বছরের শেষে হতাশা কাটিয়ে কিছুটা হলেও চাঙ্গা বিরোধীরা! ২০২২-এ তৃণমূলের রাজনৈতিক প্রাপ্তি কী? দেখুন

বছরের শেষে হতাশা কাটিয়ে কিছুটা হলেও চাঙ্গা বিরোধীরা! ২০২২-এ তৃণমূলের রাজনৈতিক প্রাপ্তি কী? দেখুন

নিজস্ব প্রতিনিধি: আর মাত্র কয়েকটা দিন। শেষ হতে চলেছে ২০২২ সাল। সামনেই নতুন বছরের হাতছানি। ফেলে যাওয়া বছরে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে নানা ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক ক্ষেত্রের ঘটনাগুলি নিয়ে বছর ভর চর্চা অব্যাহত থেকেছে। আর সেই রাজনৈতিক চর্চার ভরকেন্দ্র ছিল তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন দুর্নীতির ইস্যু। বছর শুরু হয়েছে এই বিষয়গুলি নিয়ে, আর শেষও হতে চলেছে সেই দুর্নীতির অভিযোগ নিয়েই।

ফেলে যাওয়া বছরে কতটা প্রাপ্তি হল শাসক দল তৃণমূলের? এক অর্থে বলতে গেলে বলার মতো কিছু প্রাপ্তি যোগ ঘটেনি তৃণমূলের। ২০২১ তৃণমূলের কাছে বলার মতো একটি বছর গিয়েছে। যেভাবে তারা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিজেপিকে শোচনীয় ভাবে পরাজিত করে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা ধরে রেখেছে, তার জন্য যেন কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট ছিল না। কিন্তু চলতি বছরে তৃণমূলের সেই স্বস্তি দেখা যায়নি। উল্টে বছর যত এগিয়েছে ততই বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে মারাত্মক ভাবে বিদ্ধ হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।

ত্রিপুরায় পুরসভা ও বিধানসভা উপনির্বাচনের পর তৃণমূল সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়েছিল গোয়া নির্বাচনে। কিন্তু সেই নির্বাচনে তারা একেবারেই সুবিধা করতে পারেনি। যে বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে তৃণমূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল তার প্রায় প্রত্যেকটিতে  তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এরপর তৃণমূলের তৎকালীন মহাসচিব তথা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে যেভাবে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হয়, তাতে বেজায় অস্বস্তিতে পড়ে তৃণমূল। পার্থকে দল থেকে সাসপেন্ড করলেও সমস্যা মেটেনি। কারণ নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে একের পর এক নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের নেতা ও বিধায়কদের। ঘটনার জেরে তৃণমূল বাধ্য হয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পরেশ অধিকারীকে সরিয়ে দিতে। কারণ তাঁর মেয়ে অন্যায় ভাবে চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে এবং কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে চাকরি চলে যায় পরেশ কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীর। শুধু চাকরি যাওয়াই নয়, বেতন হিসেবে তিনি যে অর্থ পেয়েছিলেন সেটাও ফিরিয়ে দিতে হয়েছিল অঙ্কিতাকে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি তথা তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য-সহ এসএসসি’র একাধিক শীর্ষ কর্তা পর্যন্ত জেলে চলে গিয়েছেন নিয়োগ দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে। এখানেই শেষ নয়, গরু পাচার কাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগে এই বছরই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা গ্রেফতার করে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে। এখনও তিনি জেলে রয়েছেন। আর বছরের শেষ মাসের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের জন্য নাম তোলাকে কেন্দ্র করে জেলায় জেলায় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে লাগামছাড়া দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে নতুন করে। তৃণমূলের এক গোষ্ঠী অপর গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগ জানাচ্ছেন আবাস যোজনা দুর্নীতি নিয়ে। সব মিলিয়ে ২০২২ সাল তৃণমূলের পক্ষে একেবারেই স্বস্তিদায়ক নয়।

সেদিক দিয়ে বলতে গেলে শেষ হতে চলা বছরে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিজেপি তথা অন্যান্য বিরোধী দলগুলি। কারণ একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর পুরসভা নির্বাচনগুলিতে শোচনীয় পরাজয় হয়েছে বিরোধীদের। একের পর এক বিধানসভা এবং লোকসভার উপনির্বাচনে তৃণমূল রীতিমতো দুরমুশ করেছে বিরোধীদের। গতবছর বিজেপি তাদের জেতা  শান্তিপুর ও দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্র ধরে রাখতে পারেনি। বিজেপির ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেছেন। এছাড়া বিজেপি ছেড়েছেন মুকুল রায়-সহ বহু বিধায়ক ও নেতা। যে সমস্ত ঘটনায় অস্বস্তি বাড়ে বিজেপির। তবে তৃণমূল চলতি বছরে বিজেপির কাছ থেকে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রটি ছিনিয়ে নিতে পেরেছে।

এদিকে তৃণমূল বিরোধী অন্যতম দুই দল কংগ্রেস এবং তৃণমূল দিন দিন রাজ্যে ক্ষয়িষ্ণু হতে শুরু করে গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই। কিন্তু সার্বিকভাবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে চলতি বছরে যখন দুর্নীতির অভিযোগ অনেক বেশি প্রকট হয়ে ওঠে, তখন থেকেই বিরোধীরা আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। এতদিন বিরোধীরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ করে আসছিলেন তা তখন অনেকটাই মান্যতা পেয়ে যায়। সবচেয়ে বড় কথা কলকাতা হাইকোর্ট বিভিন্ন দুর্নীতির ঘটনা নিয়ে যে সমস্ত কড়া পর্যবেক্ষণ শুনিয়েছে তাতে তৃণমূলের অস্বস্তি আরও বাড়ে। তৃণমূলের প্রবীণ নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় পর্যন্ত প্রকাশ্যে স্বীকার করে নিয়েছেন যে তৃণমূলেও প্রচুর দুর্নীতিগ্রস্ত লোক রয়েছেন। দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি তৃণমূল একেবারেই স্বস্তিতে নেই ডিএ মামলা নিয়ে। বর্তমানে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। তৃণমূল ভাল করেই জানে যদি রাজ্য  সরকারের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালত রায় দেয়, তখন সেই নির্দেশ কার্যকর করা তাদের কাছে এক প্রকার অসম্ভব হয়ে উঠবে। কারণ এই মুহূর্তে রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থা একেবারেই ভাল নয়। সব মিলিয়ে ২০২২ সাল তৃণমূলের পক্ষে অনুকূলে ছিল না সেকথা বলাই যায়। এই পরিস্থিতিতে নতুন বছরে তৃণমূলকে পঞ্চায়েত ভোটে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাই নতুন বছরে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলি সবার নজর কাড়ে  এখন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *