নিজস্ব প্রতিনিধি: করুণাময়ীর ঘটনায় নড়েচড়ে বসল রাজ্য মহিলা কমিশন। বহুদিন পর কমিশনকে একটু অন্যরকম ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে করুণাময়ী চত্বর থেকে অনশনরত মহিলা চাকরিপ্রার্থীদের পুলিশ বলপূর্বক সরিয়ে দিয়েছিল বলে অভিযোগ। যে ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। এবার বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট তলব করল রাজ্য মহিলা কমিশন। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটকে সেদিনের ঘটনা নিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলেছে মহিলা কমিশন। রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরের ভিত্তিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই তাঁরা এই পদক্ষেপ করেছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
চাকরির দাবিতে করুণাময়ীতে অনশন আন্দোলন করছিলেন বহু চাকরিপ্রার্থী। ছিলেন বহু মহিলাও। এরপর বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক টেট বিক্ষোভকারীদের অনশন পুলিশ জোর করে তুলে দেওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকজন মহিলা চাকরিপ্রার্থীকে থানায় নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। এমনকী বেশ কয়েক জন মহিলাকে টেনে হিচড়ে পুলিশ ভ্যানে তোলার অভিযোগ উঠেছে। আর সেই বিষয়টি নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। নিয়ম অনুযায়ী সন্ধ্যার পর কোনও মহিলাকে আটক করা যায় না। তাহলে কেন তাঁদের সেদিন থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল অত রাতে, সেই প্রশ্ন তুলেছে রাজ্য মহিলা কমিশন। শুধু তাই নয়, সেদিনের ঘটনা যে সমস্ত সংবাদপত্রে ছবি-সহ প্রকাশিত হয়েছিল বা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ফুটেজ হিসেবে দেখানো হয়েছিল, সেগুলিও প্রমাণ হিসেবে রাজ্য মহিলা কমিশনের পক্ষ থেকে দাখিল করা হয়েছে।
করুণাময়ী চত্বরে ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীরা অনশনে বসেন চাকরির দাবিতে। যদিও আদালত জানায় ওই স্থানে ১৪৪ ধারা জারি আছে বলে অনির্দিষ্টকাল অবস্থান করা যাবে না। এরপরই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশ মাইকিং করে আন্দোলনকারীদের সেখান থেকে উঠে যেতে বলে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। এরপর মধ্যরাতে পুলিশ জোর করে তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। অভিযোগ মহিলাপ্রার্থীদের উপর পুলিশ নির্যাতন করেছে। আর সেই বিষয়টি নিয়েই এবার রাজ্য মহিলা কমিশন চিঠি পাঠিয়ে পুলিশের ওই পদক্ষেপের ব্যাখ্যা চেয়েছে বিধাননগর কমিশনারেটের কাছে।
তবে ঘটনা হল অতীতে এরকম পরিস্থিতি তৈরি হলেও রাজ্য মহিলা কমিশন তাদের সদর্থক ভূমিকা পালন করেনি বলে অভিযোগ করছে বিরোধীরা। বহু সময় এমন অভিযোগ উঠেছে যেখানে মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনায় শাসকদলের নাম জড়িয়ে পড়েছে, অথচ সেখানে রাজ্য মহিলা কমিশনকে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি বলে দাবি করেছে বিরোধীরা। রাজ্য মহিলা কমিশন আদৌ রয়েছে কিনা সেটা নিয়েও বহুবার প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। কিন্তু করুণাময়ী কাণ্ডে দেখা গেল মহিলা কমিশন নিজেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিধাননগর কমিশনারেটকে চিঠি দিয়ে সেদিনের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ চেয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, যেভাবে বিষয়টি নিয়ে রাজ্যজুড়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সুশীল সমাজের একাংশ সরাসরি এর প্রতিবাদ করেছে, তাতে মহিলা কমিশন নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ কি রিপোর্ট দেয়, আর তা কতটা সন্তুষ্ট করে মহিলা কমিশনকে, তার ভিত্তিতে মহিলা কমিশন নতুন করে কোনও পদক্ষেপ করে কিনা, এখন সেটাই দেখার।