নিজস্ব প্রতিনিধি: একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূল যখন মারাত্মকভাবে বিদ্ধ, তখন দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে চলেছেন দলীয় নেতাদের একাংশ। কখনও দলের তারকা বিধায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, কখনও সমীর পাঁজা, তাপস রায় বা তাপস চট্টোপাধ্যায়। তাঁদের মন্তব্যে তৃণমূলকে ধারাবাহিকভাবে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। আর সেভাবেই যেন দলকে ফের অস্বস্তিতে ফেললেন উদয়নারায়ণপুরের তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজা। তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান বা উপপ্রধানদের একাংশের সম্পত্তি বৃদ্ধি যেভাবে হয়েছে, তা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুললেন তিনি। অর্থাৎ দলের একাংশ যে কার্যত দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বেশ ক্ষোভের সঙ্গে সমীর পাঁজা বলেছেন,” আমি বিধায়ক হওয়ার আগে কি সম্পত্তি ছিল, আর পরে কি হয়েছে তা দলের নজরে রাখা উচিত। ঠিক সেরকম ভাবে আমাদের প্রধান, উপপ্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা কি ছিলেন, আর এখন কি অবস্থায় রয়েছেন তা খতিয়ে দেখা হোক। মনে হয়েছে কোথাও কোথাও প্রধানের পদস্খলন হয়ে দুর্নীতির সঙ্গে আপস করেছেন। যাদের টিকিট দেওয়া হবে তাঁদের সব কিছু খতিয়ে দেখা হোক। প্রয়োজনে তদন্ত করুক দল।”
গত মাসে ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় তিনি ফেসবুকে লেখেন,” মহান নেত্রী আছেন বলেই আমি আজও তৃণমূল দল ছেড়ে যাইনি। কারণ কত ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে, নানান ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ৩৮টা বছর মহান এই নেত্রীর সঙ্গে একজন সৈনিক হিসেবে কাজ করতে করতে এখন বড়ই বেমানান লাগছে নিজেকে। আমার মতো অবিভক্ত যুব কংগ্রেসের আমল থেকে যারা আছে, তারা আদৌ কোনও গুরুত্ব পাচ্ছে কি বর্তমানে? আমার যাওয়ার সময় হল, দাও বিদায়!” তখন উদয়নারায়ণপুরের তৃণমূল বিধায়কের দল ছাড়া নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে যায়। যদিও এরপরই তিনি আরও একটি ফেসবুক পোস্ট করে জানান, তাঁর মন্তব্যের অপব্যাখ্যা করেছে সংবাদ মাধ্যম। একটা সময় বিষয়টিতে ধামাচাপা পড়ে যায়। কিন্তু ফের তিনি দুর্নীতি ইস্যুতে দলের একাংশকে নিশানা করে বিতর্ক উস্কে দিলেন।
হাওড়া জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর, উদয়নারায়ণপুর অঞ্চলের একাধিক পঞ্চায়েত প্রধান বা উপপ্রধানের কাজকর্মে একেবারেই খুশি নন সমীর পাঁজা। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন সমীর। তাঁদের যাতে দল পঞ্চায়েত নির্বাচনে পুনরায় টিকিট না দেয়, কার্যত সেই বার্তাই দিতে চেয়েছেন তিনি। কিন্তু যেভাবে প্রকাশ্যে সংবাদমাধ্যমে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন, সেটা একেবারেই ভাল চোখে দেখছেন না তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই হাওড়া গ্রামীণ জেলার তরফ থেকে তাঁকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে বলে খবর। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের বক্তব্য, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কারও ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকতেই পারে। তবে সেটা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি না দিয়ে দলের অন্দরেই বলা উচিত। তবে এটা ঠিক সমীর পাঁজা পুরো বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো ভাবনাচিন্তা করেই সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেছেন। তিনি ভাল করেই জানেন এতে বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে বেশ চর্চা হবে। সেক্ষেত্রে দল তদন্ত করলে অনেকের দুর্নীতি সামনে বেরিয়ে আসবে বলে তিনি নিশ্চিত। সেই কারণেই তিনি এমন মন্তব্য করেছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। এই পরিস্থিতিতে হাওড়া জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব গোটা বিষয়টি নিয়ে কি অবস্থান নেন, এখন সেটাই দেখার।