কলকাতা: গ্রেফতার হওয়ার পর যতদিন যাচ্ছে অয়ন শীলকে নিয়ে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য সামনে আসছে। যাকে বলে দুর্নীতির ধামাকা করে দিয়েছেন অয়ন। অয়ন-ধামাকা কত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত সেটাই এখন দেখার পালা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে প্রশাসনের কাছে কি এসবের বিন্দু বিসর্গ খবর ছিল না? তথ্য বলছে কয়েক বছর আগে অয়নের বিরুদ্ধে চুঁচুড়া থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। কিন্তু কোনও এক আশ্চর্য কারণে পুলিশ সেই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করেনি। হুগলি জেলা পুলিশ সূত্রে এমনটাই খবর। যদিও জেলা পুলিশ কর্তারা এ বিষয়ে নিশ্চুপ। যদি সত্যিই সেই অভিযোগ দায়ের হয়ে থাকে তাহলে পুলিশ কেন তদন্ত করেনি সেই উত্তর দেবেন কে? তবে কী অয়নের হাত এতদূর লম্বা ছিল যেখানে সব কিছু ধামাচাপা পড়ে যেত? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠতে শুরু করেছে।
ঘটনার পরম্পরা বলছে শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূল নেতাদের একাংশের সঙ্গে অয়নের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল। আর সেগুলি কাজে লাগিয়েই অয়ন তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তার করে গিয়েছেন। কখনও নতুন ফ্ল্যাট কিনছেন, গাড়ি কিনছেন, আবার টলিউডের ছবি তৈরিতেও টাকা ঢালছেন। আবার কখনও ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচারস অ্যাসোসিয়েশন বা ‘ইম্পা’র কাজকর্মে নাক গলিয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। অথচ এতকিছুর পরেও অয়ন সম্পর্কে প্রশাসনের কাছে কোনও খবর ছিল না। এমনটাও কী সম্ভব? নাকি সর্ষের মধ্যেই ভূত রয়েছে? সেটা বোঝাই যায় যখন অয়নের বাড়িতে ইডি আধিকারিকদের হানার আগের দিনই তাঁর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী শ্বেতা চক্রবর্তী অয়নের মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। অয়নের অফিস এবং বাড়িতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকরা তল্লাশি অভিযানে যাবেন এটা শ্বেতা চক্রবর্তী আগাম জানলেন কি করে? তবে কি সেখানেও শ্বেতার কানেকশন রয়েছে? তাই অয়ন পর্ব যত এগোচ্ছে ততই চক্ষু চড়কগাছ হচ্ছে গোয়েন্দাদের পাশাপাশি রাজ্যবাসীর।
সামান্য একটা অভিযোগ পেয়েই আইনজীবী ও কংগ্রেস নেতা কৌস্তব বাগচীর বাড়িতে মধ্য রাতে পুলিশ ছুটে গিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল। সাগরদিঘি বিধানসভার উপ-নির্বাচনে সদ্য জয় পাওয়া কংগ্রেসের বাইরন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পরই নির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। কার্টুন কাণ্ডের জেরে অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রের অবস্থা কী হয়েছিল সেটা সকলেই জানেন। এই ধরনের পুলিশি তৎপরতার সংখ্যা বহু রয়েছে। কিন্তু পুলিশের নজর পড়ে না শান্তনু-কুন্তল-অয়নদের অস্বাভাবিক কাজকর্মের উপর। কীভাবে রাতারাতি তাঁরা ফুলেফেঁপে উঠছেন সেটা দেখেও যেন না দেখার ভান করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে কী আগামী দিনেও এরকমটাই চলবে? নাকি অবস্থার পরিবর্তন হবে? মানুষ কিন্তু এই প্রশ্নের আজ উত্তর চাইছে। এই অবস্থায় অয়ন সম্পর্কে আরও বিস্ফোরক তথ্য উঠে আসে কিনা সেটাই দেখার পালা।