Aajbikel

দুর্নীতি ইস্যুতে বিস্ফোরক তৃণমূল বিধায়ক চিরঞ্জিৎ, বিধায়কের মন্তব্যে অস্বস্তিতে তৃণমূল

 | 
চিরঞ্জিত

 

নিজস্ব প্রতিনিধি: বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন বারাসতের তৃণমূল বিধায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। তারকা বিধায়কের মন্তব্যে যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়েছে জোড়া ফুল শিবির। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির পাশাপাশি একাধিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে তৃণমূল যখন মারাত্মক ভাবে বিদ্ধ, ঠিক তখনই বিস্ফোরক মন্তব্য করে দলের প্রবল অস্বস্তি বাড়ালেন তারকা বিধায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। দলের একাংশকে নিশানা করে বিস্ফোরক ভঙ্গিতে তিনি বলেছেন, "সবাই রাজা হতে চাইছেন। কিন্তু নীতিটা মানছেন না। ইডি তাঁদের পিছনে লাগবেই!"

স্বাভাবিকভাবেই ঘটনায় চরম অস্বস্তিতে পড়েছে রাজ্যের শাসক দল। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির পাশাপাশি কয়লা পাচার, গরু পাচার মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তাদের তৎপরতা বহু গুণে বাড়িয়েছে। যদিও তৃণমূলের অভিযোগ নিরপেক্ষ তদন্ত করছে না সিবিআই এবং ইডি। একই কথা একাধিকবার শোনা গিয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপির কেউ অপরাধ করলে তাঁদের  জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠায় না সিবিআই ও ইডি। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এই ইস্যুতে একাধিকবার বিজেপিকে কটাক্ষ করে ওয়াশিং মেশিন পর্যন্ত বলেছেন। কিন্তু সেই জায়গা থেকে সরাসরি দলের লাইনের বাইরেই কথা বলতে শোনা গেল বারাসতের তৃণমূল বিধায়ককে।

বর্তমানে রাজ্য জুড়ে তৃণমূল বিজয়া সম্মিলনী করছে। শনিবার সন্ধ্যায় বামনগাছিতে তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। সেখানে তৃণমূলের তারকা বিধায়ক দলের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের উদ্দেশে মুখ খুলে বলেন, “রাজা আর নীতি, এই নিয়ে রাজনীতি। এখন বহু মানুষ নীতি মেনে চলছেন না। কিন্তু রাজা হওয়ার শখটাও ছাড়ছেন না। সবাই রাজা হতে চাইছেন। তাঁদের মধ্যেই দুর্নীতিটা হচ্ছে। ইডি তাঁদের পিছনে লাগবেই।” সেই সঙ্গে তিনি যে দুর্নীতির ধারে কাছেও নেই সেই দাবি করে বলেন, “যারা রাজা হতে চাইছে না, মানে আমার মতো, আমাকে ইডি-সিবিআই ফোন করলে কথা বলতে পারি। ডাকতে পারি বাড়িতে। কিন্তু আমি নিশ্চিত তাও আসবে না।” ইতিমধ্যেই চিরঞ্জিতের এই বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে। যদিও দলের রাজ্য স্তরের নেতৃত্বের কাছ থেকে  বিষয়টি নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে একই সঙ্গে চিরঞ্জিত কেন্দ্রীয় সরকারকেও নিশানা করেছেন। তিনি বলেন,"ওদের কাছে দুটি রিভলবার আছে, ইডি আর সিবিআই। আমাদের কাছে লাঠি আছে, যার নাম সিআইডি।" আগামী বছরে গোড়ার দিকে পঞ্চায়েত নির্বাচন। ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি সংক্রান্ত কাজ রাজ্য নির্বাচন কমিশন শুরু করে দিয়েছে বলে খবর। তবে চিরঞ্জিত মনে করছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তদন্তে গতি বাড়ালেও তার কোনও প্রভাব আগামী নির্বাচনগুলিতে পড়বে না। অর্থাৎ তৃণমূলের একাধিক প্রভাবশালী গ্রেফতার হলেও নির্বাচনে দলের অসুবিধা হবে না বলেই মনে করছেন তিনি। তাঁর কথায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নমূলক কাজে মানুষ আস্থা রাখবেন। তবে দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, "চালে দু'চারটে কাঁকড়  থাকতেই পারে। কিন্তু তার জন্য চালটা খাব না, এটা তো হয় না। চাল তো খেতেই হবে৷"

দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে সরব হয়েছে বিজেপি-সহ প্রত্যেকটি বিরোধী দল। সেই জায়গা থেকে  চিরঞ্জিত যেভাবে দলের একাংশকে দুর্নীতি ইস্যুতে নিশানা করেছেন, তাতে রাজনৈতিক মহল মনে করছে তৃণমূল বিধায়ক কার্যত বিরোধীদের অভিযোগকেই স্পষ্ট মান্যতা দিয়েছেন। কারণ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে অন্যতম  প্রধান অভিযুক্ত তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে জেরা করার পর সেই সূত্রে বারাসতের বাসিন্দা তাপস মণ্ডলের বাড়িতে শনিবার হানা দিয়েছে ইডি। যথারীতি সেই প্রসঙ্গেও মুখ খুলেছেন চিরঞ্জিত। তিনি বলেন, "ইডি শিকড়ের খোঁজে বারাসতে এসেছিল। কিন্তু আমার বারাসতে কোনও কলঙ্ক নেই। তবে ইডি তো তাদের কাজ করবেই। এই বিষয়ে কিছু বলার নেই। তবে ইডি বারাসতের জন্য আসেনি। একটা কানেকশনে এসেছে। যাকে ধরার জন্য ইডি এসেছে, তার কিছু সম্পত্তি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে"। সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, "আমি ইডি-সিবিআইকে কালই ফোন করে কথা বলে বাড়িতে ডাকতে পারি। বলতে পারি আমার বাড়িতে এসে মিষ্টি খাবেন৷" এর পাশাপাশি দলের কর্মীদের প্রতি বিধায়কের বার্তা," একটু ভাল থাকলেই হয়, কোনও অসুবিধা নেই৷" সব মিলিয়ে তৃণমূল বিধায়কের এই মন্তব্য নিয়ে দলের অন্দরে যথেষ্ট চর্চা শুরু হয়েছে।

Around The Web

Trending News

You May like