নিজস্ব প্রতিনিধি: অনুব্রত মণ্ডলকে বীরের মতো জেল বের করে আনতে হবে। বীরভূম তৃণমূল নেতৃত্বকে এমনটাই বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে যথেষ্ট বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে দুর্নীতির ইস্যুতে তৃণমূলের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছেন তা নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। এমনকী অভিষেকের মুখে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অনুব্রত মণ্ডলের নামও শোনা গিয়েছে। উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে বিজেপিকে আক্রমণের পাশাপাশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে তৃণমূলের অবস্থান নিয়েও নিজের মতকে স্পষ্ট করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
রবিবার মালবাজারের সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘আমি যখন ১২ জুলাই এসেছিলাম, তখন তো অনুব্রত মণ্ডল, পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ইডি, সিবিআই গ্রেফতার করেনি। তা-ও আমি তখন নতুন তৃণমূলের কথা বলেছিলাম। তখন এই ঘটনাগুলো ঘটেনি।’’ উল্লেখ্য সেদিন উত্তরবঙ্গ সফরে এসে নতুন তৃণমূলের কথা বলেছিলেন অভিষেক। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক জল্পনা তৈরি হয়। স্বাভাবিকভাবেই এদিন অভিষেকের এই বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে তিনি বলেন কারও ভুলের দায় দল নেবে না। তবে কি তিনি বিষয়টি নিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অনুব্রত মণ্ডলের কথাই বলতে চেয়েছেন? যদিও সেই বিষয়টি স্পষ্ট করেননি তিনি। তবে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘এই যে ব্লক কমিটি, টাউন কমিটি বেরিয়েছে, আপনারা দেখেছেন কাদের সভাপতি করা হয়েছে। আগামী দিনে পঞ্চায়েত ভোট হবে। শান্তিপূর্ণ অবাধ নির্বাচন হবে। আমরা আমাদের কথা নিয়ে মানুষের কাছে যাব। বিরোধীরা তাদের কথা নিয়ে মানুষের কাছে যাবে। মানুষ এক পক্ষকে গ্রহণ করবেন, এক পক্ষকে বর্জন করবেন। কিন্তু সারা বছর যদি কেউ মানুষের পাশে থাকেন, মানুষ তাঁর সঙ্গে বেইমানি করেন না। এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। নিশ্চিতভাবে দু’একজন, তিনজন, চারজনের চলার পথে ভুল থাকতে পারে। কিন্তু দল এত বড় একটা সংগঠন। কিছু ভুলত্রুটি থাকতেই পারে। ভুলের পর দল তা সংশোধন করছে কিনা, তা দেখতে হবে। আমি যখন ১২ জুলাই এসেছিলাম, তখন তো পার্থ চট্টোপাধ্যায়-অনুব্রত মণ্ডলকে ইডি, সিবিআই গ্রেফতার করেনি। তা-ও আমি তখন নতুন তৃণমূলের কথা বলেছিলাম। তখন এই ঘটনাগুলো ঘটেনি।’’ সেই সঙ্গে এ বিষয়ে তাঁর সংযোজন, ‘‘যদি কেউ কোনও রকম ভুল করেন, ব্যক্তিস্বার্থে দলকে ব্যবহার করেন, তা হলে দল তাঁর পাশে দাঁড়াবে না। আমি অত্যন্ত স্পষ্ট করে বলে যাচ্ছি। রাজ্য নেতা থেকে বুথ নেতা সবাই জেনে রাখুন। যদি কেউ কোনও রকম ভাবে দলকে ভাঙিয়ে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে, মানুষকে ঠকিয়ে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে রাজনীতি করেন, দল তাঁর পাশে দাঁড়াবে না।’’
পার্থ-অনুব্রত কাণ্ড নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করছে বিরোধীরা। এই পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাশে না দাঁড়ালেও অনুব্রত মণ্ডলের পাশে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে অনুব্রতর সমর্থনে কথা বলছেন। বীরভূম জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের উদ্দেশে মমতা বলেছেন, অনুব্রতকে বীরের মতো জেল থেকে নিয়ে আসতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে চর্চা তুঙ্গে। আর এই আবহের মধ্যেই উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে অভিষেক বললেন কেউ ভুল করলে দল সেই দায় নেবে না। তবে কি মমতা এবং অভিষেকের বক্তব্য পরস্পর বিরোধী? এই প্রশ্ন তুলছে রাজনীতির কারবারিদের একাংশ। যদিও তৃণমূলের একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, অভিষেক সার্বিক দুর্নীতির বিরুদ্ধেই তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তাই তিনি পার্থ এবং অনুব্রতর উদ্দেশে এমন কথা বলেছেন, তা ধরে নিলে ভুল হবে। তবুও অভিষেকের এমন বক্তব্য নিয়ে যথারীতি জল্পনা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।