তৃণমূলে থাকাকালীন শুভেন্দু দুর্নীতি করে থাকলে কেন চুপ ছিল দল? শাসক দল কি দুর্নীতির বিষয়ে কিছুই জানত না?

তৃণমূলে থাকাকালীন শুভেন্দু দুর্নীতি করে থাকলে কেন চুপ ছিল দল? শাসক দল কি দুর্নীতির বিষয়ে কিছুই জানত না?

নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্য রাজনীতিতে এখন সবচেয়ে বড় ইস্যু দুর্নীতি। শাসক বা বিরোধী, একে অপরের বিরুদ্ধে নিয়মিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলতে দেখা যাচ্ছে তাদের। একাধিক ইস্যুতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বারবার আক্রমণ করছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। একই ভাবে অভিষেকও কিন্তু শুভেন্দুকে দুর্নীতির অভিযোগে নিশানা করতে ছাড়ছেন না। সদ্য কাঁথির সভায় অভিষেক দাবি করেছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বহু জায়গায় অনেককেই নাকি অতীতে পঞ্চায়েত প্রধান হওয়ার জন্য ২৫ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা দিতে হয়েছে। তাঁর নিশানায় যে রয়েছেন শুভেন্দুই, সেটা স্পষ্ট। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ”এগুলি যদি অক্টোপাসের শুড় হয় তবে, অক্টোপাসের মাথাটা ২০০ মিটার দূরে বসে আছে। আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব। সকলের নামের তালিকা আমার কাছে আছে। ওনার কাছে খালি চুরির খবর আছে। কোন রাস্তায় কবে কত টাকা চুরি হয়েছে সব ওঁর মুখস্থ। কারণ উনি এসবের মাথা।” এখন প্রশ্ন হল অভিষেকের যাবতীয় অভিযোগ যদি সত্যি বলে ধরে নেওয়াও হয়, তাহলে শুভেন্দু তৃণমূলে থাকাকালীন এই বিষয়গুলি তিনি সামনে আনেননি কেন? তৃণমূলে ছিলেন বলেই শুভেন্দু দুর্নীতি করছেন জেনেও কী চুপ ছিল দল? তবে কি ধরে নিতে হবে শাসক দলে থাকলেই সাত খুন মাফ? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই তুলছে ওয়াকিবহাল মহল।

প্রশ্ন আরও রয়েছে। আর সেটা থাকাই স্বাভাবিক। রাজনৈতিক মহল এটাই জানতে চায় যে, আগামী দিনে তৃণমূলের কোনও নেতানেত্রী যদি অন্য কোনও দলে যোগদান করেন, তখন কি তাঁদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করবে? রাতারাতি তাঁরা অভিযুক্ত হয়ে যাবেন? ঠিক এই জায়গা থেকে রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, শাসক বা বিরোধী প্রত্যেকটি দলেরই উচিত শুদ্ধিকরণের পথে হাঁটা। তাঁদের দলেই সত্যিই দুর্নীতি রয়েছে কিনা সেটা খুঁজে বের করা। কিন্তু কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, কোনও নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে তাঁর পাশেই দাঁড়ানো হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা বলা হয় না যে, সংশ্লিষ্ট নেতার বিরুদ্ধে দল তদন্ত করে দেখবে সত্যিই তিনি দোষী কিনা। এই ধারার রাজনীতি এখন উধাও পশ্চিমবঙ্গে। সেখানে শুধুই যেন দলীয় নেতাদের ওজন বুঝে তাঁদের আড়াল করার চেষ্টা। তিনি যদি প্রবল প্রভাবশালী হন, ব্যাপক সাংগঠনিক দক্ষতা থাকে, মিটিং মিছিলে প্রচুর লোক জড়ো করার ক্ষমতা থাকে, তখন সেই নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এলেও রাজনৈতিক দলগুলি সাধারণত চুপ করে থাকে। তাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এখন যেভাবে নাম না করে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন, তাতে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হবে এটাই স্বাভাবিক।

দীর্ঘদিন তৃণমূলে থাকার সময় শুভেন্দু যদি সত্যিই কোনও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে থাকেন, তখন অভিষেক তথা তৃণমূলের উচিত ছিল তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিশন বসানো। কিন্তু সেসব কিছুই তো হয়নি। তবে বঙ্গ রাজনীতির অতীতে ফিরে গেলে এমন ঘটনা দেখা যাবে যেখানে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নিজের মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন কমিশন গঠন করে। সত্তরের দশকে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় স্বচ্ছতা প্রমাণের জন্য নিজের মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে তার সত্যতা যাচাই করতে বিচারপতি ওয়াংচু’র নেতৃত্বে কমিশন গঠন করেছিলেন। যে ঘটনা ঘিরে সেই সময় শোরগোল পড়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীকালে কোনও মুখ্যমন্ত্রীর এমন বলিষ্ঠ পদক্ষেপ পশ্চিমবঙ্গে দেখা যায়নি। তাই বিভিন্ন দলের নেতা-নেত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং সেগুলি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দলের ব্যবস্থা নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven − five =