নিজস্ব প্রতিনিধি: বছরের বারোটি মাসের মধ্যে রাজ্য রাজনীতিতে বহুদিন ধরেই শুধুই শোনা যাচ্ছে ডিসেম্বরের কথা। সৌজন্যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ডিসেম্বরে এমন কিছু কাণ্ড ঘটবে যাতে চরম সমস্যায় পড়বে তৃণমূল। এমন দাবি দিনের পর দিন করে চলেছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। তবে কি যত কাণ্ড ডিসেম্বরে? এই চর্চা বহুদিন ধরেই শুরু হয়েছে।
ডিসেম্বরে হয় তৃণমূল সরকার পড়ে যাবে, নয়ত এমন কিছু ঘটবে যাতে চরম অস্বস্তির মধ্যে পড়বে রাজ্য প্রশাসন, বিজেপি নেতাদের কথাবার্তায় এমন একটা আবহ তৈরি হয়েছে। আর এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে তৃণমূল কিছুটা হলেও তা নিয়ে ভীত হয়ে পড়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে জোর চর্চাও শুরু হয়েছে। কিছুদিন আগেই নদিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বলতে শোনা গিয়েছে, ডিসেম্বরে বাংলায় অশান্তি হতে পারে। সেই সূত্রে রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনকে সতর্ক করেছেন তিনি। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় নজর রাখার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেদিন প্রশাসনিক বৈঠক চলার সময় রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্যের সঙ্গে কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী। নদিয়া জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা জানতে চান তাঁর কাছে। সেইসঙ্গে নাম না করে বিজেপিকে নিশানা করে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ডিসেম্বর থেকে ধামাকা হবে! সেই সঙ্গে পুলিশের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ভিআইপি গাড়িতে করে যাতে রাজ্যে অস্ত্র না ঢোকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সেই লক্ষ্যে বাড়াতে হবে নাকা চেকিং। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে বারবার ডিসেম্বর মাসের কথা কেন উঠে আসছে? সত্যিই কি বছরের শেষ মাসে কিছু ঘটতে পারে? যেভাবে শুভেন্দু একথা বলে চলেছেন তাতে কিছু একটা ঘটবে এমনটা অনেকেই মনে করছেন।
প্রথমে শুভেন্দু যা বলেছিলেন তাতে সবাই মনে করেছিল ডিসেম্বরে হয়ত সরকার পড়ে যাবে। এরপর নাম না করে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতাকে নিশানায় রেখে বললেন ডিসেম্বরে ‘বড় চোর’ ধরা পড়বে। সম্প্রতি ডিসেম্বর মাসের তিনটি তারিখের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। কিন্তু তার সঙ্গে তৃণমূলের সমস্যায় পরার যে কোনও যোগ নেই, সেটা স্পষ্ট। এখন আবার বলছেন জানুয়ারির কথা। ডিসেম্বরের বেতন জানুয়ারিতে রাজ্য সরকার দিতে না পারলে এমন অস্থিরতা তৈরি হবে যাতে তৃণমূল আর সরকার চালাতে পারবে না। এমনটাই কি বলতে চাইছেন শুভেন্দু? এছাড়া সূত্রের খবর আগামী দিনে রাজ্য পুলিশের বেশ কয়েকজন শীর্ষ আধিকারিককে দিল্লিতে তলব করা হবে দুর্নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। তবে কি সেটা নিয়েও শুভেন্দু রাজ্য সরকারকে নিশানা করতে চাইছেন? কিন্তু প্রশ্ন একটাই, শুভেন্দু এত কিছু বলার পর যদি সত্যিই তেমন কিছু না ঘটে, তাহলে রাজ্য রাজনীতিতে তাঁর যে মুখ পুড়বে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁর যে অসম্ভব ‘ফেস লস’ হবে সেটা ভাল করেই বোঝেন শুভেন্দু। কিন্তু তবু তিনি ধারাবাহিক ভাবে ডিসেম্বর মাসের কথা নিজের বক্তব্যে তুলে ধরতে পিছপা হচ্ছেন না। কিসের ভিত্তিতে তিনি এমন দাবি করে চলেছেন সেটা একমাত্র তিনিই জানেন। ডিসেম্বর মাসের প্রায় মাঝামাঝি হয়ে এল। তাই আগামী দিনে সত্যিই কিছু ঘটে কিনা সেদিকেই চোখ থাকবে সবার।