Aajbikel

উপনির্বাচন ঘিরে সরগরম ত্রিপুরা, বিজেপিকে কতটা টক্কর দেবে বিরোধীরা?

 | 
ভোট

নিজস্ব প্রতিনিধি: আগামী বছর ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে চলতি মাসের ২৩ তারিখ ত্রিপুরায় চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন হবে। যাকে সেমিফাইনাল হিসেবেই দেখা হচ্ছে। আগরতলা, টাউন বরদোয়ালি, সুরমা ও যুবরাজনগর কেন্দ্রে উপনির্বাচন  হবে। এর মধ্যে আগরতলা ও টাউন বরদোয়ালি কেন্দ্র বিজেপির কাছে রীতিমতো প্রেস্টিজ ফাইট হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। কারণ টাউন বরদোয়ালি কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী খোদ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। তাঁর সঙ্গে মূল লড়াই হতে চলেছে বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে ফিরে আসা আশিস কুমার সাহার।

একই ভাবে বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে ফিরেছেন রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মনও। তাঁকে আগরতলায় প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। সেখানেও কঠিন লড়াই বিজেপির। সেখানে বিজেপির প্রার্থী রাজ্যের সহ-সভাপতি অশোক সিনহা। উল্লেখ্য সুদীপ রায় বর্মন এবং আশিস কুমার সাহা টানা পাঁচবারের বিধায়ক। তাই এই দুটি কেন্দ্রে জোর লড়াই চলছে। দুটি আসনেই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী কংগ্রেস। আর প্রত্যাশিতভাবেই চারটি কেন্দ্রেই প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম এবং তৃণমূল। তৃণমূলের পান্না দেব আগরতলা, সংহিতা বন্দ্যোপাধ্যায় টাউন বরদোয়ালি, অর্জুন নমশূদ্র সুরমা ও ড. মৃণাল কান্তি দেবনাথ যুবরাজনগর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন। অন্যদিকে সিপিএমের কৃষ্ণ মজুমদার আগরতলা, অঞ্জন দাস সুরমা, শৈলেন্দ্র নাথ যুবরাজনগর ও রঘুনাথ সরকার (ফরওয়ার্ড ব্লক) টাউন বরদোয়ালি কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছে। আর বিজেপির বাকি দুই প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন যুবরাজনগর কেন্দ্রে মলিনা দেবনাথ ও সুরমা কেন্দ্রে স্বপন দাস পাল। কংগ্রেস সুরমা কেন্দ্রে প্রার্থী দেয়নি। সেখানে তারা সমর্থন করছে প্রদ্যোৎ কিশোর মানিক্য বর্মনের তিপ্রা মোথা দলকে।

পশ্চিমবঙ্গে গত বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর যে রাজ্যগুলিকে পাখির চোখ করেছে তৃণমূল তার মধ্যে অন্যতম ত্রিপুরা। গতবছর ত্রিপুরায় পুরসভার নির্বাচনে তৃণমূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কুড়ি শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল। একটি ওয়ার্ডে তারা জয়ও পায়। যা আশা জাগাচ্ছে তৃণমূলকে। ত্রিপুরার দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, চারটি আসনেই ভাল ফল হবে তাঁদের। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, এই ফলাফল প্রমাণ করবে ত্রিপুরার মাটিতে তৃণমূলই প্রধান শক্তি। যদিও বিরোধীদের গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপি। বিষয়টি নিয়ে বিজেপির কটাক্ষ, বিরোধীরা দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানের জন্য নিজেদের মধ্যে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

তবে বিজেপি মুখে যতই এ কথা বলুক না কেন, অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা তারা উড়িয়ে দিতে পারছে না। মাসখানেক আগে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী পদে বদল হয়েছে। বিপ্লব কুমার দেবকে সরিয়ে নতুন মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছে ড. মানিক সাহাকে। কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের এই পদক্ষেপে বিপ্লব ও তাঁর অনুগামীরা যে একেবারেই খুশি নন, তা স্পষ্ট। মুখ্যমন্ত্রী পদে মানিক সাহার শপথের আগেই সেটা প্রকট হয়েছে। প্রকাশ্যে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বিজেপির একাধিক বিধায়ক, মন্ত্রীদের পাশাপাশি দলের কর্মী সমর্থকরা। সেই জায়গা থেকে চারটি কেন্দ্রের উপনির্বাচনের সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ও তাঁর অনুগামীরা কি ভূমিকা পালন করবেন তা নিয়ে কিছুটা হলেও চিন্তায় রয়েছে গেরুয়া শিবির। চারটি উপনির্বাচনে বিজেপির ফল খারাপ হলে বিপ্লব অনুগামীরা নিশ্চিতভাবে বলবেন বিধানসভা নির্বাচনের এক বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী পদে পরিবর্তন করাটা কত বড় ভুল হয়েছিল। সেই জায়গা থেকে শাসক দল বিজেপির চিন্তা থাকছেই। এছাড়া স্থানীয় নির্বাচনে তিপ্রা মোথা এর আগে ভাল ফল করেছে। সুরমা কেন্দ্রে বিজেপির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী তারাই। সেখানে বিজেপি হেরে গেলে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ত্রিপুরায় নিঃসন্দেহে নতুন সমীকরণ তৈরি হবে। সবমিলিয়ে ত্রিপুরা উপনির্বাচনের দিকে যথেষ্ট নজর রয়েছে রাজনৈতিক মহলের। আর এই উপনির্বাচনে তৃণমূলের ফল খারাপ হলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিপুরায় তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্নচিহ্ন উঠে যাবে। এই পরিস্থিতিতে টানটান উত্তেজনায় চতুর্মুখী লড়াই দেখতে চলেছেন ত্রিপুরাবাসী।

Around The Web

Trending News

You May like