Aajbikel

কে কত বড় ভক্ত, তৃণমূলে চলছে প্রতিযোগিতা? নেত্রীর কাছে নিজের নম্বর বাড়াতেই কি ‘মমতা-স্তুতি’?

 | 
মমতা-পোস্টার

নিজস্ব প্রতিনিধি: কে কাকে কতটা ছাপিয়ে যেতে পারেন সেই প্রতিযোগিতা চলছে। এ হচ্ছে নিজেদের টিআরপি বাড়িয়ে নেওয়ার খেলা। দলনেত্রীকে খুশি করতে গিয়ে একশ্রেণির তৃণমূল নেতারা যা বলছেন, তাতে বাংলায় তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিককালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুশি করার জন্য তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজি তাঁকে মা সারদার সঙ্গে তুলনা করেছেন। যে ঘটনায় তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এরপর বিষয়টি নিয়ে জনৈক ব্যক্তি আদালতের দ্বারস্থ পর্যন্ত হয়েছে। আর এর মধ্যেই বাগদার তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস মুখ্যমন্ত্রীকে রানি রাসমণির সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাই বিতর্ক অব্যাহত। এখন প্রশ্ন, দলীয় স্তরে পিছিয়ে পড়ার জন্যই কি মুখ্যমন্ত্রীকে খুশি করে নিজেদের নম্বর বাড়িয়ে নিতে চাইছেন তাঁরা? অন্তত বিরোধীদের অভিযোগ তেমনটাই।

স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা অব্যাহত। তৃণমূল বিধায়ক তথা চিকিৎসক নির্মল মাজি মিথ্যা তথ্য দিয়ে ইতিহাস বিকৃত করেছেন, এই অভিযোগে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। একটি ভিডিওতে মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে নির্মলকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘তিনিই মা সারদা, তিনিই ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল, সিস্টার নিবেদিতা, খড়ের দুর্গা। অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে তাঁর জন্ম, তাই মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু সবেতেই তিনি পাশে রয়েছেন।’’

ঠিক এরপরই সামনে এসেছে তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের বক্তব্য ঘিরেও তৈরি হয় বিতর্ক। তৃণমূল কর্মীদের এক সভায় বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে আমি রানি রাসমনির ছায়া খুঁজে পাচ্ছি। আগামী একশো বছর পরেও মানুষের স্মৃতির মণিকোঠায় থাকবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেমন রয়েছেন রানি রাসমণি।" এই বক্তব্যের পিছনে কি যুক্তি তুলে ধরেছেন তিনি? তাঁর কথায়, "রানি রাসমণি সমাজের পিছিয়ে পড়া, গরিব মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন রাসমনির মতই।"

স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীরা কটাক্ষ করেছেন তাঁকে। বনগাঁর বিজেপি নেতা দেবদাস মন্ডল কটাক্ষ করে বলেন, "তিনি বাগদা থেকে বিজেপির টিকিটে জিতে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। লাস্ট বেঞ্চে রয়েছেন। এখন সামনের বেঞ্চে যাওয়ার জন্য এসব কথা বলছেন।" তবে তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি গোপাল শেঠ দলের বিধায়ককেই সমর্থন করেছেন। এককাঠি উপরে গিয়ে তিনি বলেন, "আমাদের কাছে সব মনীষীর উপরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক কথাই বলেছেন বিশ্বজিৎ।"

সমালোচকরা বলছেন এমন ঘটনা তো বারবার ঘটছে। কেন দলনেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের নেতাকর্মীদের এ বিষয়ে সতর্ক করছেন না? নাকি সতর্ক করা হলেও তাঁরা শুনছেন না? উল্লেখ্য নির্মল মাজির ওই বক্তব্য সামনে আসার পরে রাজ্য তৃণমূলের সম্পাদক তথা দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বিষয়টির তীব্র নিন্দা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন ওই মন্তব্য নির্লজ্জ চাটুকারিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আসলে মমতা সম্পর্কে বিরোধী দলের কেউ যদি এমন কথা বলতেন তাহলে সেটা নিয়ে অতটা বিতর্ক তৈরি হতো না। অনেক সময় দেখা যায় বিরোধী দলের কেউ সম্মান বা শ্রদ্ধার সঙ্গে শাসক দলের নেতানেত্রী সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করছেন। ঠিক যেমনটা করতে দেখা গিয়েছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত অটল বিহারী বাজপেয়ীকে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারত যেভাবে পাকিস্তানকে দুরমুশ করেছিল তাতে তৎকালীন বিরোধী নেতা জনসংঘের অটল বিহারী বাজপেয়ী সংসদে দাঁড়িয়ে  প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে দেবী দুর্গার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। যেভাবে দৃঢ়তার সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ইন্দিরা, তাতেই তাঁর সম্পর্কে ওই প্রশংসা সূচক মন্তব্য করতে দ্বিধা করেননি বাজপেয়ী। কারণ সেটা ছিল দেশের সুরক্ষার প্রশ্ন। তাই স্বাভাবিকভাবেই মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে যেভাবে ঢালাও স্তুতি করছেন দলের নেতাকর্মীদের একাংশ, তাতে প্রশ্ন উঠছেই। এটা সকলেই জানেন তৃণমূল রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুনজরে না থাকলে দলে কোনও গুরুত্ব থাকে না। বর্তমানে নির্মল মাজি দলের মধ্যে বেশ কিছুটা কোণঠাসা হয়ে রয়েছেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যথারীতি দলের মধ্যে গুরুত্ব কমেছে তাঁর। আর বিশ্বজিৎ দাস বিজেপি থেকে তৃণমূলে এসে গুরুত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করছেন বলে অনেকেই মনে করছেন। আর সেই কারণেই কি মমতা সম্পর্কে তাঁদের এমন স্তুতি? এই প্রশ্নটা অবধারিতভাবে উঠছে। আগামী দিনে দলনেত্রী সম্পর্কে এমন প্রশংসা সূচক কথা আর কেউ বলেন কিনা এখন সেটাই দেখার।

Around The Web

Trending News

You May like