actual recipients
নিজস্ব প্রতিনিধি: একশো দিনের কাজের ক্ষেত্রে দুর্নীতি যে হয়েছে সেটা ঠারেঠোরে স্বীকার করে দিচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা গিয়েছে, যদি কেউ দুর্নীতি করে থাকেন তাহলে তাঁদের টাকা আটকানো হোক। কিন্তু প্রকৃত জবকার্ড হোল্ডারদের কেন বঞ্চিত করা হচ্ছে? উল্টোদিকে বিজেপিও বুঝতে পারছে কেন্দ্র যেভাবে টাকা দেওয়া বন্ধ করেছে তাতে কয়েক লক্ষ প্রকৃত জবকার্ড হোল্ডার টাকা পাচ্ছেন না, যাতে চরম অসুবিধার মধ্যে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। এতে জেলায় জেলায় বিজেপি নেতৃত্বকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। তাই আমজনতার প্রশ্ন, কেন্দ্র-রাজ্যের দ্বন্দ্ব মিটবে কবে? আর যতদিন না দ্বন্দ্ব মিটবে ততদিন কী প্রকৃত প্রাপকদের এভাবেই বঞ্চিত হতে হবে?
ঘটনা হল কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিং ও প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির অভিযোগ, একশো দিনের কাজের ক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। এক কোটির বেশি ভুয়ো জবকার্ড উদ্ধার হয়েছে, যার মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। সেই সঙ্গে কেন্দ্রের অভিযোগ, ভুয়ো জবকার্ড হোল্ডারদের ধরা, বা তাঁদের কাছ থেকে টাকা ফেরত নিতে তৃণমূল সরকার ন্যূনতম পদক্ষেপ করেনি। এই অভিযোগ তুলে টাকা দেওয়া বন্ধ করেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রের যুক্তিকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু এটাও ঠিক একজন দোষ করলে অন্য নির্দোষ ব্যক্তি কেন শাস্তি পাবেন? তাই বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম স্পষ্ট বলেছেন,”অবৈধ কাজকে আদালত সমর্থন করে না। কিন্তু কিছু লোক বৈধভাবে কাজ করেছে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে। তাহলে তাঁরা কেন বঞ্চিত হবেন?” এর পাশাপাশি প্রকৃত প্রাপক এবং ভুয়ো জবকার্ড হোল্ডার, অর্থাৎ আসল এবং নকল খুঁজে বের করার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি তাৎপর্যপূর্ণভাবে বলেছেন, “এখানে অনেক পচা আপেল আছে। তাই ভাল আপেল খুঁজে বের করতে হবে!” তাই বিচারপতির কথামতো ভাল আপেল খুঁজে বের করে এবার কী সত্যিই কেন্দ্র টাকা দেওয়ার রাস্তায় হাঁটবে? গত দু’বছর ধরে যে সমস্যা জগদ্দল পাথরের মতো বসে রয়েছে সেটিকে সরানোর ব্যাপারে উদ্যোগ নেবে কেন্দ্র? লোকসভা নির্বাচনের আগে যারা প্রকৃত জবকার্ড হোল্ডার, অর্থাৎ সেই সমস্ত প্রান্তিক মানুষের টাকা মিটিয়ে দিয়ে প্রকৃত প্রাপকদের উদ্দেশে বিশেষ বার্তা দিতে চাইবে নরেন্দ্র মোদি সরকার? যথারীতি এই চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।
প্রকৃত এবং ভুয়োদের চিহ্নিত করে টাকা দেওয়া উচিত বলে রাজ্য বিজেপিও মনে করছে। কিন্তু প্রকাশ্যে তাঁরা সেটা বলতে পারছেন না। এমনিতেই রাজ্য বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে ব্যাপক ফাটল ধরেছে। সেখানে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কাজ করা কয়েক লক্ষ প্রকৃত জবকার্ড হোল্ডার টাকা না পেলে তার প্রভাব যে ভোটব্যাঙ্কে পড়বে, সেটা ভাল করেই বুঝতে পারছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। বিষয়টি নিয়ে যে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা রাজ্যের পক্ষে যে একেবারেই ভাল নয় সেটা সকলেই বুঝতে পারছেন। তাই ঘুরে ফিরে সেই একটাই প্রশ্ন উঠে আসছে, প্রকৃত প্রাপকরা আদৌ টাকা পাবেন তো? তবে সময়ই তার উত্তর দেবে।