বিহারে এগিয়ে মহাগটবন্ধন, ত্রিশঙ্কু বিধানসভার ইঙ্গিত বুথ ফেরত সমীক্ষায়

বিহারে এগিয়ে মহাগটবন্ধন, ত্রিশঙ্কু বিধানসভার ইঙ্গিত বুথ ফেরত সমীক্ষায়

 

বীরেন ভট্টাচার্য: করোনা ভাইরাস এবং লকডাউন পরবর্তী প্রথম বিধানসভা নির্বাচন বিহারে, সেখানে চাপে পড়তে চলেছে নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট, বিহারে এগিয়ে রয়েছে লালুপুত্র তথা আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বাধীন মহাগটবন্ধন, এমনই ইঙ্গিত মিলেছে বুথ ফেরৎ সমীক্ষাগুলিতে। তবে এই সমীক্ষার ফলাফল সবসময়েই যে সত্যি হয় তা নয়, তবে সেখানে ভোটারদের রায়ের কিছুটা আভাস পাওয়া যায়।

গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বড় বুথ ফেরৎ সমীক্ষাতেই এগিয়ে রয়েছে তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বাধীন মহাগটবন্ধন। টাইমস নাও-সি ভোটারের করা বুথ ফেরৎ সমীক্ষায় মহাগটবন্ধন পেতে চলেছে ১২০টি আসন, এনডিএ পেতে পারে ১১৬টি আসন। রিপাবলিক জন কি বাতে’র বুথ ফেরৎ সমীক্ষায় বলা হয়েছে, মহাগটবন্ধন পেতে পারে ১৩৮টি আসন, অন্যদিকে এনডিএ পেতে পারে ৯১ থেকে ১১৭টি আসন। এবিপি-সি ভোটারের ফলে মহাগটবন্ধন পেতে পারে ১০৮-১৩১টি আসন, এনডিএ’র ঝুলিতে যেতে চলেছে ১০৪-১২৮টি আসন, প্রয়াত রাম বিলাস পাশোয়ানের দল লোকজনশক্তি পার্টি পেতে পারে ১ থেকে ৩টি আসন, ৪ থেকে ৮টি আসনে জিততে পারে অন্যান্য দল বা জোটগুলি। এবিপি নিউজ-সি ভোটারের সমীক্ষা অনুযায়ী, ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় তেজস্বী যাদবের দল আরজেডি পেতে পারে ৮৫টি আসন, বিজেপির ঝুলিতে যেতে পারে ৭০টি, ৪২টি আসনে জয়লাভ করতে পারে শাসকদল দল জেডিইউ, কংগ্রেসের ঝুলিতে যেতে চলেছে ২৫টি আসন, চিরাগ পাসোয়ানের দল লোকজনশক্তি পার্টি ২টি এবং অন্যান্যরা ১৯টি আসনে জয়লাভ করতে পারে। টিভি ৯ ভারতবর্ষের করা বুথ ফেরত সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, ৯২টি আসনে জিততে পারে আরজেডি, পদ্মফুল ফুটতে পারে ৭২টি আসনে, ৩৮টি আসনে জিততে পারে নীতীশ কুমারের দল জেডিইউ, ১৭টি আসনে জয় আসতে পারে কংগ্রেসের, লোকজনশক্তি পার্টি ২টি এবং অন্যান্যরা ২২টি আসনে জয়লক্ষীর মালা পেতে পারে।

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাকে পছন্দ বিহারবাসীর, সেক্ষেত্রে ইন্ডিয়া টুডে-মাই এক্সিস এর বুথ ফেরত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, আরজেডি নেতা তথা লালু পুত্র তেজস্বী যাদবকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে চান রাজ্যের ৪৪ শতাংশ, নীতীশ কুমারকেই পছন্দ ৩৫ শতাংশ মানুষের, বিহারবাসীর ৭ শতাংশ চান চিরাগ পাসোয়ান হোন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী৷ টুডের চাণক্য’র সমীক্ষা হয়েছিল সরকারের কাজ হিসেবে মানুষের রায় নিয়ে। সেখানে নীতীশ কুমারের সরকারের পরিষেবাকে ‘খারাপ’ বা ‘দুর্বল’ বলে রায় দিয়েছেন ৩৭ শতাংশ মানুষ। ২৯ শতাংশের রায়, রাজ্যবাসীকে ‘মোটামুটি’ পরিষেবা দিয়েছেন ১৫ বছরের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। ২১ শতাংশের রায়, ‘ভাল’ কাজ করেছেন নীতীশ কুমার। সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গিয়েছে বিহারে পরিবর্তন চান সেরাজ্যের ৬৩ শতাংশ মানুষ। রাজ্যের ৩৫ শতাংশ মানুষ বেকারত্ত্বকে নির্বাচনের অন্যতম ইস্যু বলে তুলে ধরেছেন। ২৮ শতাংশ মানুষ উন্নয়ন এবং ১৯ শতাংশ বিহারবাসী দুর্নীতিকে এবারের বিধানসভা নির্বাচনের অন্যতম ইস্যু বলে তুলে ধরেছেন।

এবারের বিধানসভা নির্বাচন নানান কারণে অন্যতম। করোনা ভাইরাস, লকডাউন গোটা বিশ্বের পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের কর্মহারা, বাড়ি ফিরতে না পারার কষ্ট এবং জাতীয় সড়ক ধরে হেঁটে বাড়ি ফেরার চেষ্টা গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এই বিষয়টিই রাজ্য সরকারগুলিকে রাজনৈতিক এবং সরকারিভাবে অনেক চাপে ফেলে দিয়েছে। বিহারের সীমানায় দাঁড়িয়ে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের সে রাজ্যে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে তারই প্রতিফলন ঘটেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। বেশিরভাগ বুথ ফেরৎ সমীক্ষায় আরজেডিকে বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে আসা এবং তেজস্বী যাদবকে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী ও বিহারের ভবিষ্যত নেতা হিসেবে উঠে আসার ইঙ্গিত মিলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × five =