নিজস্ব প্রতিনিধি: মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধান। অনুব্রত মণ্ডল কোথায় ছিলেন আর এখন কোথায় রয়েছেন। গত দশ বছর তাঁকে যেভাবে দেখেছে বীরভূম তথা গোটা রাজ্য, তার সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির মিল নেই। তৃণমূল যবে থেকে ক্ষমতায় এসেছে কার্যত তখন থেকেই বীরভূম জেলা প্রশাসনকে অলিখিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন তিনি। মাঝেমধ্যেই তাঁর বাড়িতে পৌঁছে যেতে দেখা গিয়েছে জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের পদস্থ কর্তাদের। কখন কার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে, কাকে গ্রেফতার করা হবে, এই ধরনের বহু প্রশাসনিক পদক্ষেপ অনুব্রত মণ্ডল ঠিক করে দিতেন বলে বীরভূমে কান পাতলেই শোনা যায়।
এমনকী অনুব্রতর বিভিন্ন নিদান শোনার পরেও কারও প্রতিবাদ করার সাহস ছিল না। প্রকাশ্য সভা থেকে পুলিশকে বোমা মারার কথাও বলেছিলেন তিনি। অথচ পুলিশকর্মী বা আধিকারিকদের কেউ কেউ অনুব্রতর নির্দেশ উপেক্ষা করতে পারতেন না। কিন্তু অনুব্রতর বাড়িতে যেভাবে চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারীকে জোর করে পাঠানো হয়েছে বোলপুর হাসপাতালের সুপার বুদ্ধদেব মুর্মুর নির্দেশে, তা নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই চন্দ্রনাথকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন সিবিআই কর্তারা। সেই সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে হাসপাতালের সুপারকে। এখানেই প্রশ্ন এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনে কি জেলা প্রশাসনের কর্তারা শাসক দলের নেতাদের বাড়তি সমীহ করা বন্ধ করে দেবেন? যখন তখন জেলার পুলিশকর্তাদের ফোন করে বিরক্ত করা, নানা রকম চাপ দেওয়া, কথা না শুনলে নানা রকম হুমকি দেওয়ার অভিযোগ শাসকদলের নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যেই শোনা যায়।
এতদিন জেলায় জেলায় এই প্র্যাকটিস চলে আসছিল বলে অভিযোগ বিরোধীদের। তবে ওয়াকিমহল মহল মনে করে উঁচুতলার চাপের কারণেই ইচ্ছা না থাকলেও নিরুপায় হয়ে পুলিশ বা প্রশাসনিক কর্তাদের এসব সহ্য করে যেতে হচ্ছে। কিন্তু অনুব্রত এপিসোড সামনে আসার পরেই দেখা গিয়েছে দিল্লিতে রাজ্যের আট পুলিশ কর্তাকে ডেকে পাঠিয়েছে ইডি। মূলত কয়লা পাচার কাণ্ডে তাঁদের জেরা করা হবে বলে খবর। রাজ্যের প্রাক্তন আমলারা বলছেন পুলিশ বা প্রশাসনিক কর্তাদের এমন কিছু করা উচিত হবে না যাতে তাঁদের চাকরি জীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। আর এটা যে কতটা সত্য তা হাড়ে হাড়ে বুঝছেন রাজ্যের সমস্ত প্রশাসনিক কর্তা। সকলেই বুঝে গিয়েছেন আগামী দিনে এমনটা করলে আর চলবে না। জেলা তথা রাজ্য নেতা-নেত্রীদের হুকুম মানতে গেলে যে আগামী দিনে সমস্যায় পড়তে হতে পারে, এটা এখন জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে সকলের কাছে। রাজনীতি থাকবে রাজনীতির জায়গায়, আর প্রশাসন তার জায়গায়, এই চেনা কথাটা বহুবার যেন রাতারাতি ভ্যানিস হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সিবিআইয়ের হাতে অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পরই বিষয়টি নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে প্রশাসনিক মহলে। তাই এটা পরিষ্কার অনুব্রতর গ্রেফতারি প্রশাসনের একাংশকে কড়া বার্তা দিয়ে গেল।