সুদীপের বিরুদ্ধে তোপ দেগেই চলেছেন তাপস রায়, বিজেপির সঙ্গে অ্যাডজাস্টের অভিযোগ করছেন তাপস?

সুদীপের বিরুদ্ধে তোপ দেগেই চলেছেন তাপস রায়, বিজেপির সঙ্গে অ্যাডজাস্টের অভিযোগ করছেন তাপস?

নিজস্ব প্রতিনিধি:  তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন দলেরই বিধায়ক তাপস রায়। যে ঘটনায় প্রবল অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে শাসক দল। উল্লেখ্য দুর্গাপুজোয় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা যুবনেতা তমোঘ্ন ঘোষের বাড়ির পুজোয় হাজির হয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সময় সেখানে হাজির ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপি নেতা কল্যাণ চৌবে। ঘনিষ্ঠ মহলে সুদীপ বিষয়টি নিয়ে সৌজন্যের যুক্তি দিলেও তা মানতে নারাজ তাপস।

তাঁর কথায়, একই বাড়িতে একটি দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে সেখানে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়েছেন, আবার শুভেন্দু অধিকারী এবং কল্যাণ চৌবেও রয়েছেন। শুভেন্দু অধিকারী আমাদের দল সম্পর্কে, আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কে যে ধরনের কথাবার্তা ধারাবাহিকভাবে বলে আসছেন, বা বলে থাকেন সেখানে আমাদের কারও উপস্থিতি এটা কর্মীরা কখনই নেবেন না। এরপর তাপসের বাড়িতে পৌঁছে যান তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ। কিন্তু তারপরেও নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেননি বরানগরের বিধায়ক। তিনি বিষয়টি নিয়ে ফের নিশানা করেছেন বর্ষীয়াণ তৃণমূল সাংসদকে। গোটা ঘটনায় বেশ অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে তৃণমূল। উল্লেখ্য তমোঘ্ন ঘোষের বাবা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু। প্রতি বছরই তাঁদের পুজোয় সুদীপ হাজির হয়ে থাকেন। কিন্তু কিছুদিন আগেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়ে বড় পদ পেয়েছেন তমোঘ্ন। এরপরেও শুভেন্দু এবং কল্যাণ চৌবের উপস্থিতিতে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় কেন পুজোয় সেখানে গেলেন তা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করে প্রশ্ন তুলেছেন তাপস রায়। তৃণমূল সূত্রে খবর, সুদীপের এই ভূমিকায় দল খুশি নয়। আসলে তাপস এটাই বলতে চেয়েছেন যে, সুদীপ কার্যত বিজেপির সঙ্গে ‘অ্যাডজাস্ট’ করে চলতে চাইছেন। উল্লেখ্য রাজনীতির বাইরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও সুদীপের সুসম্পর্কের কথা সকলেই জানেন। তাই তাপস যেভাবে সুদীপের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তাতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।

তবে এই প্রথম নয়, প্রায় দু’দশক আগে তৃণমূলে থাকার সময় সুদীপের ভূমিকায় ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় কেন্দ্রে তৃণমূল এনডিএ জোটের অন্যতম শরিক ছিল। ২০০৩ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ী মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের সময় মমতাকে অন্ধকারে রেখে সুদীপ মন্ত্রী হয়ে গিয়েছিলেন। যে ঘটনায় সুদীপের উপর ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন মমতা। কয়েক মাসের মধ্যে অবস্থা এমন পর্যায়ে যায় যে সুদীপ তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগদান করেন। এরপর ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সুদীপ কংগ্রেসের টিকিটে উত্তর পশ্চিম লোকসভা কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। তবে পরবর্তী সময় তিনি আবার তৃণমূলে ফিরে আসেন। এরপর ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিট ফের জয়ী হয়ে সাংসদ হন। পরের দুটি লোকসভা নির্বাচনেও বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে ওয়াকিবহাল মহলের প্রশ্ন, চিটফান্ড দুর্নীতি মামলায় সুদীপকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে কি সেই জায়গা থেকে আগামী দিনে বাঁচার জন্যই তিনি বিজেপির সঙ্গে সৌজন্যের মোড়কে দূরত্ব কমাতে চাইছেন? এই চর্চা স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। তবে শুধু সুদীপ নন, কিছুদিন আগে কলকাতায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান আসার পর একটি স্থানে তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছিল তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষের। তাই তাপস রায়ের এহেন আক্রমণের পর যথারীতি সেই প্রসঙ্গ তুলছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামীরা। যদিও তৃণমূল মনে করে দুটি বিষয় এক নয়। সব মিলিয়ে সুদীপ ‘এপিসোড’ বেশ ধাক্কা দিয়েছে জোড়াফুল শিবিরকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 1 =