নিজস্ব প্রতিনিধি: গত বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ভোট পেয়ে রীতিমতো ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে রাজ্যে ফের ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল। সেই নির্বাচনে বঙ্গের মহিলারা দু’হাত উজাড় করে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। ভোট পরবর্তী একাধিক পরিসংখ্যানে এটা স্পষ্ট হয়েছিল যে সেই বিধানসভা নির্বাচনে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ভোট বেশি করে পেয়েছিল তৃণমূল। সেক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পই যে এর প্রধান কারণ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূলের নজরে ফের মহিলা ভোট। পয়লা নভেম্বর থেকে মহিলাদের কাছে টানার লক্ষ্যে শুরু হতে চলেছে তৃণমূলের নয়া কর্মসূচি ‘চলো গ্রামে যাই’।
এর মাধ্যমে মহিলাদের জন্য তৈরি নানা প্রকল্পের কথা ও সুযোগ সুবিধা সবটাই তুলে ধরা হবে। এভাবে তাঁদের কাছে টানতে চায় তৃণমূল। মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, আগামী ১ নভেম্বর থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত বুথে বুথে যাবে ঘাসফুল শিবিরের মহিলা নেতৃত্ব। হাওড়া থেকে এই কর্মসূচির সূচনা করবেন দলের মহিলা সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হল বুথভিত্তিক সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা এবং রাজ্য স্তরে মমতার সরকার মহিলাদের জন্য যে প্রকল্প নিয়েছে, সেগুলি আরও তৃণমূল স্তরে পৌঁছে দেওয়া। এই জনসংযোগ কর্মসূচি থেকে একটি রিপোর্ট কার্ড তৈরি করবে মহিলা তৃণমূল। ২৫ নভেম্বরের মধ্যেই এই রিপোর্ট কার্ড তৈরি করা হবে। এক্ষেত্রে জেলা ধরে ধরে কোথায় মহিলাদের কী সমস্যা রয়েছে, তা শনাক্ত করে দল এবং সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে তৃণমূলের সংশ্লিষ্ট নেতৃত্বের তরফে।
কিন্তু প্রশ্ন হঠাৎ কেন মহিলা ভোটের প্রতি বাড়তি উৎসাহ দেখাচ্ছে তৃণমূল? গত বিধানসভা নির্বাচনে মহিলাদের ভোট বিপুলভাবে পেয়েছে জোড়া ফুল শিবির। তাহলে কি তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে সমস্ত দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তার ভিত্তিতে মহিলাদের সমর্থন তাদের প্রতি কমেছে, এমন কিছু আঁচ করছেন দলীয় নেতৃত্ব? যেভাবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো প্রথম সারির নেতার বান্ধবীর বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে তা মহিলাদের সম্মানে আঘাত করেছে বলেই দলের একাংশ মনে করছেন। মহিলারা কী এমনটাই ভাবছেন যে আমরা এতদিন এই তৃণমূলকে ভোট দিয়েছি? যেখানে থেকে এত দুর্নীতির অভিযোগ আসছে? আর সেই সমস্ত বিষয় আঁচ করেই কি তৃণমূলের মহিলা শাখা নতুন করে তাদের কাছে টানতে উদ্যোগী হয়েছে? আর তার ভিত্তিতেই নেওয়া হয়েছে গ্রামে চলো কর্মসূচি? এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সবমিলিয়ে এটা পরিষ্কার বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও লাগাতার দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ তৃণমূল পঞ্চায়েত ভোটের আগে যথেষ্ট অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে। আর সেই জায়গা থেকেই ভোটারদের মন জয় করতে একের পর এক কর্মসূচি গ্রহণ করছে তারা। তারই ফলশ্রুতি মহিলাদের নতুন করে কাছে টানার চেষ্টা।