রক্তশূন্য বঙ্গ-বামের ভবিষ্যৎ কোন পথে?

রক্তশূন্য বঙ্গ-বামের ভবিষ্যৎ কোন পথে?

 
বিবস্বান বসু:  বঙ্গযুদ্ধের সর্বশেষ স্কোরলাইন দেখাচ্ছে, ২১৩ আসন নিয়ে নীলবাড়ি নবান্নের ১৪ তলায় মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ৭৭ আসন নিয়ে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে বিজেপি৷ কিন্তু কী হবে আসনের অঙ্কে শূন্য হয়ে যাওয়া বাম-কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ? ১৯৪৬ পরবর্তী সময়ে এই প্রথম বঙ্গ বিধানসভায় থাকবে না বাম ও কংগ্রেসের কোনও বিধায়ক৷ বাংলার রাজনীতির মানচিত্রে তাদের, বিশেষত লাল ব্রিগেডের, আর অস্তিত্ব থাকবে তো, সেই প্রশ্নটাই এখন সবচেয়ে জোরালো ভাবে তুলে দিয়েছে একুশের মহারণের ফাইনাল ব্যালান্স শিট৷

৩৪ বছর ক্ষমতা ধরে রাখার পরও ২০১১ সালে গদি হারানোর পর থেকেই রক্তক্ষরণ হতে শুরু করে বামেদের৷ পায়ের তলার মাটি সরতে সরতে এখন একেবারেই রক্তশূন্য৷ ঘোর সমালোচনা সত্ত্বেও ২০১৬ সালে অসবর্ণ বিবাহ বামেদের বেশ কিছু আসন পাইয়ে দিলেও, প্রধান বিরোধী দলের তকমা গিয়েছিল কংগ্রেসের দখলে৷ আর এবার সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে আটকাতে আর এক কট্টরপন্থী আব্বাস সিদ্দিকির নেতৃত্বাধীন আইএসএফের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে জাত-কুল দুইই হারাল বামেরা৷

নিজেদের আগমার্কা ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করা বামেরা সাম্প্রদায়িক শক্তিরই হাত ধরছে, এহেন কটাক্ষকে ধর্তব্যের মধ্যে না-এনে সুজন-সেলিমরা ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হলেও, হাতে থেকে যাওয়া পেন্সিলই প্রমাণ করছে যে, যতই বিজেমূলকে উৎখাতের ডাক দিয়ে বাজার গরম করা হোক না কেন, এই অস্তিত্ব বাঁচানোর আদর্শহীন জোটকে সার্বিক বিচারে আমজনতা তো গ্রহণ করেইনি, এমনকী সংখ্যালঘু ভোটও বিজেপিকে ঠেকাতে আশ্রয় হিসেবে বেছে নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই। যার নিট ফল, মাত্র ৫ শতাংশ ভোট আর আম-ছালা দুইই হারিয়ে লোকসভা-রাজ্যসভার পর বিধানসভাতেও বঙ্গ বামের বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের ব্রাত্য হয়ে যাওয়া।

কেরলে যখন ইতিহাস গড়ে প্রত্যাবর্তন ঘটাচ্ছেন পিনারাই বিজয়নরা, তখন কি বাংলার রাজনীতিতে চিরতরে সাইনবোর্ড হয়ে যাবেন বিমান-সূর্যকান্তরা? বাম আক্ষরিক অর্থেই বিলুপ্ত প্রজাতি হয়ে যাবে কি না, তা নিশ্চিত ভাবেই এখনই বলার সময় আসেনি। ভোট পাটিগণিতে সর্বহারা হলেও, একথা অনস্বীকার্য যে, করোনা পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও মানুষের মনে দাগ কেটেছে বামেদের উদ্যোগ। তা সে শ্রমজীবী ক্যান্টিনই হোক বা কোভিড আক্রান্তের পাশে দাঁড়ানো। দ্বিমেরুর ভোটে সেই প্রয়াস ফল দেয়নি ঠিকই, তবে শতরূপ-মীনাক্ষি-দীপ্সিতাদের ময়দানে নামানো বা তাঁদের নিয়ে সামান্য হলেও সাড়া পড়ার বিষয়টা উড়িয়ে দেওয়ার নয়।

তবে তরুণ প্রজন্মকে ঘিরে সেই আলোড়ন মুষ্টিমেয় কর্মী-সমর্থক আর সোশ্যাল মিডিয়ার বিপ্লবের বাইরে রাস্তার রাজনীতিতে ছড়িয়ে দিতে না-পারলে শূন্য থেকে ঘুরে দাঁড়ানো দুরাশাই। একের পর এক প্লেট সাজানো ইস্যু সত্ত্বেও পাঁচ বছর কোনও তোলপাড় ফেলে দেওয়া গণ-আন্দোলন করব না আর ভোটের মুখে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সুবিধাবাদী জোটের অঙ্ক কষে মসনদ দখলের খোয়াব দেখব, এমন বিচিত্র জনবিচ্ছিন্ন রাজনীতির ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে বামেরা যদি আবার পথে নেমে সাথী খুঁজে নিতে না-পারে, তা হলে তাদের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে একমাত্র ডাইনোসরই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *