নিয়োগ দুর্নীতি: বাম জমানার দিকে মুখ্যমন্ত্রী আঙুল তোলায় উঠছে বহু প্রশ্ন!

নিয়োগ দুর্নীতি: বাম জমানার দিকে মুখ্যমন্ত্রী আঙুল তোলায় উঠছে বহু প্রশ্ন!

5700255ff7dd117c32d6e7a2145005c3

 

নিজস্ব প্রতিনিধি: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের পাশাপাশি গরু পাচার, কয়লা পাচার, বালি পাচার-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচুর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে। সেই সমস্ত দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ তৃণমূল রাজ্য রাজনীতিতে চরম অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে। তৃতীয়বার বিপুল সংখ্যক আসনে জিতে ক্ষমতায় আসলেও মানসিকভাবে তৃণমূল এখন বেশ কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে। এই অবস্থায় দুর্নীতির অভিযোগ থেকে বেরিয়ে আসতে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘অফেন্স ইজ দ্যা বেস্ট ডিফেন্স’ নীতিকেই যে বেছে নিয়েছেন সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই জায়গা থেকে মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর মঞ্চ থেকে দুর্নীতি ইস্যুতে বামেদের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ করেছেন।

যদিও এই প্রথম নয়, ইদানিং মুখ্যমন্ত্রীকে বামেদের সম্পর্কে এ কথা একাধিকবার বলতে শোনা গিয়েছে। উল্লেখ্য মুখ্যমন্ত্রী মেয়ো রোডের মঞ্চ থেকে বামেদের নিশানা করে বলেছেন, টাকা নিয়েছ আর চাকরি দিয়েছ। সে সব কিছুর হিসেব চেয়েছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে বাম শাসনের বিরুদ্ধে চাকরি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য তাঁর হাতে আছে কি? আর মুখ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরেই সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী পাল্টা চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, যদি সত্যিই দুর্নীতির প্রমাণ মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকে তাহলে সেগুলি তিনি সামনে আনছেন না কেন? সিপিএমের প্রশ্ন, ১১ বছর ধরে রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। বাম আমলের একাধিক বিষয় নিয়ে কমিশন বসিয়েছে তৃণমূল সরকার। কিন্তু সেই সমস্ত কমিশনের একটি রিপোর্টেও বাম জমানার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলি সম্পর্কে প্রমাণ নিয়ে আসতে পারেনি। এমনটাই দাবি করছেন সিপিএম নেতারা।

জ্যোতি বসু ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শাসনকালে সিপিএমের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ উঠলেও টাকা নিয়ে চাকরি বিক্রি করা হচ্ছে এমন অভিযোগ ওঠেনি। কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা বাদ দিলে চাকরি বা অন্যান্য ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ নেই ৩৪ বছরের বাম সরকারের বিরুদ্ধে। তবে সিপিএমের বিরুদ্ধে রাজ্য জুড়ে বেলাগাম সন্ত্রাসের অভিযোগ বারবার উঠেছে। মানুষের ভোটাধিকার হরণ করা হচ্ছে, স্থানীয় নেতাদের কথামতো না চললে নিদারুণ অত্যাচার করা হচ্ছে, এমন হাজারো অভিযোগ রয়েছে লাল জমানার বিরুদ্ধে। কিন্তু আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ কার্যত নেই বললেই চলে। বুদ্ধবাবুর অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন নিয়ে বহু চর্চা হয়েছে। তিনি আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িয়েছিলেন, এ কথা তাঁর ঘোরতর শত্রুও বলবেন না। কিন্তু তা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে বাম আমলে টাকা দিয়ে চাকরি হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে তাদের আক্রমণ করেছেন, স্বাভাবিকভাবেই তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।

এখন প্রশ্ন এমন কথা কেন বললেন মুখ্যমন্ত্রী? ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে নজর ঘোরাতেই মুখ্যমন্ত্রী বামেদের পাল্টা আক্রমণ করেছেন। কারণ বিজেপি রাজ্যে কোনও দিন ক্ষমতায় আসেনি। অন্যদিকে একক শক্তিতে কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে শেষবার ক্ষমতায় এসেছে ১৯৭২ সালে। এরপর ৩৪ বছর রাজ্য শাসন করেছে সিপিএম তথা বামেরা। তাই মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতির অভিযোগ আনতে বামেদেরই নিশানা করতে বাধ্য হয়েছেন, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রী যে অভিযোগ করছেন তা কি আদৌ কোনও দিন প্রমাণ হবে? নাকি শুধু এগুলি বলার জন্য বলা? তাই তৃণমূলের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির যে সমস্ত অভিযোগ উঠেছে, তার অভিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে বামেদের বেছে নিয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *