কলকাতা: শান্তিপূর্ণ ভোট বলছে কমিশন৷ কিন্তু, কমিশনের দাবি উড়িয়ে ইভিএম, ভিভিপ্যাট ভাঙচুর, বুথে ঢুকে ভোটারদের উপর নজরদারি, প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুর, ভোটারদের ভোটকেন্দ্র ঢুকতে বাঁধা দেওয়া, মহিলা ভোটারদের আচল টানার মতো একের পর এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার সাক্ষী থাকল বাংলার প্রথম দফার নির্বাচন৷
কোচবিহারের শীতলকুচির ২৭২ নম্বর বুথে এক ব্যক্তিকে বারবার বুথে ঢুকে ভোটাররা কাকে ভোট দিচ্ছেন, তার ওপর নজর রাখতে দেখা যায়৷ মোবাইলের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে এই ছবি৷ যদিও, এবার বুথে মোবাইল ফোন নিয়ে ঢোকার উপর নিষেধাঞ্জা ছিল৷ তবুও, সেই নিষেধাঞ্জা ভেঙে ফোন নিয়ে অবাধে চলল ভিডিও রেকডিং৷ বিনাবাধায় চলল ভোটারদের প্রভাবিত করার কাজ৷ বিজেপির অভিযোগ, শীতলকুচির বুথে বিজেপি এজেন্টকে তাড়িয়ে দিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ভোটারদের হয়ে নিজেই ভোট দিয়ে দিয়েছেন৷ প্রিসাইডিং অফিসার জানিয়েছেন, তিনি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও, কাজ হয়নি৷ সব দেখেও দর্শক রাজ্য পুলিশ৷
অন্যদিকে, কোচবিহারের দিনহাটায় বুথে ঢুকে চলে তাণ্ডব৷ ইভিএম, ভিভিপ্যাট ভাঙচুর৷ তৃণমূল-বিজেপি-র একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ৷ এই ঘটনার পর ভোট পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই এলাকায়৷ নিজের প্রাণ বাঁচাতে বুথ ছেড়ে পালিয়ে যান ভোটকর্মীরা৷ পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি৷
কোথাও কোনও অশান্তি হয়নি৷ বুথের মধ্যে কোনও অশান্তির অভিযোগ আসেনি৷ নিরাপত্তা বাহিনী ঠিকঠাক কাজ করছে৷ অভিযোগ আসা মাত্রই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে৷ এখনও পর্যন্ত তোমন কোনও গন্ডোগলের পাওয়া যায়নি বলে সাংবাদিক বৈঠক করে এমনটাই জানাল নির্বাচন কমিশনান৷
বিক্ষিপ্ত অশান্তি ও ইভিএম বিভ্রাটের পরও রেকর্ড সংখ্যক ভোট পড়েছে বাংলার দুই কেন্দ্রে৷ বিকেল ৩টে পর্যন্ত বাংলার দুই কেন্দ্রে মোট ভোট পড়েছে ৬৯.৯৪ শতাংশ। কোচবিহারে ভোট পড়েছে ৬৮.৪৪ শতাংশ। আলিপুরদুয়ারে ভোট পড়ল ৭১.৪৪ শতাংশ। জানিয়েছে কমিশন৷
তবে, কমিশনের তরফে শান্তিপূর্ণ ভোটের দাবি জানানো হলেও আজ দিনভর উত্তপ্ত কোচবিহার৷ কোথায় বাম প্রার্থীর উপর হামলা, কোথায় বেলাম সন্ত্রাসের অভিযোগে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ জনতার৷ জানা গিয়েছে, এদিন দুপুরে ভোটপ্রক্রিয়া দেখতে যান মাথাভাঙায় বাম প্রার্থী গোবিন্দ রায়৷ অভিযোগ, একদল দুষ্কৃতী গোবিন্দ রায়ের উপর চড়াও হয়৷ কোনোক্রমে প্রার্থীকে আড়াল করেন বাম কর্মীরা৷ পরে, তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়৷ অভিযোগের তির সেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে৷ অভিযোগ অস্বীকার তৃণমূল নেতৃত্বের৷
অন্যদিকে, বলগাহীন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এবার পুলিশের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন স্থানীয়রা৷ মাথাভাঙায় ৫-এর ১০৩ নং বুথে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা৷ পুলিশের গাড়ি হটিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা৷ পুলিশ শাসকদলের হয়ে কাজ করছে বলেও অভিযোগ আনা হয় স্থানীয়দের তরফে৷ আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে রিগিংয়ের অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হতে চলেছে বিজেপি৷
ভোট শুরু হতে না হতেই বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষিপ্ত আশান্তির খবর পাওয়া যায়৷ কুমারগ্রামে বেশ কয়েকটি বুথে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে৷ অভিযোগ অস্বীকার শাসকদলের৷ সকাল ১০টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে ৪৬২টি অভিযোগ জমা পড়ে৷ ৪৩৬টি ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি কমিশনের৷ দিনহাটায় একাধিক বুথে ইভিএম খারাপ বিষয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে ফোন করে খোঁজ নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ দিনহাটায় অসুস্থ হয়ে পড়েন ভোট কর্মী৷ তাঁকে ভর্তি করা হল হাসপাতালে৷ দিনহাটার মাতালহাট, নয়ারহাটে বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়৷ বুকে তৃণমূলের প্রতীক নিয়ে কুমারগ্রামে ভোট দেন আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল প্রার্থী দশরথ তিরকে৷ সংবাদমাধ্যমের নজর পড়তেই পরে তা সরিয়ে দেন তিনি৷
এদিন সকালে কোচবিহারে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ৷ বিএসএফ ভোট প্রভাবিত করছে। অবজারভার ফোন ধরছেন না। পুলিশ অবজারভার ভোট না মিটিয়ে জেলা ছাড়তে চাইছেন৷ মন্তব্য করেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ৷ একই সঙ্গে কোচবিহারে একাধিক বুথে ইভিএম খারাপ, চক্রান্তের অভিযোগ তুললেন জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের৷
দিনহাটার ভেটগুড়িতে ৭/২৩৪ বুথে পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে বাধা কেন্দ্রীয় বাহিনীর৷ কোচবিহারের ভেটগুড়িতে ৭/২৩৪ বুথে ভিভিপ্যাট বিকল হওয়ার খবর পাওয়া যায়৷ এই বুথের ভোটার বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিক৷
কোচবিহারের শীতলকুচির ১৩১ নম্বর বুথে ইভিএম খারাপ হওয়ায় ভোটগ্রহণ শুরু হতে সমস্যা তৈরি হয়৷ কোচবিহারের নেতারহাটে ভোটারদের থেকে স্লিপ কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে৷
ওকরাবাড়িতে ৭/২৫৬, ২৫৮, ২৬২, ২৬৮, ২৬৯ বুথে বিজেপি এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকায় সেক্টর অফিসার কোনোও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ তোলে বিজেপি৷
দিনহাটার ভেটগুড়িতে ৭/২৩৪ বুথে পোলিং এজেন্টদের বুথ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ কেন্দ্রীয় বাহিনীর৷
মাথাভাঙায় বিজেপি কর্মী উপেন বর্মনের বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে৷ এলাকায় বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে৷