নিজস্ব প্রতিনিধি: বিজেপির নবান্ন অভিযানের পর থেকেই রাজ্য রাজনীতির জল টগবগিয়ে ফুটছে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে যেখানে বিজেপি নয়, তৃণমূলের প্রধান টার্গেট হয়ে উঠেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু বনাম তৃণমূল, এই প্রেক্ষাপট অত্যন্ত স্পষ্ট। এই জায়গা থেকে অত্যন্ত কুরুচিকর ভাষায় শুভেন্দুকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। নাম না করে যেসব কথা বলা হচ্ছে তাঁর নামে, তাতে স্তম্ভিত রাজ্যবাসী। এই সংস্কৃতি অতীতে কোনও দিনই পশ্চিমবঙ্গে দেখা যায়নি।
নাম না করে শুভেন্দুকে ‘যৌনবিকৃতি’র আক্রমণ করেছেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ। পাল্টা জবাব দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। বিধানসভায় সাংবাদিক বৈঠকে এই সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘কোনও জেলখাটা লোকের কথার উত্তর আমি দেব না। তিন বছর জেল-খাটা নর্দমার কীট! তার কথার জবাব দিতে আমার রুচিতে বাধে”। এর আগে সাংবাদিক বৈঠক করে কুণাল ঘোষকে বারংবারই বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী সমকামী কি না, তা আমি জানি না। আমি ওই বিষয়ে কিছু বলছিও না। কোনও এক জন নেতা, যাঁর নাম বলব না, শুভেন্দুকেও বলছি না, সেই নেতা যৌনবিকৃত, হোমোসেক্সুয়াল, সমকামী। তাঁর এক দেহরক্ষীকে বিকৃত যৌনতা দেখাতে গিয়েছিলেন। সেই দেহরক্ষী বাইরে বলে দেবেন, সেই ভয়ে তাঁকে খুন করা হয়েছে। তার পর তাকে আত্মহত্যা বলে চালানো হয়েছে। সেই নেতা কে?’’ কুণাল নাম করেননি। কিন্তু ওই আক্রমণের লক্ষ্য যে শুভেন্দু অধিকারীই, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অন্যদিকে শুভেন্দু পাল্টা তোপ দেগে কুণালের উদ্দেশে আরও বলেছেন, ‘‘যে ভাইপোর বেতনভুক কর্মী, তার কথার উত্তর আমি দেব না।’’ যেভাবে তৃণমূল শুভেন্দুকে লাগাতার ব্যক্তিগত আক্রমণ করছে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।
রাজ্য সভাপতি পদ থেকে সরার পর থেকেই দিলীপ ঘোষ সম্পর্কে অনেকটাই নরম অবস্থান নিয়েছে তৃণমূল। নেতৃত্ব দানের ক্ষেত্রে দিলীপ যোষ অনেকটাই এগিয়ে শুভেন্দু অধিকারী এবং সুকান্ত মজুমদারের থেকে, এমন কথাও তৃণমূল নেতাদের বলতে শোনা গিয়েছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে বর্তমানে রাজ্য বিজেপিতে যারা রয়েছেন তাঁদের মধ্যে একমাত্র শুভেন্দুরই সাংগঠনিক দক্ষতা রয়েছে। জেলায় জেলায় তাঁর ব্যক্তিগত সংগঠন আছে। সবচেয়ে বড় কথা তিনি নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করেছেন। সবমিলিয়ে তৃণমূল মনে করছে শুভেন্দুকে কোণঠাসা করতে পারলে লোকসভা নির্বাচনে গতবারের চেয়ে অনেক ভাল ফল হবে তাদের। শুধু তাই নয়, যেভাবে একাধিক দুর্নীতি ইস্যুতে তৃণমূলের উপর চাপ বেড়েছে, সেখানে শুভেন্দুকে এভাবে পাল্টা আক্রমণ করতে পারলে চাপমুক্ত হবে তৃণমূল। সেই কারণেও শুভেন্দুকে এভাবে তৃণমূল নিশানা করছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সেক্ষেত্রে শুধু রাজনৈতিক আক্রমণ নয়, ব্যক্তিগত আক্রমণ করতেও দু’বার ভাবছে না তৃণমূল। এরই মধ্যে একদা শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ পূর্ব মেদিনীপুরের আরমান ভোলা কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক করে বিরোধী দলনেতার নামে প্রচুর অভিযোগ করেছেন। আরমান ভোলার অভিযোগ শুভেন্দু তাঁদের বিপথে চালিত করেছেন। সেই সঙ্গে নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে আহত হয়েছিলেন সেই ঘটনাতেও শুভেন্দুর যোগ থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তাঁরা। যদিও বিজেপির অভিযোগ ভয় দেখিয়ে, টাকা ছড়িয়ে এসব করাচ্ছে তৃণমূল। তাই এটা স্পষ্ট যে যতদিন যাচ্ছে ততই রাজ্য রাজনীতিতে শুভেন্দু বনাম তৃণমূলের লড়াইটা অনেক বেশি প্রকট হচ্ছে।