নিজস্ব প্রতিনিধি: শেষরক্ষা হয়নি। বহু নাটকের পর মঙ্গলবার দিল্লি যেতে বাধ্য হয়েছেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। এরপর মঙ্গলবার মধ্য রাতেই দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতের বিচারক রাকেশ কুমারের বাড়িতে শুনানি হয়। সেখানেই অনুব্রতকে ১০ মার্চ পর্যন্ত ইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সূত্রের খবর গরু পাচার কাণ্ডে অন্যতম মাথা এনামুল হক ইডিকে জানিয়েছিলেন সায়গল হোসেনের মারফত টাকা যেত অনুব্রত মণ্ডলের কাছে। এই সংক্রান্ত নথি তুলে ধরে বুধবার অনুব্রতকে ইডি আধিকারিকরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বলে খবর। জানা গিয়েছে অনুব্রতকে জেরা করার জন্য ছয় সদস্যের বিশেষ দল গঠন করেছে ইডি। এই পরিস্থিতিতে অনুব্রত রাজসাক্ষী হতে পারেন বলে জল্পনা শুরু হয়েছে। সত্যিই যদি অনুব্রত রাজসাক্ষী হয়ে যান তাহলে তিনি এমন কিছু নাম সামনে আনবেন যাতে শোরগোল পড়ে যাবে রাজ্য তথা কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে। এমন জল্পনা স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয়েছে।
বিভিন্ন সময়ে রাজসাক্ষীরা মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মামলায়। উল্লেখ্য বিরোধীদের অভিযোগ দুর্নীতি মামলায় আরও বড় বড় মাথারা জড়িত আছেন। সেই সব নাম জানেন অনুব্রত। তাই সত্যিই যদি অনুব্রত রাজসাক্ষী হয়ে যান সেক্ষেত্রে গরু পাচার, কয়লা পাচার মামলা যে অন্য মাত্রা পাবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
তাই এটা পরিষ্কার যতদিন যাচ্ছে অনুব্রত আরও বেশি করে জালে জড়িয়ে যাচ্ছেন। আর এতে উদ্বেগ বাড়ছে রাজ্য সরকারের। যদিও শাসক দলের অভিযোগ বিজেপির ইশারাতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কাজ করছে। কিন্তু রাজ্যের মানুষের কাছে এই ধারণা স্পষ্ট হয়েছে যে শাসক দলের নেতাদের একাংশ সত্যিই দুর্নীতি করেছেন। তাই অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়াটা দুর্নীতি মামলার টার্নিং পয়েন্ট হয়েছে বলেই সবার ধারণা। বহুদিন ধরেই অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল ইডি। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে আইনি বাধা কেটে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। তাই অনুব্রত জেরায় কতটা সহযোগিতা করেন, কি কি নাম বলেন, সত্যিই তিনি রাজসাক্ষী হয়ে যান কিনা তা নিয়ে কৌতুহল থাকছেই। সেই সঙ্গে এই জল্পনা শুরু হয়েছে যে, অনুব্রত যদি সত্যিই এমন কিছু নাম বলেন যাতে শাসক দলের অস্বস্তি আরও বাড়ে, তখন কি তারা বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির পাশে আগের মতোই দাঁড়াবে? নাকি তখন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো অনুব্রতকেও ছেঁটে ফেলবে তৃণমূল? এই চর্চা স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। সব মিলিয়ে অনুব্রত মণ্ডলের দিল্লি যাত্রা এখন রাজ্য রাজনীতিতে অন্যতম চর্চিত বিষয় হয়ে উঠেছে। হেফাজতে থাকাকালীন অনুব্রতকে জেরা করে তদন্তকারীরা নতুন কি কি তথ্য পান, তার ভিত্তিতে তদন্ত প্রক্রিয়া আগামী দিনে কোন দিকে যায়, সেদিকেই তাকিয়ে সবাই।