নিজস্ব প্রতিনিধি: শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বহুদিন ধরেই সরগরম রাজ্য রাজনীতি। কিন্তু শুধু শিক্ষক-শিক্ষিকা নয়, রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে গ্রুপ ডি পদে নিয়োগেও ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ একই সঙ্গে উঠেছিল। এবার বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু স্পষ্ট নির্দেশ দিলেন অবৈধভাবে নিযুক্ত হওয়া গ্রুপ ডি কর্মীদের আর যেন স্কুলে ঢুকতে দেওয়া না হয়। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের অভিযোগ ১৬৯৮ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। আর সেটা শুনেই বিচারপতি বসুর বিস্ফোরক মন্তব্য,’ চিৎকার করে বলুন যাতে সকলে শুনতে পায় যে কি হয়েছে!”
শিক্ষক থেকে গ্রুপ ডি পদ, একের পর এক দুর্নীতি সামনে চলে আসছে। রীতিমতো প্যান্ডোরার বাক্স খুলে গিয়েছে। এর শেষ কোথায় কেউ বোধহয় জানে না। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এ সম্পর্কে বলেছেন, “সবে তো ১৬৫৮ জনের তালিকা জমা পড়েছে। অবৈধ নিয়োগ হয়েছে ২১ হাজার ৭০০ পদে। তদন্তকারী সংস্থা আদালতে জানিয়েছে মানিক ভট্টাচার্যের হাতে ৫৮ হাজার নিয়োগ হয়েছে, আর তার সবই অবৈধ।” অন্যদিকে তৃণমূলের বক্তব্য, আদালতের পর্যবেক্ষণ নিয়ে তাদের কিছু বলার নেই। তদন্ত ও সুবিচার হোক।
রাজ্যের মানুষ ৩৪ বছরের বাম শাসন দেখেছে। তার আগে দীর্ঘ সময় পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সরকার ছিল। প্রত্যেক সরকারের বিরুদ্ধেই কিছু না কিছু অভিযোগ উঠতে দেখা যায়। কিন্তু কখনও পশ্চিমবঙ্গে যে সমস্ত সরকার ছিল তাদের বিরুদ্ধে এই ধরনের লাগাম ছাড়া দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি। টাকার বিনিময়ে লাগাতার চাকরি দেওয়া হয়েছে, এমন অভিযোগ কোনও দলের বিরুদ্ধে ওঠেনি। সেদিক দিয়ে বলা যেতে পারে গত ১১ বছরের তৃণমূল সরকার এক্ষেত্রে রীতিমতো রেকর্ড গড়েছে। আর এই সমস্ত দুর্নীতির বিষয় নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের একাধিক বিচারপতি নজিরবিহীন পর্যবেক্ষণ শোনাচ্ছেন। এবার বিচারপতি বসু স্পষ্ট জানালেন অবৈধভাবে যে সমস্ত গ্রুপ ডি কর্মীকে নিয়োগ করা হয়েছে, তাঁদের যেন স্কুলে ঢুকতে না দেওয়া হয়। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে এটা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। অর্থাৎ দুর্নীতির শিকড় রয়েছে আরও গভীরে। তবে কি গত ১১ বছরে শিক্ষক বা অশিক্ষক পদে যারা চাকরি পেয়েছেন তাঁরা সকলেই টাকা দিয়ে ব্যাকডোর দিয়ে নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছেন? এই প্রশ্ন আজ প্রত্যেক রাজ্যবাসীর মুখে মুখে ঘুরছে। নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত চলছেই। নিয়মিত উঠে আসছে নিত্য নতুন তথ্য। তাই আগামী দিনে দুর্নীতির আর কোন তথ্য উঠে আসে এখন সেটাই দেখার।