তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে চলে গেলেন সুবল ভৌমিক! ভোটে কতটা লড়াই দিতে পারবে জোড়া ফুল?

তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে চলে গেলেন সুবল ভৌমিক! ভোটে কতটা লড়াই দিতে পারবে জোড়া ফুল?

নিজস্ব প্রতিনিধি: পশ্চিমবঙ্গে গত বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয় পাওয়ার পর তৃণমূল একাধিক রাজ্যে ক্ষমতা দখলের স্বপ্নে বিভোর হয়ে ওঠে। বেশ কয়েকটি রাজ্যে তৃণমূল তাদের সংগঠন বিস্তারের লক্ষ্যে বিশেষ নজর দেয়। বিশেষ করে তৃণমূলের নজরে উঠে আসে গোয়া, ত্রিপুরা এবং মেঘালয়। এছাড়া অসম, হরিয়ানাতেও তৃণমূল তাদের ইউনিট তৈরি করে। কিন্তু গোয়াতে তারা আদৌ সুবিধা করতে পারেনি। গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে একটি আসনেও জয় পাওয়া তো দূরের কথা, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তৃণমূল প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল।

এরপর তৃণমূল ফোকাসে রাখে উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় এবং ত্রিপুরাকে। ত্রিপুরা পুরসভার নির্বাচনে তৃণমূল ২০ শতাংশ ভোট পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। তখন তারা সদর্পে ঘোষণা করে ত্রিপুরায় তৃণমূলের ক্ষমতা দখল এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু তাল কেটে যায় গত বছর হওয়া চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে। চারটি কেন্দ্রেই তৃণমূল মুখ থুবড়ে পড়ে। তাদের ভোট ৩ শতাংশের নিচে নেমে আসে। এরপর থেকেই দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন দল থেকে তৃণমূলে যাওয়া নেতাকর্মীদের হতাশা বাড়ছে। আস্তে আস্তে দল ছাড়তে শুরু করেন তৃণমূলে যাওয়া একাধিক বিধায়ক ও অন্যান্য নেতানেত্রীরা। এই পরিস্থিতিতে বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করলেন প্রভাবশালী নেতা সুবল ভৌমিক। একটা সময় ত্রিপুরা তৃণমূলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন সুবল। তাঁকে ঘিরে সংগঠন বাড়ানোর স্বপ্ন দেখছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। কিন্তু নির্বাচনের আগে বড় ধাক্কা খেল তৃণমূল। যদিও প্রত্যাশিতভাবে তৃণমূলের দাবি সুবল দলত্যাগ করায় তাতে ক্ষতি হবে না।

৬০ আসন বিশিষ্ট ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল একাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু শুক্রবার পর্যন্ত তারা প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারেনি। সূত্রের খবর যোগ্য প্রার্থীর অভাব দেখা দেওয়ায় প্রার্থী তালিকা ঘোষণায় বিলম্ব হচ্ছে। বেশ কিছুদিন আগে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে ত্রিপুরা তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হয়েছিল। তখন তৃণমূল সূত্রে জানা যায় শীঘ্রই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, ত্রিপুরায় ছোট কোনও দলের সঙ্গে তৃণমূল জোট করবে কিনা সেটা নিয়েও আলোচনা চলছিল বলে জানা যায়। কিন্তু ত্রিপুরায় কোনও দলই তৃণমূলের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহ দেখায়নি। এতেই স্পষ্ট ত্রিপুরায় তৃণমূলের ভোট-ভবিষ্যৎ খুব একটা উজ্জ্বল নয়। সব থেকে বড় কথা ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ফল করা তো দূরের কথা, তৃণমূল কতটা প্রাসঙ্গিক থাকবে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যেই কংগ্রেস এবং বাম জোটবদ্ধভাবে লড়াইয়ে নেমে পড়েছে।

ত্রিপুরা নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে এবার ‘পোলারাইজেশন ফ্যাক্টর’ ব্যাপকভাবে দেখা যাবে বলে রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন। অর্থাৎ হয় বিজেপি নয়ত প্রধান বিরোধী বাম-কংগ্রেস জোট, এই যুযুধান দু’পক্ষকেই প্রধানত ত্রিপুরার মানুষ ভোট দেবেন বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। তবে জনজাতি অধ্যুষিত ১৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে তিপ্রা মোথা ভাল ভোট পাওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি আসনে জেতার জায়গায় রয়েছে বলেও রাজনৈতিক মহল মনে করে। কিন্তু কোথাও তৃণমূলকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না। এখন থেকেই তৃণমূল কার্যত ত্রিপুরা নির্বাচনে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছে বলে সকলে মনে করছেন। এই পরিস্থিতিতে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ত্রিপুরা সফর করবেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার পাশাপাশি প্রচারে দেখা যাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। প্রত্যাশিতভাবে ত্রিপুরা নির্বাচনে তৃণমূলের ইস্তাহারে প্রাধান্য পাবে পশ্চিমবঙ্গের মতো সামাজিক প্রকল্পগুলি। ত্রিপুরায় তারা ক্ষমতায় এলে বাংলার ধাঁচে লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী ইত্যাদি প্রকল্প রূপায়ণ করা হবে বলে তৃণমূল প্রচার করবে। কিন্তু সেই প্রচারে কতটা লাভ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ গোয়াতেও তৃণমূল এমন প্রচার করেছিল। তবে তাতে লাভ হয়নি। সব থেকে বড় কথা পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে ত্রিপুরার তৃণমূল নেতৃত্বকে প্রশ্ন করতে শুরু করে দিয়েছেন সেখানকার মানুষ। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি চরম অস্বস্তিতে ফেলেছে জোড়াফুল শিবিরকে। সব মিলিয়ে এটা স্পষ্ট ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ভবিষ্যৎ একেবারেই উজ্জ্বল নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − 10 =