নিজস্ব প্রতিনিধি: গরু পাচার মামলায় বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নামে ইতিমধ্যেই আসানসোল আদালতে চার্জশিট পেশ করেছে সিবিআই। সেখানে ৯৫ জন সাক্ষীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে সেই সাক্ষীর তালিকায় নাম রয়েছে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়ের। সাক্ষী তালিকায় ৪৬ নম্বরে নাম রয়েছে শতাব্দীর। শতাব্দীর পাশাপাশি সাক্ষী হিসাবে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার ও ব্যাঙ্ক কর্মীদের নামও রয়েছে। সূত্রের খবর, ১৬০ নং ধারায় শতাব্দীকে নোটিস পাঠানো হয়েছিল। আর ১৬১ নং ধারায় তাঁর বয়ান রেকর্ড করা হয়। এরপরই চার্জশিটে সাক্ষী হিসাবে শতাব্দীর নাম রেখেছে সিবিআই। আর এতেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। প্রতিক্রিয়ায় শতাব্দী জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের কথা হবে এটাই স্বাভাবিক। তিনি আরও বলেন,”আমার সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডলের ফোনে কথা হয়েছে। তাও আমার ফোন থেকে নয়, কথা হয়েছে আমার পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্টের নম্বর থেকে। ওই নম্বরটি আমারই কিনা, সিবিআই তা জানতে চেয়েছিল। বলেছি ওটা আমার পিএ-র নম্বর। ওঁরা জানালেন ওই নম্বর থেকে অনুব্রত মণ্ডলের ফোনে কয়েক বার কয়েক সেকেন্ড করে কথা বলা হয়েছে। তারপরেই আমাকে সাক্ষী করা হয়েছে।” এর পাশাপাশি তাঁর সংযোজন, জেলা সভাপতির সঙ্গে তাঁর কথা হতেই পারে, এতে গরুর কি সম্পর্ক!
বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে শতাব্দী রায়ের সম্পর্ক কোনও দিনই মসৃণ ছিল না। অতীতে বিভিন্ন ইস্যুতে বহুবার তাঁদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা গিয়েছে। যা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে তৃণমূলকে। আর গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে কার্যত এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে শতাব্দী রায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করবেন। জানা যায় অনুব্রতর সঙ্গে বিরোধের কারণেই শতাব্দী তখন তৃণমূল ছাড়ার কথা ভেবেছিলেন। যদিও শতাব্দী দলত্যাগ করেননি। তবে গরু পাচার মামলায় সিবিআই অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করার পর সরাসরি তাঁর পাশেই দাঁড়িয়েছেন শতাব্দী। কিছুদিন আগে বীরভূমের একটি কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে বিষয়টি নিয়ে শতাব্দীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আমাদের অনুব্রত মণ্ডলের পাশে থাকতে হবে, বোঝাতে হবে আমরা অকৃতজ্ঞ নই। আপনারা যখন অনুব্রত মণ্ডলকে পাশে পেয়েছেন, সহযোগিতা পেয়েছেন, তখন আপনাদেরও তাঁর পাশে থাকতে হবে।’’ এরপরই জানা যাচ্ছে গরু পাচার মামলায় সাক্ষী হিসেবে নাম রয়েছে শতাব্দী রায়ের।
সিবিআই চার্জশিটে ১৮ কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিটের কথা উল্লেখ করেছে। ওই ফিক্সড ডিপোজিট অনুব্রতের পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে বলে দাবি সিবিআইয়ের। এর পাশাপাশি অনুব্রত ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে ৫৩ টি দলিল রয়েছে বলেও চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখ করা হয়েছে রাইস মিলের কথাও। এছাড়া ব্যাঙ্কে লেনদেন সংক্রান্ত তথ্যে সিজার লিস্টে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার ও যেসব কর্মী সই করেছিলেন, তাঁদের নামও সাক্ষী তালিকায় রয়েছে। এর পাশাপাশি সাক্ষী হিসেবে নাম রয়েছে মলয় পীঠের। বেশ কিছু বেসরকারি কলেজে গরু পাচারের টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে দাবি সিবিআইয়ের। আর সেই কলেজগুলির সঙ্গে মলয় পীঠের যোগাযোগ ছিল বলে তদন্তকারীরা দাবি করেছেন। সেই সূত্রেই সাক্ষী তালিকায় তাঁর নাম রাখা হয়েছে। তবে যেভাবে সাক্ষী তালিকায় শতাব্দী রায়ের নাম রয়েছে তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শতাব্দীকে আগামী দিনে সাক্ষী হিসেবে ডাকা হলে তিনি সেখানে গিয়ে কি বলবেন, তা নিয়ে যথেষ্ট কৌতূহল রয়েছে রাজনৈতিক মহলের। তৃণমূল রাজনীতিতে অনুব্রত-শতাব্দীর দ্বন্দ্বের কথা সকলেরই জানা। তাই শতাব্দীর নাম সাক্ষী তালিকায় সিবিআই রাখার পরেই বীরভূম তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, এভাবে তাঁদের দলের মধ্যে বিভাজন ঘটাতে চায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সব মিলিয়ে সাক্ষী তালিকায় শতাব্দীর নাম থাকায় বিষয়টি নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।