নিজস্ব প্রতিনিধি: একটা অরাজনৈতিক আন্দোলন বা মঞ্চ সরকারকে কতটা কাঁপিয়ে দিতে পারে ফের তা প্রত্যক্ষ করল বাংলা তথা গোটা দেশ। আমরা পথে-ঘাটে অনেক সময় ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ভাবে অনেক আন্দোলনকারীকে দেখে থাকি। যদিও আমরা তা নিয়ে গা ঘামাই না। সবার ভাবখানা থাকে এরকম তো কতই হয়। ঠিক এভাবেই একদিন শুরু হয়েছিল শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন। এক বছরের বেশি সময় ধরে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান বিক্ষোভ করে গিয়েছেন তাঁরা। আর তার ফল কতটা মিলেছে সে কথা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর তৃণমূল সরকার যে কতটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কেন্দ্রীয় সরকারের বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে দিল্লি সীমান্তে এক বছর ধরে অরাজনৈতিক মঞ্চের মাধ্যমে আন্দোলন করে গিয়েছেন কৃষকরা। একটা সময় আন্দোলনের চাপে কেন্দ্রকে পিছু হটতে হয়। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই কৃষি আন্দোলনের সঙ্গে ওয়াকিবহাল মহল শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে আন্দোলনের মিল খুঁজে পাচ্ছে। লাগাতার আন্দোলনের চাপে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই এবং ইডি তদন্ত শুরু করার পর থেকেই একের পর এক কেলেঙ্কারি সামনে আসছে। এ যেন পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মত ব্যাপার! ঘটনা প্রবাহ যত এগোবে ততই নিত্য নতুন তথ্য সামনে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারী যে স্কুলে চাকরি পেয়েছিলেন সেই স্কুলে আসলে চাকরির দাবিদার ছিলেন ববিতা সরকার। কারণ যোগ্যতার বিচারে ববিতার থেকে অনেকটা পিছিয়ে থেকেও চাকরি পেয়ে গিয়েছিলেন অঙ্কিতা অধিকারী। সবচেয়ে বড় কথা পার্সোনালিটি টেস্টে না বসেও চাকরি পেয়েছিলেন মন্ত্রী-কন্যা। পরবর্তীকালে আদালতের নির্দেশে উল্টে যায় পাশার দান। একই ভাবে ববিতা সরকারের মতো অদম্য লড়াই করে গিয়েছেন নলহাটির সোমা দাস। ক্যানসার আক্রান্ত সোমা দাস এই আপসহীন আন্দোলনে অন্যতম প্রধান চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন। অবশেষে আদালতের নির্দেশে তিনি চাকরিতে যোগদান করেছেন। আসলে এক বছরের বেশি সময় ধরে সোমার মতো বহু চাকরিপ্রার্থী কলকাতা রাজপথের ধারে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান বিক্ষোভ করে চলেছেন। উল্লেখ্য প্রথমে নিয়োগ পত্র নিতে রাজি হননি সোমা। তাঁর দাবি ছিল প্রকৃত যোগ্য যারা তাঁদের সবাইকে চাকরি দিতে হবে। যদিও পরে কমিশনের দেওয়া নিয়োগপত্র গ্রহণ করেছেন তিনি। আর চাকরি পাওয়ার পরেও তিনি আন্দোলন স্থলে ছুটে গিয়েছেন আন্দোলনকারীদের সাহস জোগাতে। সোমার কথায়, “চার বছর পরে প্রাপ্য চাকরি পেয়েছি। নিয়মিত স্কুলে আসব। কিন্তু অবসরকালীন সময় কলকাতায় আন্দোলনকারীদের পাশে থাকব।” শুধু সোমা বা ববিতা নন, এরকম শ’য়ে শ’য়ে চাকরিপ্রার্থী লাগাতার আন্দোলন করছেন নিজেদের প্রাপ্য আদায়ের জন্য। এই আন্দোলন ফের প্রমাণ করল যে কোনও কাজে সততা আর নিষ্ঠা থাকলে ফল মিলবেই। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে নতুন করে কোন রাঘববোয়ালের সন্ধান পাওয়া যায়, সেদিকেই চোখ থাকবে সবার।