আদালতের নির্দেশের পর ভুল স্বীকার এসএসসি! সংস্থার গ্রহণযোগ্যতা কমছে?

আদালতের নির্দেশের পর ভুল স্বীকার এসএসসি! সংস্থার গ্রহণযোগ্যতা কমছে?

230ec4911e0f7594874b31db26ed13e5

 

নিজস্ব প্রতিনিধি: গ্রুপ সি নিয়োগ কাণ্ডে স্কুল  সার্ভিস কমিশনের প্রকাশ করা তালিকা দেখে হতবাক শিক্ষা জগৎ। নম্বর বাড়িয়ে চাকরি দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছিল তাতে এবার সিলমোহর দিল এসএসসি। সোমবার গ্রুপ সি পদের প্রায় সাড়ে তিন হাজার জনের যে তালিকা এসএসসি প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে শূন্য বা ১ পাওয়া পরীক্ষার্থীর নম্বর বেড়ে ৫৬ বা ৫৭ হয়ে  গিয়েছে। যেমন তালিকায় আট নম্বরে থাকা জনৈক আব্দুল মান্নান সরকার পরীক্ষায় শূন্য পেয়েছিলেন কিন্তু যে ওএমআর শিট প্রকাশ করা হয়েছে তাতে তাঁর নম্বর বেড়ে হয়েছে ৫৭। অভিষেক মাইতি নামে এক পরীক্ষার্থী শূন্য পেয়েছিলেন। তাঁর নম্বর বেড়ে হয়েছে ৫৬। এই তালিকা বিশাল লম্বা। যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তার মধ্যে ৩০৩০ জনের নম্বর বাড়ানো হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে খবর। অর্থাৎ তালিকার ৯০ শতাংশের বেশি চাকরিপ্রার্থীদের নম্বর বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় সকলেই পিছনের দরজা দিয়ে মেধা তালিকায় ঢুকে পড়েছিলেন।

 

কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই সূত্রে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে এসএসসির তরফে। মামলার শুনানিতে কমিশন নম্বর কারচুপির কথা স্বীকার করে নিতে আগেই বাধ্য হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে এসএসসি তিন হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থীর নাম ও নম্বরের যে তালিকা সামনে আনল তাতে যথারীতি শোরগোল পড়ে গিয়েছে।  শুধু গ্রুপ সি পদ বলে নয়, যে বা যারা শিক্ষক বা অন্যান্য ক্ষেত্রে চাকরি পেয়েছেন, তাঁরা আদৌ যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছেন তো? এখন এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে। আদালতের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত করে আসল সত্যটা বের করে না আনলে এই অযোগ্যরাই তো বছরের পর বছর ধরে চাকরি করে যেতেন।

 

এসএসসি বা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের মতো স্বশাসিত সংস্থার এতে যথেষ্ট মুখ পুড়ছে বলেই সবাই মনে করছে। ওয়াকিবহাল মহলের প্রশ্ন, এসএসসি কি জানত না এভাবে কারচুপি করে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে? আদালতের নির্দেশের পরেই তারা সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি বুঝে গেল? তার মানে তো এটাই দাঁড়ায় মামলা আদালতে না গড়ালে পিছনের দরজা দিয়ে চাকরি পাওয়া ব্যক্তিরা নিজেদের চাকরির মেয়াদ পূর্ণ করতেন। শিক্ষকরা সমাজ গড়ার কারিগর। তাঁরাই বিশ্বকর্মার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে আগামী দিনের সমাজ গড়ে থাকেন। সেই শিক্ষক পদে কতজন সততার সঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে চাকরি করছেন, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তো থাকবেই। তাই সকলেই চাইছেন আসল সত্যটা বেরিয়ে আসুক। সমস্ত পদে বিগত কয়েক বছরে যারা চাকরি পেয়েছেন সেগুলি তদন্ত করে দেখা হোক। শিক্ষক বা অন্যান্য পদে যোগ্যরাই শুধু থাকুন, এটাই চায় সমাজ। কিন্তু যেভাবে গ্রুপ সি পদে এসএসসির প্রকাশিত তালিকায় দেখা যাচ্ছে ৯০ শতাংশের বেশি চাকরিপ্রার্থীর নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তাতে সবারই সন্দেহ বিভিন্ন পদে যারা চাকরি পেয়েছেন তাঁদের বড় অংশ হয়ত পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকেছেন। এই সন্দেহ দূর করার কাজটা করতে হবে এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ-সহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিকে। পুরো ঘটনায় যেভাবে মুখ পুড়েছে তাতে ক্লিন ইমেজ তৈরি করাই এখন তাদের প্রধান কাজ। সে কাজে তারা আদৌ সফল হয় কিনা এখন তারই অপেক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *