নিজস্ব প্রতিনিধি: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সদ্য বিরোধীরা যশবন্ত সিনহাকে সর্বসম্মতিক্রমে প্রার্থী নির্বাচিত করেছেন। কিন্তু তার চব্বিশ ঘন্টার পরই বড় ধাক্কা খেল বিরোধী জোট। ঝাড়খণ্ডের শাসক দল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা রাষ্ট্রপতি পদে বিজেপি তথা এনডিএ জোটের মনোনীত প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুকে সমর্থন করবে বলে জানা যাচ্ছে। উল্লেখ্য ঝাড়খণ্ডে কংগ্রেস এবং জেএমএম একসঙ্গে সরকার চালাচ্ছে। তাই জোটের প্রধান শরিক ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা এনডিএ প্রার্থীকে সমর্থন করায় কংগ্রেসের অস্বস্তি নিঃসন্দেহে বাড়ল। এছাড়া দ্রৌপদী মুর্মুকে সমর্থন করছে বিজেডি, নীতীশ কুমারের জেডি ইউ। সেইসঙ্গে ওয়াইএসআর কংগ্রেস, বহুজন সমাজ পার্টি ও টিআরএসের সমর্থন পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী বিজেপি। অথচ তারা প্রত্যেকেই বিজেপির বিরোধিতা করেছে বিভিন্ন সময়। তাই এটা স্পষ্ট ঘটা করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী জোটের প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে পরপর যে দুটি মেগা বৈঠক হল তার বিন্দুমাত্র আঁচ লাগল না এনডিএ শিবিরের গায়ে।
একটা সময় ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল ছিলেন দ্রৌপদী মুর্মু। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন এবং তাঁর বাবা তথা দলের প্রধান শিবু সোরেনের সঙ্গে দ্রৌপদীর সম্পর্ক অত্যন্ত ভাল। বিরোধী জোটের প্রার্থী যশবন্ত সিনহার জন্ম বিহারে। তাঁর রাজনৈতিক জীবন আবর্তিত হয়েছে ঝাড়খণ্ড ঘিরে। কিন্তু তা সত্ত্বেও জেএমএম এনডিএ প্রার্থীকেই সমর্থন করবে বলে জানা যাচ্ছে। তাদের দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “ইতিহাসের ভুল দিকে থাকা আমাদের উচিত হবে না। আদিবাসীদের ভাল সবসময় চায় আমাদের সরকার। আমরা তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী বলেই পরিচিত। সেই পরিচয় আমরা ধরে রাখতে চাই”। যদিও এর আগে মনে করা হয়েছিল জেএমএম যশবন্ত সিনহাকেই সমর্থন করবে। কারণ বিরোধী দলের বৈঠকে যশবন্ত সিনহার নাম রাষ্ট্রপতি প্রার্থী পদে যখন সর্বসম্মতিক্রমে ঠিক করা হয় তখন তার প্রস্তাবকদের মধ্যে অন্যতম ছিল জেএমএম। কিন্তু বিজেপি আদিবাসী নেত্রী দ্রৌপদী মুর্মুর নাম রাষ্ট্রপতি পদে ঘোষণা করতেই পুরো ছবিটা মুহূর্তে বদলে যায়। যদিও বিষয়টি নিয়ে বিরোধী জোটের কোনও নেতা প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি।
এর পাশাপাশি যশবন্ত সিনহাকে নিয়ে প্রবল অস্বস্তি রয়েছে বঙ্গ সিপিএমের মধ্যে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোট সর্বসম্মতভাবে যশবন্ত সিনহাকে প্রার্থী নির্বাচন করেছে। আর তাঁর বিরুদ্ধে যাতে বাংলার সিপিএম নেতৃত্ব মুখ না খোলেন সেই নির্দেশ দিলেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে আলিমুদ্দিনকে স্পষ্ট বার্তায় জানিয়েছে, বিরোধী জোটের প্রার্থী যশবন্তের বিরুদ্ধে কেউ যেন বিরূপ মন্তব্য না করেন। কার্যত বিষয়টি নিয়ে তাঁদের মুখে কুলুপ আঁটতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য যশবন্ত সিনহা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি পদে ছিলেন। সেখান থেকে ইস্তফা দিয়ে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা দিল্লির বৈঠকে বিজেপি বিরোধী অন্যান্য দলের পাশাপাশি ছিলেন সিপিএমের প্রতিনিধিও। সেখানে সিপিএমের প্রতিনিধি কেন উপস্থিত ছিলেন তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আলিমুদ্দিন। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানান বঙ্গ সিপিএমের একাধিক নেতা। এরপরই কেন্দ্রীয় কমিটি আলিমুদ্দিনকে জানিয়ে দেয় যশবন্তের বিরুদ্ধে কেউ যেন মুখ না খোলেন। এ সম্পর্কে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর সাবধানী প্রতিক্রিয়া,” কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই নিয়ে আমাদের মন্তব্য করা উচিত নয়৷”
গত ১৬ জুন দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে বিরোধী জোটের বৈঠক ডাকেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সীতারাম ইয়েচুরি তখন মমতাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন যে সিপিএমের তরফে প্রতিনিধি অবশ্যই উপস্থিত থাকবেন বৈঠকে। আর সেই বিষয়টি নিয়েই ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করে আলিমুদ্দিন। কেন তাঁদের সঙ্গে আগে কথা না বলে ইয়েচুরি এমনটা জানিয়েছিলেন মমতাকে, সেই প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। উল্লেখ্য সেই বৈঠকে সিপিএমের তরফে ই করিম উপস্থিত ছিলেন। তিনি রাজ্যসভায় সিপিএমের দলনেতা। আর সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছেন যেহেতু যশবন্ত তৃণমূল ছেড়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন, তাই তাঁকে সমর্থন করতে অসুবিধা থাকার কথা নয়। কংগ্রেস-সহ বেশিরভাগ বিরোধী দল সমর্থন করছে তাঁকে। এই পরিস্থিতিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি আলিমুদ্দিনকে নির্দেশে স্পষ্ট জানিয়েছে, নির্দল প্রার্থী হিসেবে যশবন্ত সিনহাকে সমর্থন করছে দল। তাঁর বিরুদ্ধে কেউ যেন মুখ না খোলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও যশবন্তকে নিয়ে অস্বস্তি যাচ্ছে না বঙ্গ সিপিএমের। সাম্প্রতিককালে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম কিছুটা হলেও মাথা তোলার চেষ্টা করছে। দলের প্রধান লক্ষ্য বিজেপিকে সরিয়ে প্রধান বিরোধী দলের তকমা পাওয়া। ইতিমধ্যেই তৃণমূলের ডাকা বৈঠকে সিপিএম উপস্থিত থাকায় বিজেপি তা নিয়ে কটাক্ষ করা শুরু করে দিয়েছে। বাধ্য হয়ে সেই কটাক্ষ হজম করতে বাধ্য হচ্ছে সিপিএম। এতে প্রবল তৃণমূল বিরোধীরা সিপিএমকে ছেড়ে বিজেপিকেই বেছে নেবেন বলে মনে করছেন বঙ্গ সিপিএম নেতৃত্ব। তাই সব মিলিয়ে এটা পরিষ্কার বিরোধী জোট সার্বিকভাবে কতটা গড়ে উঠবে তা বলা কঠিন। অন্তত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেভাবে ঘটা করে বিরোধী জোট হয়েছিল তা যে শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছে সেটা প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিচ্ছেন বিজেপি বিরোধী নেতা-নেত্রীরা।