Aajbikel

নাড্ডার কনভয়ে হামলা: ভোটের আগেই সরগরম বঙ্গ রাজনীতি

 | 
নাড্ডার কনভয়ে হামলা: ভোটের আগেই সরগরম বঙ্গ রাজনীতি

বীরেন ভট্টাচার্য, নয়াদিল্লি: ডিসেম্বরের ঠাণ্ডা হার মানল বঙ্গ রাজনীতির উত্তাপে, সৌজন্যে গতকাল বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার কনভয়ে হামলা। রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন করে একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দাগল রাজ্যের দুই যুযুধান শিবির, তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি। আজ সকালেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে রিপোর্ট পাঠান রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। সেই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, রাজ্যের তরফে জেপি নাড্ডার জন্য কোনও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি। এমনকী, বলুটে প্রুফ গাড়ি ছাড়া অন্য কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি মুকুল রায় বলেন, "বাংলায় আইনের কোনও শাসন নেই। নাড্ডাজির জন্য কোনও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি, কোথাও কোনও জায়গায় পুলিশ দাঁড়িয়েছিল বলে আমার চোখে পড়েনি।"একইসুরে সুর মিলিয়ে রাজ্য বিজেপির আরেক নেতাও রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তোপ দাগেন। একইসঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, "বিজেপিকে সমর্থন করতে হবে না, বা বিজেপির হয়ে কাজ করতে হবে না, তবে তৃণমূল কংগ্রেসের দালালি বন্ধ করুন।"

প্রতিদিনের মতো এদিনও তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করেন ঘাসফুল শিবিরের নেতারা। এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন মমতা শিবিরের দুই সাংবাদিক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সৌগত রায়। সাংবাদিক সম্মেলনে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "জেপি নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনা নিয়ে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারমধ্যে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে বিজেপি নেতা রাকেশ সিং এর বিরুদ্ধে, বাকি দুটি মামলা করা হয়েছে অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে।" গতকালই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের ১০ বছরের কাজের রিপোর্ট কার্ড পেশ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে এবং প্রতিটি ব্লক থেকে শুরু করে ঘরে ঘরে সেই রিপোর্টকার্ড পৌঁছে দেওয়ার কর্মসূচী পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে রাজ্যের শাসকদল। এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ করা হয়, সেইদিক থেকে নজর ঘোরাতেই এই হামলার ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। জেপি নাড্ডা নিউটাউন থেকে ডায়মন্ডহারবার যাওয়ার পথে শিরাকোলে হামলার ঘটনা ঘটে। সেপ্রসঙ্গে তৃণমূলের দাবি, সেখানে প্ররোচনা ছাড়া আর কিছুই ঘটেনি। জেড প্লাস ক্যাগাটারি ছাড়াও অতিরিক্ত নিরাপত্তা মোতায়েন ছিল। মুখ্যসচিব ও ডিজিকে তলব করা নিয়ে সাংসদ সৌগত রায় বলেন, "এভাবে মুখ্যসচিব ও ডিজিকে তলব করতে পারে না কেন্দ্রীয় সরকার। কেন মুখ্যসচিব ও ডিজিকে তলব করা হয়েছে?"যদিও বিজেপি নেতা মুকুল রায় বলেন, "রাজ্যপাল কোনও রিপোর্ট পাঠালে সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক রাজ্যের মুখ্যসচিব ও ডিজিকে তলব করবেন, এটাই প্রটোকল।"

জেপি নাড্ডার ওপর হামলা এবং রাজ্যপালের মন্তব্য নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, "এটা পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভেঙে পড়ার পরিস্থিতি ঘোষণা। আমরা এর নিন্দা করি। তবে উত্তরপ্রদেশ সহ ভারতের অন্যান্য জায়গাতেও এই ঘটনা ঘটছে।"তবে কি রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শআসন জারি হতে চলেছে? সে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, "আমি মনে করি, পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা নিয়ে ভারত সরকারের এক্তিয়ারের মধ্যে।" প্রদেশ কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, "রাজ্যের সঙ্গে রাজভবনের ক্রমাগত যে সংঘাত তা রাজ্যের গণতন্ত্রের পক্ষে ভাল নয়। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। অতীতে অনেক ঘটনাই ঘটেছে, অনেক ভিআইপি হামলার শিকার হয়েছেন, যদিও এভাবে কখনও দেখা যায়নি। বাম কংগ্রেসের জোটের তরফে নির্বাচন কমিশনের আবেদন, যাতে শান্তিপূর্ণ ও অবাধ ভোটগ্রহণ হয়। রাজ্যের মানুষ শান্তি চায়"। কংগ্রেসনেত্রী সুস্মিতা দেব বলেন, "রাজ্যপাল একটি সাংবিধানিক পদ। আর ওনার কোনও পক্ষপাতিত্ত্ব করা ঠিক নয়। আগুন জ্বালিয়ে রাজনীতি করা কাদের ইতিহাসে আছে, সেটা ভারতবর্ষের মানুষ খুব ভালভাবেই জানে।, সেটা হল বিজেপি। আমি মনে করি এটার তদন্ত হওয়া উচিৎ., কারণ আমার সন্দেহ যে, এই হামলা বিজেপই করেছে"। সিপআইএম নেতা তথা পলিটব্যুরো সদস্য নীলোৎপল বসুও রাজ্যপালের সাংবাদজিক সম্মেলনের করে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিরোধিতা করে বলেন, "রাজ্যপাল সাংবিধানিক পদে থেকে যেভাবে পদমর্যাদা লঙ্ঘন করছেন, অতীতেও তৃণমূল রাজভবনের এইসব কথা অনুযায়ী চলত।" 

গতকাল মুখ্যসচিব ও ডিজির থেকে রিপোর্ট নেওয়ার পর আজ দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। সেখানে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। তাঁর কথায়, "মুখ্যমন্ত্রীকে সংবিধান মেনে চলতে হবে। তিনি সেই পথ থেকে সরে আসতে পারেন না। দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সাংবিধানিকভাবে খারাপ।" গতকাল বিজেপি সভাপতির ওপর হামলার ঘটনা গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোর ওপর আঘাত বলেও মন্তব্য করেন রাজ্যপাল।

Around The Web

Trending News

You May like