভোট করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের পদক্ষেপের ওপর মানুষের রায়দান। এই ভোট জানিয়ে দেবে ঘরে ফেরা প্রায় আড়াই লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের ভোট কোন দিকে যায়। এছাড়া ভূমিপুত্র সুশান্ত সিং রাজপুত মৃত্যু রহস্য নিয়ে বিহারের মানুষের ভাবনা কি, তা জানা যাবে। সর্বপরি বিধানসভা নির্বাচন থেকেই বোঝা যাবে কৃষি আইন ও হাথরস কাণ্ডবিহারের দলিত জনমনে কতটাপ্রভাব ফেলেছে।
এবার বিহার বিধানসভা ভোটে অনুপস্থিত লালুপ্রসাদ যাদব। এই প্রথম লালু প্রসাদকে ছাড়াই বিধানসভা ভোট লড়ছে আরজেডি। এর আগে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটেও লালুকে ছাড়া লড়েছিল আরজেডি এবং সেবার লোকসভা নির্বাচনে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল আরজেডিকে।লালু প্রসাদ১৯৯৭ সালে রাষ্ট্রীয় জনতা দল তৈরি করেছিলেন। দু’দশকেরও বেশি সময় আরজেডি লোকসভায় প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। কেবলমাত্র গতবার পারেনি।
আরজেডিই প্রধান লালুপ্রসাদ পশু খাদ্য কেলেঙ্কারিতে দোষী প্রমাণিত হওয়ার পর ২০১৭ সাল থেকেরাঁচির সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। রক্তচাপ, সুগার এবং কিডনির সমস্যায় কাহিলতাঁর শরীর। লালুর দলবিহার ও ঝাড়খণ্ড-দুই রাজ্যেই মহাজোটগড়ে নির্বাচন লড়েছিল কিন্তু এনডিএ জোটের কাছে তারা ধরাশায়ী হয়েছিল। তার আগে ২০১৪ সালের মোদি প্রবাহেওআরজেডিবিহারে পেয়েছিল মাত্র ৪টি আসন। তবে জেলে থেকেও নীতীশ কুমারের সঙ্গে জোট বেঁধে বিজেপিকে রুখে দিয়েছিলেন এই লালু। আরজেডি সেবার বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়েছিল।
যদিও পরে জোট ভেঙে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে এনডিএ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হন নীতীশ-ই। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনে লালুকে ছাড়াপুত্র তেজস্বী ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ি দেবী কোনও ক্যারিশমাই দেখাতে পারেননি। এবার তেজস্বী অনেক অভিজ্ঞ, আগের থেকে তাঁর রাজনৈতিক বুদ্ধিও অনেক পরিপক্ক, এবার তিনি কি করেন সেটাই দেখার।
ইতিমধ্যে গত ৯ অক্টোবর চাইবাসা ট্রেজারি মামলায় লালুর জামিন মঞ্জুর করেছে ঝাড়খণ্ড হাইকোর্ট। যদিও পশুখাদ্য মামলায় সাজাপ্রাপ্ত লালুকে জেলেই থাকতে হচ্ছে। আগামী ৯ নভেম্বর অর্থাৎ বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার একদিন আগে তার শেষ মামলাটির শুনানি রয়েছে।আরজেডি নেতা লালু পুত্র তেজস্বী যাদব দাবি করেন,তাঁর নেতৃত্বে এবার বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধী জোটইজয়ী হচ্ছে। তিনি জানান, তাঁর বাবা লালুপ্রসাদ যাদব বাইরে আসছেন ৯ নভেম্বর, পরদিন নীতিশ কুমার বিদায় হচ্ছেন। যদিও সমীক্ষার ফল অনুযায়ী নীতিশ কুমার এবারও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন। কিন্তু বিহারের হিসুয়ায় একটি জনসভায় তেজস্বী যাদবএ কথা জানান। ওই সভায় তাঁর সঙ্গে ছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।
বিহার বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করার জন্য যেমন দল ও প্রার্থীদের কাছে রয়েছে বিচিত্র ধরণের প্রতীক, অন্যদিকে বিহার ভোটের ইস্যুতেও নেই কোনও ঘাটতি। বেকারত্ব বিহারের চিরিকালীন সমস্যা। তার সঙ্গে জূড়ে আছেশিল্পের অভাব, দেশে সবথেকে বেশি পরিযায়ী শ্রমিকরা অন্য রাজ্যে যান বিহার থেকে। এ বছর নতুন ইস্যু করোনা,বন্যাএবং সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু।
লকডাউন এবং বেকারত্বপূর্ণ বিহারে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সবাই। এনডিএ জানিয়েছে ভোটে জিতলে বিহারবাসী পাবেন ১৯ লক্ষ ভোট। অর্থাৎ চাকরি ও প্রতিশ্রুতির ছড়াছড়ি। তেজস্বী কম যান নি, তিনিও বিহারের মাটিতে দাঁড়িয়ে কয়েক লক্ষ চাকরির কথা বলেছেন। সব মিলিয়ে চাকরি বা প্রতিশ্রুতির দৌড়ে ছুটেছেন সবাই। কিন্তু সেই দৌড়ে সবাই তো আর আগে পৌঁছবেন না। এখন দেখার নীতিশ না তেজস্বী কে আগে ব্যাটন ছুঁতে পারেন।