নিজস্ব প্রতিনিধি: কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতারা জি-২৩ গোষ্ঠী নামে পরিচিত। এই গোষ্ঠীর অন্যতম সদস্য কেরলের তিরুবনন্তপুরমের সাংসদ শশী থারুর। জি-২৩ গোষ্ঠীর মূল লক্ষ্য গান্ধী পরিবারের বাইরে কাউকে সভাপতি করা। আর অনেকের মতোই দীর্ঘদিন ধরেই গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে দলের মধ্যে বা বাইরে ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন থারুর। অথচ মজার কথা এবার কংগ্রেস সভাপতি পদে নির্বাচনে শশী থারুর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলে খুশি নন জি-২৩ গোষ্ঠীর নেতারা। কিন্তু কি কারণে হঠাৎ করে তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেন থারুরের উপর?
কংগ্রেস সভাপতি পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে আগেই জানিয়েছিলেন শশী থারুর। শনিবার নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু হতেই তিরুবনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর মনোনয়ন পত্র তুললেন। তিনিই প্রথম ব্যক্তি হিসেবে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন তুললেন। এদিন দিল্লিতে গিয়ে দলের সভাপতি পদে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা মধুসূদন মিস্ত্রির কাছ থেকে মনোনয়ন পত্র তুলেছেন শশীর প্রতিনিধিরা। তবে এই ঘটনায় রীতিমতো বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ জি-২৩ গোষ্ঠীর নেতারা। তাঁরা চেয়েছিলেন শশীর বদলে অন্য কেউ সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুন। অথচ থারুর গত কয়েক মাস ধরে জি-২৩ গোষ্ঠীর অন্যতম অংশ হিসেবেই পরিচিত হয়েছেন। তাহলে কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতা, বা বলা ভাল গান্ধী পরিবারের বিরোধীরা হঠাৎ করে কেন ক্ষুব্ধ হলেন থারুরের উপর? বছর দু’য়েক আগে কংগ্রেসের সংগঠনের সংস্কার চেয়ে দলের অন্তর্বর্তী সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস নেতারা যে চিঠি দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন থারুর। যে ঘটনাটিকে একেবারেই ভাল চোখে দেখেননি গান্ধী পরিবার ও তাঁদের অনুগামীরা। এরপরে দেখা যায় ধাপে ধাপে দল ছেড়েছেন কপিল সিব্বল, গুলাম নবি আজাদ-সহ বহু নেতানেত্রী। বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ কংগ্রেসে কোনও গণতন্ত্র নেই। তাই সেখানে সভাপতি নির্বাচন করা হচ্ছে না।
রাহুল গান্ধী নিজে সভাপতি হতে না চাইলেও পিছন দিক থেকে দল চালাচ্ছেন। সেই অভিযোগকে সমর্থন করে দলের মধ্যে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সাংসদ মনীশ তিওয়ারি, প্রবীণ নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আনন্দ শর্মা, মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক চহ্বান-সহ অনেকেই। কিন্তু গত কয়েক মাসে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে গিয়ে দেখা করেন শশী থারুর। সূত্রের খবর তিনি সোনিয়াকে বলেছেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেন নির্বাচন না হয়। তাতে বিজেপি বলা শুরু করবে লোক দেখানো নির্বাচন করা হয়েছে। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হলে তা দলের পক্ষে ভাল হবে। আর তিনিও যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক সেটাও সেদিন জানিয়েছিলেন সোনিয়াকে। আসলে এভাবে দুটি পথ খোলা রাখলেন শশী থারুর। প্রথমত জি ২৩ গোষ্ঠীকে এই বার্তা দিলেন যে, গান্ধী পরিবারের পছন্দের প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি। আর দ্বিতীয়ত এতে থারুরের উপর খুশি হল গান্ধী পরিবার। কারণ হার নিশ্চিত জেনেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সবচেয়ে বড় কথা তিনি সভাপতি নির্বাচনের মান-মর্যাদা বজায় রাখলেন।
সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কংগ্রেসের উঁচু পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে নিজের রাস্তা পরিষ্কার রাখতে পারলেন তিনি। আর গোটা বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেই থারুরের উপর ক্ষুব্ধ কংগ্রেসের জি-২৩ গোষ্ঠীর নেতারা। কিন্তু মুখে তাঁরা কিছু বলতে পারছেন না। কারণ স্বচ্ছ ভাবে নির্বাচন হচ্ছে, আর সেখানে গান্ধী পরিবারের পছন্দের প্রার্থীর বিরুদ্ধেই থারুর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছেন। যদিও থারুরকে আর বিক্ষুব্ধ হিসেবে দেখছেন না জি-২৩ গোষ্ঠী। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস সভাপতি পদে নির্বাচনে মণীশ তিওয়ারি বা আনন্দ শর্মা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন কিনা সেদিকে নজর থাকবে সবার। যদিও সূত্রের খবর হার সুনিশ্চিত জেনে তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। তাই শনিবার বিক্ষুব্ধ নেতা অশোক চহ্বান বলেছেন, “আমাদের উদ্দেশ্য ছিল দলের গঠনতন্ত্র মেনে নির্বাচনের মাধ্যমে স্থায়ী সভাপতি ঠিক করা। আর সেটাই তো হতে চলেছে।” সেই সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন জি-২৩ গোষ্ঠীর আর অস্তিত্ব নেই। এদিকে গান্ধী পরিবারের প্রার্থী হিসেবে সোমবার মনোনয়নপত্র তুলবেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট। এর পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ এবং দিগ্বিজয় সিং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে। তাঁরা দুজনেই গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। তাই কংগ্রেস সভাপতি পদে নির্বাচনকে ঘিরে নতুন কোনও নাটক দেখা যায় কিনা এখন তারই অপেক্ষা।