আম আদমি পার্টি বিভিন্ন রাজ্যে সংগঠন বাড়ালেও তৃণমূল পারল না কেন?

আম আদমি পার্টি বিভিন্ন রাজ্যে সংগঠন বাড়ালেও তৃণমূল পারল না কেন?

নিজস্ব প্রতিনিধি: একুশের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে রীতিমতো ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বিজেপিকে বোল্ড আউট করে দিয়েছিল তৃণমূল। আর তারপর থেকেই দেশজুড়ে তৃণমূল এই প্রেক্ষাপট তৈরির চেষ্টা করে যে, বিজেপিকে রুখতে পারে একমাত্র তারাই। সেই সময় দেখা যায় ত্রিপুরা, গোয়া, অসম, মণিপুর, মেঘালয়, হরিয়ানা, এমনকী উত্তরপ্রদেশেও সংগঠন বাড়ানোর চেষ্টা করেছে তৃণমূল। তবে সবচেয়ে বেশি তারা জোর দিয়েছিল গোয়া এবং ত্রিপুরায়।

গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল যথেষ্ট ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামে। কিন্তু নির্বাচনে তারা একেবারেই সুবিধা করতে পারেনি। এরপর ত্রিপুরার পুরভোটে কিছুটা নজর কাড়লেও পরবর্তীকালে সেখানকার একাধিক বিধানসভার উপনির্বাচনে তৃণমূল নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তারা আগেই দেখা গিয়েছে হরিয়ানায় তৃণমূলের প্রধান হয়ে যিনি পার্টি অফিস খুলেছিলেন, সেই অশোক তানওয়ার রাতারাতি আম আদমি পার্টিতে যোগদান করেছেন। মেঘালয়ে কংগ্রেসের ১২ জন বিধায়ক দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করায় সে রাজ্যে রাতারাতি তারা বিরোধী দলের মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু সাংগঠনিক শক্তি তারা কোথাও বাড়াতে পারেনি। কিন্তু উল্টো দিকে দেখা যাচ্ছে আম আদমি পার্টি একের পর এক রাজ্যে পা ফেলছে, এবং নির্বাচনে যথেষ্ট নজর কাড়ছে। দিল্লি, পাঞ্জাবের পর অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল যথেষ্ট সাড়া ফেলে দিয়েছে গোয়ার পর গুজরাটেও।

এর একটাই কারণ, তারা সরাসরি রাজ্যগুলিতে গিয়ে সংগঠন বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু তৃণমূল সেটা করেনি। তৃণমূল অন্যান্য রাজ্যে গিয়ে মূলত কংগ্রেসকে ভাঙিয়ে নিজেদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। এর ফলে কংগ্রেসের বিধায়ক বা রাজ্য নেতারা হয়ত দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেছেন, কিন্তু তাতে সাংগঠনিক ভাবে তৃণমূলের লাভ হয়নি। খাতায়-কলমে রাজ্যগুলিতে তৃণমূলের প্রসার ঘটলেও বাস্তব অন্য কথাই বলেছে। একই কথা প্রযোজ্য মেঘালয়ের ক্ষেত্রেও। রাতারাতি কংগ্রেসের বিধায়কদের বড় অংশ তৃণমূলে যোগদান করা মানেই এই নয় যে সে রাজ্যের বিরোধী ভোটের পুরোটাই তৃণমূলের দিকে চলে যাবে। ঠিক এই কারণেই রাজ্যগুলিতে পা রাখার পর তৃণমূল যথেষ্ট সাড়া ফেলে দিলেও কয়েক মাসের মধ্যেই তাদের সেখান থেকে পাততাড়ি গোটানোর মতো অবস্থা হয়েছে। তাই খাতায়-কলমে তৃণমূল সর্বভারতীয় দল হলেও তাদের পশ্চিমবঙ্গের মধ্যেই আটকে থাকতে হয়েছে।

সেখানে অরবিন্দ কেজরিওয়াল পুরো বিষয়টি অন্যভাবে ভেবেছেন। তিনি একের পর এক রাজ্যে পা ফেলে বুথ ভিত্তিক সংগঠন তৈরির চেষ্টা করছেন। যেভাবে দিল্লির উদাহরণ তুলে ধরে পাঞ্জাব দখল করেছেন, একই ভাবে দলের বিস্তার ঘটানোর চেষ্টা করছেন। সেখানে রাতারাতি হয়ত বিভিন্ন দলের বিধায়ক বা সাংসদরা আম আদমি পার্টিতে যোগদান করছেন না, কিন্তু সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছে দল। আর নির্বাচনে জিততে গেলে সেটাই প্রয়োজন। ঠিক এই কারণে গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টিকে যথেষ্ট সমীহ করছে কংগ্রেস এবং বিজেপি দু’পক্ষই। তাই এটা স্পষ্ট শুধুমাত্র চিন্তাধারার পার্থক্যের জন্যেই আজ দেশের একটা বড় অংশে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টি যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *