রাজ্যের করোনা কমিটির স্বাধীনতা কতটা? প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা

রাজ্যের করোনা কমিটির স্বাধীনতা কতটা? প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা

কলকাতা: রাজ্যে করোনার মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে রাজনৈতিক বাকযুদ্ধ চলছেই। রাজ্য সরকারের তথ্যের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্যের যেমন ফারাক থেকেছে, তেমনি করোনা নিয়ে গঠিত বিশেষ কমিটির বয়ানেও মৃত্যুর সংখ্যা রাজ্যের দেওয়া সংখ্যার সঙ্গে মিলছে না। তবে, সোমবার বিকালে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রাজ্যে এই মুহূর্তে আক্রান্তের সংখ্যা ৬১ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, রাজ্যে ৩ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি ১৩ জন সুস্থ হয়েও উঠেছে।

রাজ্যের বিরোধী দলগুলি করোনার মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে চলতি বিতর্কে মুখ্যমন্ত্রীকে দায়ী করেছেন। বিরোধীদের বক্তব্য, মৃত্যুর কারণ যদি মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ঠিক করেন যাবে ডাক্তারের প্রয়োজনিয়তা কী?
ডাক্তারদের এক অংশের অসন্তোষ চাপা নেই। সরাসরি না হলেও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া এবং হোয়াটস আপ মারফত ডাক্তাররা মতামত ক্ষোভের বার্তা দিচ্ছেন। অনেকেই সেই বার্তা শেয়ার করেছেন। ওই বার্তায় বলা হচ্ছে, মৃত্যুর কারণে কোভিড লেখা যাবে  না। লিখতে হবে কো-মরর্বিডিটি। যে ডাক্তার চিকিৎসা করলেন তিনি তা লিখতে পারবেন না। বিশেষ কমিটি মৃত্যুর কারণ লিখবেন, যারা জীবিত অবস্থায় রোগীকে ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখেননি।

তবে ডাক্তারদের এই অসন্তোষ রাজনৈতিক বাক্তিত্বরাই সামনে এনেছে। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ অনেক আগেই বলেছেন, সরকার করোনাকে নিমনিয়া এবং হার্টফেল বলে চালানোর চেষ্টা করছে। রাজ্য সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রাজ্যে করোনার মৃতের সংখ্যা সঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিটির হিসাব কেন মিলছে না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন দিলীপ।

দিলীপের মতই বিধানসভায় বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, তথ্যকে গোপন করে মানুষকে বিপদে ফেলা হচ্ছে। হাওড়া হাসপাতালের উদাহরণ দিয়ে সুজন বলেন, করোনা রুগীকে অন্যদের থেকে আলাদা না করা গেলে সমগ্র হাসপাতালে তা ছড়িয়ে পড়বে। মারা যাওয়ার পর টের পাওয়া যাচ্ছে, তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন। এরাজ্যের (প্রশাসনের) এই অভ্যাস আছে। যেমন, ডেঙ্গুকে 'ডেঙ্গু' লেখা যাবে না। অজানা জ্বর লিখতে হবে। ডাক্তার ডেঙ্গু লিখেছিল বলে তাঁকে সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়েছিল। সুজন বলেন, “মৃত্যুর কারণ কী মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করবেন। মৃত্যুর কারণ যদি মুখ্যমন্ত্রী বা নবান্ন ঠিক করে, তা অন্যায়, অবৈজ্ঞানিক, অমানবিক।”

তবে, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র নিজেই ডাক্তার। তিনি টুইটারে বলেছেন, করোনা ভাইরাসজনিত মৃত্যু হয় নিউমোনিয়া, কিডনি ফেলের জন্য। এটা উলটে দিলে বিপদ! মৃত্যুর কারণ চিকিৎসক লেখেন, মুখ্যমন্ত্রী নয়। সেটা বেআইনি হস্তক্ষেপ। রোগ চেপে রাখলে আরো বাড়ে। রাজ্যের মুখ্য সচিবের মুখে এক সংখ্যা, বিশেষজ্ঞ কমিটির মুখে আরেক সংখ্যা আবার কেন্দ্র অন্য সংখ্যার কথা জানাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী নিজেই সাংবাদিক বৈঠক করে সংখ্যা জানিয়েছেন। ওই বৈঠকে, মুখ্যমন্ত্রী আরো জানান একটি গ্লোবাল বোর্ড হবে। যেটির নাম, গ্লোবাল এডভাইজারী বোর্ড ফর কোভিড রেসপন্স পলিসি ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল তৈরি হবে। ওই বোর্ডে থাকবেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রাক্তন আঞ্চলিক অধিকর্তা স্বরুপ সরকার। এদের সঙ্গে যোগাযোগে থাকবেন চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী এবং সুকুমার মুখোপাধ্যায়।

এই ব্যাপারে, সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, বিশেষজ্ঞ কমিটি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত হয় বলেই তাঁদের কাজের স্বাধীনতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সরকারী সার্কুলারে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান পদ্ধতি নির্দিষ্ট থাকলে বিশেষজ্ঞ কমিটির পক্ষে স্বাধীনভাবে কাজ করা অসম্ভব। করোনাতে মৃতের সংখ্যা কমিয়ে দেখানো হচ্ছে। এটা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *