নিজস্ব প্রতিনিধি: জল নেই, বাড়ি নেই, হাতে টাকা নেই। রোজ দু’বেলা আহার জোটাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন ওঁরা। ওঁরা যেন সেই নেই রাজ্যের বাসিন্দা। আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাছে পেয়ে এই সমস্ত বিষয় নিয়ে একরাশ ক্ষোভ উজাড় করে দিলেন তাঁরা। যে ঘটনায় প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এমন ঘটনায় দলগতভাবে সমান বিড়ম্বনায় পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। মঙ্গলবার বিরসা মুন্ডার জন্মদিবসে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়িতে বিশেষ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠান শেষে তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যান। কোথাও চপের দোকানে গিয়ে চপ ভাজেন, আবার আদিবাসী মহিলাদের সমস্যার কথা জানতে চান। আর সেই সূত্রে মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে আদিবাসী মহিলারা একাধিক বিষয় নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। জলসঙ্কট থেকে মাথা গোঁজার আশ্রয়ের অভাব, এমন সব অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীদের অভিযোগ ২ কিমি হেঁটে গ্রামের মহিলা, বাচ্চাদের জল আনতে হয়। ঘরে ঘরে পৌঁছয়নি জলের লাইন। এই সমস্যা কবে মিটবে সেই প্রশ্ন করেন তাঁরা। সেই সঙ্গে প্রশ্ন, পাকাপাকিভাবে কবে মাথা গোঁজার ঠাঁই জুটবে তাঁদের? জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন ২০২৪ সালের মধ্যে সবার বাড়িতে পৌঁছবে জল। পাইপ লাইনের কাজ চলছে। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দিচ্ছে না বলে প্রকল্পের কাজ আটকে গিয়েছে। এর পাশাপাশি জলসঙ্কট নিয়ে মমতার পরামর্শ, জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে যেহেতু বৃষ্টি কম হয়, তাই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আরও বেশি পুকুর কাটতে হবে। জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সেই নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যাই বলুন না কেন গ্রামবাসীদের ক্ষোভ থামিয়ে রাখা যাচ্ছে না। কারণ এতদিন ধরে তিনি নিজের মুখে গর্বের সঙ্গে বলেছেন, প্রায় সমস্ত কাজ রাজ্য সরকার শেষ করে দিয়েছে। উন্নয়নের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের ধারে কাছে আসবে না দেশের অন্য কোনও রাজ্য, এই দাবি একাধিক বার করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দলগতভাবে তৃণমূল এই দাবি তুলে নিত্য প্রচার করে চলেছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে শুধু জঙ্গলমহলের একাধিক জেলা বলে নয়, এই ধরনের অভাব অভিযোগ রাজ্যের প্রায় প্রত্যেকটি জেলাতেই রয়েছে। টাকার অভাবে বহু কাজ শেষ করতে পারছে না রাজ্য। বিরোধীদের দাবি দান-খয়রাতি করতে গিয়েই তৃণমূলের সব টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাতে উন্নয়নের কাজে ফাঁকি পড়ে যাচ্ছে। তাই মমতা বেলপাহাড়িতে গিয়ে যেভাবে বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের উপর দোষ চাপিয়েছে তাতে চিঁড়ে ভিজছে না। এই পরিস্থিতিতে রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছেন পঞ্চায়েত নির্বাচনে এতে বেশ সমস্যায় পড়তে হবে তৃণমূলকে। তৃণমূল মৌখিকভাবে যে উন্নয়নের দাবি করে থাকে খাতায়-কলমে কিন্তু ছবিটা তা নয়, সেটা মুখ্যমন্ত্রীর ঝাড়গ্রাম সফরে গ্রামবাসীদের অভিযোগেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।
গ্রামের সাধারণ দরিদ্র পরিবারের মহিলারা এভাবে যে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে এসে অভাব অভিযোগ জানাবেন, সেটা সম্ভবত আঁচ করতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী। তাই দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী সেখানে বেশিক্ষণ ছিলেন না। যা নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কটাক্ষ, গ্রামবাসীদের অভাব অভিযোগ শুনে মুখ্যমন্ত্রী সোজা গাড়িতে উঠে কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন সেখান থেকে। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী প্রতি বছর সামাজিক প্রকল্প বাবদ যে বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করেন, তার জন্যেই প্রকল্পের কাজ সময় মতো শেষ করতে পারছে না সরকার। বলাবাহুল্য মুখ্যমন্ত্রীকে ভোটের টানেই এতগুলি সামাজিক প্রকল্প চালু করতে হয়েছে, যার মাধ্যমে উপভোক্তাদের হাতে পৌঁছে দিতে হচ্ছে নগদ টাকা। সেখান থেকে আর পিছু হটতে পারবেন না মুখ্যমন্ত্রী। তাই ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে সেই কারণেই রুটিন উন্নয়নের কাজ শেষ করতে অসুবিধায় পড়ছে রাজ্য। তাই ঝাড়গ্রামের আদিবাসী মহিলারা যেভাবে তাঁদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন তা পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূলের জন্য একেবারেই ভাল বিজ্ঞাপন নয়। তাই আগামী কয়েক মাসে বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কি পদক্ষেপ করেন এখন সেটাই দেখার।