নিজস্ব প্রতিনিধি: আর মাত্র কয়েকটা মাস। তারপরেই এসে যাবে পঞ্চায়েত নির্বাচন। গ্রাম বাংলায় স্বাধীন সরকার তৈরির লড়াইয়ে নামবে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল। বলাবাহুল্য এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও হট ফেভারিট হয়ে ময়দানে নামবে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। কারণ বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল সাফল্যের পর একের পর এক নির্বাচনে তৃণমূল দুর্দান্ত ফল করেছে। লোকসভা বা বিধানসভা, বিজেপির জেতা আসন ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। আর পুরসভা নির্বাচনগুলিতে তৃণমূল শুধু জেতাই নয়, তারা একচ্ছত্র আধিপত্য দেখিয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও তৃণমূল মনে করছে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাদের এবার কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে। সেখানে প্রধান তিন প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি, সিপিএম বা কংগ্রেস তো রয়েছেই, এছাড়া ছায়া প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তৃণমূলকে লড়তে হবে তাদের একাংশের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ আর জেলায় জেলায় লাগাম ছাড়া গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে রীতিমতো অশনি সংকেত দেখছে রাজ্যের শাসক দল।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি থেকে কয়লা পাচার, গরু পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে তৃণমূলের একাংশের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেগুলিকে ছাপিয়ে সবচেয়ে বড় আকার নিয়েছে আবাস যোজনা প্রকল্পকে নিয়ে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ। জেলায় জেলায় তৃণমূল নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তাঁদের খুশি করতে না পারলে নাকি গরিব মানুষ ঘর পাবেন না। শুধু তাই নয়, শাসক দলের একশ্রেণির নেতা-নেত্রীর বড় বাড়ি, মোটরসাইকেল বা গাড়ি, প্রচুর ধান জমি, সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও তাঁদের নাম আবাস যোজনার তালিকায় রয়েছে বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে বহুদিন ধরেই। উল্লেখ্য আবাস যোজনার টাকা কেন্দ্র বহুদিন আটকে রেখেছিল। মাসখানেক আগে কড়া শর্তের বিনিময়ে সেটি আবার চালু করা হয়েছে।
নবান্নকে এই মর্মে বার্তা দেওয়া হয়েছে যে সামান্যতম অনিয়মের খবর পাওয়া গেলে টাকা দেওয়া আবার বন্ধ হয়ে যাবে। তাই রাজ্য সরকার প্রত্যেকটি জেলা প্রশাসনকে সেটি জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। নানা মহল থেকে তাঁদের উপর চাপ আসছে বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীদের একটা অংশ যে কোনও ভাবে তাঁদের নাম আবাস যোজনা প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছেন। অথচ নাম অন্তর্ভুক্ত হতে গেলে যে সমস্ত শর্ত পূরণ করতে হবে সেগুলি তাঁদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হচ্ছে না। তাই তৃণমূলের আশঙ্কা গ্রামবাসীদের সেই ক্ষোভ পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোটবাক্সে পড়তে পারে। এছাড়া দলের মধ্যে লাগাম ছাড়া গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে। সদ্য মুর্শিদাবাদের এক তৃণমূল নেতা অভিযোগ করেছেন পঞ্চায়েতে টিকিট দেওয়ার জন্য জেলা নেতৃত্বের কেউ কেউ ১-২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দাবি করছেন। রাজনৈতিক মহল মনে করছে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসবে এই জাতীয় সমস্যা আরও বাড়বে। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়গুলি নিয়ে চিন্তায় পড়েছে শাসক দল। এই জাতীয় সমস্যাগুলি তৃণমূলের অদৃশ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে। যেগুলিকে কাজে লাগাতে চাইছে বিরোধীরা। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলকে বিরোধীরা যে কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে ফেলবে সেটা বলাই যায়।