আন্দোলনে ফের নজর কাড়ল মীনাক্ষীর নেতৃত্বে বাম ছাত্র-যুব ব্রিগেড, প্রধান বিরোধী পরিসর দখল করছে বামেরা?

আন্দোলনে ফের নজর কাড়ল মীনাক্ষীর নেতৃত্বে বাম ছাত্র-যুব ব্রিগেড, প্রধান বিরোধী পরিসর দখল করছে বামেরা?

 

নিজস্ব প্রতিনিধি: চাকরিপ্রার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনে শোরগোল পড়ে গিয়েছে শহর তথা রাজ্য জুড়ে। যেভাবে মধ্যরাতে পুলিশ জোর করে আন্দোলন তুলে দিয়েছে তার নিন্দায় সরব হয়েছে সব মহল। আর সেই রাতেই চাকরিপ্রার্থীদের পাশে দাঁড়াতে বিধাননগরে পৌঁছে গিয়েছিলেন সিপিএম যুব সংগঠনের  নেতা-নেত্রীরা। ঘোষণা করেছিলেন শুক্রবার দুপুরে এই ইস্যুতে বিধাননগরে জমায়েত হবেন তাঁরা। আর বামেদের এই ঘোষিত কর্মসূচি ঘিরেই শুক্রবার দিনভর উত্তপ্ত হয়ে উঠল বিধাননগর। সেই আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন করে রাজ্যবাসীর নজর কেড়ে নিলেন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সভানেত্রী মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়, সিপিএমের যুব সংগঠনের নেতা কলতান দাশগুপ্ত, এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস-সহ সংগঠনের অগণিত কর্মী সমর্থকরা।

সিটি সেন্টার-১ চত্বরে বামেদের বিক্ষোভে রণক্ষেত্রের পরিস্থিতি তৈরি হয়। রাস্তায় বসে পড়েন যুব নেতা-নেত্রীরা। তাঁদের সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেয়ে যান পুলিশকর্মীরা। পুলিশের বক্তব্য সেখানে আন্দোলন করা চলবে না। পাল্টা ঝাঁঝিয়ে উঠে মীনাক্ষীকে পুলিশের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, “সিটি সেন্টারের সামনেও কি ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে নাকি?” সেই সংক্রান্ত কাগজ দেখানোর দাবি করেন তিনি। বাম নেতা-নেত্রীদের অভিযোগ পুলিশ দলদাসের মতো আচরণ করেছে। এরপর মীনাক্ষি-সহ বাম যুব নেতানেত্রীদের রীতিমতো চ্যাংদোলা করে, পাঁজাকোলা করে পুলিশ ভ্যানে তোলা হয়। আর পুলিশের সেই আচরণ নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তী-সহ সকলেই। এর পাশাপাশি আন্দোলনকারী পরীক্ষার্থীদের যেভাবে বিধাননগর উত্তর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাতে সেই থানার সামনেও বাম কর্মী-সমর্থকরা টানা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।

এদিকে রাজ্য কংগ্রেস ও বিজেপিও পুলিশের আচরণের বিরুদ্ধে শুক্রবার সকাল থেকেই পথে নামে। কিন্তু এটা স্পষ্ট বামেদের আন্দোলনের ঝাঁজ সবার চেয়ে বেশি ছিল। তাদের আন্দোলনের অভিঘাত সরাসরি টের পেয়েছে প্রশাসন। যেভাবে নাছোড়বান্দা ভঙ্গিতে পুলিশি বাধার সামনে অনড় মনোভাব নিয়ে রাস্তায় পড়ে থেকেছেন মীনাক্ষিরা, তাতে রাজ্যের বড় অংশের সহানুভূতি কুড়িয়েছেন তাঁরা। এই আন্দোলনের যে যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে সেটা স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্যের বিশিষ্ট মানুষজন। বঙ্গের সুশীল সমাজ এই ইস্যুতে রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছে।

পঞ্চাশ বা ষাটের দশকে বামেরা  যখন রাজ্যে ক্ষমতায় আসেনি তখন তাদের বিভিন্ন ইস্যুতে মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে। তাঁদের নজিরবিহীন আন্দোলন, নেতা-নেত্রীদের সরল, সাদাসিধে অনাড়ম্বর জীবনযাপন  বাংলার পাশাপাশি গোটা দেশের নজর কেড়ে নিয়েছিল। সেই আন্দোলনের ইতিহাস প্রবীণ মানুষরা জানেন। পরবর্তীকালে ১৯৭৭ সালে পশ্চিমবঙ্গে বামেরা ক্ষমতায় আসে। একটানা ৩৪ বছর রাজত্ব করে তারা। তবে ২০১১ সালে ক্ষমতা থেকে চলে যেতে হয়েছে তাদের। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে অতীতের বাম আন্দোলনের স্মৃতি এবার ফিরে আসছে মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়দের হাত ধরে। গত বিধানসভা নির্বাচনে শূন্য হয়ে গেলেও যেভাবে মানুষের স্বার্থে মাঠে ময়দানে পড়ে মার খাচ্ছেন বাম ছাত্র-যুব সংগঠনের নেতা-নেত্রীরা, যেভাবে তাঁদের অনেককে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাতে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমশ মানুষের  ক্ষোভ বাড়তে শুরু করেছে। ফের সেই দৃশ্য দেখল গোটা বাংলা। তাই এটা স্পষ্ট বিধানসভায় সংখ্যার নিরিখে বিজেপি রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পেলেও, আন্দোলনের নিরিখে তারা বামেদের ধারে কাছেও আসতে পারছে না। এটাই রেড ব্রিগেডের সাফল্য। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বামেদের আন্দোলনের ঝাঁজ যে বহু গুণে বাড়বে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ থাকার কথা নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *