নিজস্ব প্রতিনিধি: সম্পত্তি বৃদ্ধি মামলায় এবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবার! সম্পত্তির হিসেব চেয়ে এবার জনস্বার্থ মামলা দায়ের হল কলকাতা হাই কোর্টে। সোমবার অরিজিৎ মজুমদার নামে জনৈক আইনজীবী এই মামলা দায়ের করেছেন। আগামী সপ্তাহে মামলাটির শুনানি হতে পারে। এ খবর সামনে আসতেই রাজ্য রাজনীতিতে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে সোমবার মেয়োরোডের সভা মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি টাকা রোজগারের জন্য রাজনীতিতে আসিনি। মানুষের সেবা করব বলে রাজনীতিতে যোগদান করেছি। আমি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকার সুবাদে এক লক্ষ টাকা করে পেনশন পেতাম, এক পয়সাও নিইনি। এখনও মাইনে নিই না, এমনকী খুব দরকার ছাড়া সরকারি গাড়ি চড়ারও কোনও প্রয়োজন হয় না।’
পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যে বিজেপি ঘোড়া কেনাবেচা করে সরকার গড়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ টাকা বিজেপির হাতে এল কি করে? তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। এছাড়াও তাঁর অভিযোগ, বিজেপি দেশের জনগণের টাকা বিদেশে ব্যবসায়ীদের কাছে গচ্ছিত করছে। তিনি বলেন, ‘এই মামলা এখানে কেন, এই মামলা আন্তর্জাতিক আদালতে হোক।’
সবচেয়ে বড় কথা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ কতটা রয়েছে সেই প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে শুধু দেখা হয়। বিশেষ করে উৎসবের দিনগুলিতে তাঁদের দেখা সাক্ষাৎ হয়। স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীদের প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রীকে কেন পরিবারের লোকজনদের নিয়ে সাফাই দিতে হচ্ছে? যাদের কথা উল্লেখ করছেন মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের নাম মামলায় আছে কি? সেই উত্তরও চাইছেন বিরোধীরা।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অনুব্রত মণ্ডল গ্রেপ্তার হওয়ার পর তৃণমূল যথেষ্ট অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিরোধীরা সরব হয়েছে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতির কোনও অভিযোগ কেউ করছেন না। কারণ এটা সকলেই জানেন এত বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী কতটা অনাড়ম্বর জীবন যাপন করে এসেছেন। তাঁর সততা নিয়ে কোনও মহলই প্রশ্ন তুলছে না। কিন্তু এবার সম্পত্তি বৃদ্ধি মামলায় তাঁর পরিবারের লোকজনদের নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আর সেই সূত্রেই বিরোধীদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী কি এসবের কিছুই জানতেন না? বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী বলছেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ মাঝে মধ্যে হয়ে থাকে। আর সেই বিষয়টি নিয়েও বিরোধীদের প্রশ্ন, তবে কি একথা বলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের এড়িয়ে যেতে চাইছেন? মুখ্যমন্ত্রী কি এটাই বোঝাতে চাইছেন যদি পরিবারের লোকজনের অস্বাভাবিক সম্পত্তি বৃদ্ধি হয়েই থাকে, তবে তার দায় তিনি নেবেন না? সব মিলিয়ে এটা পরিষ্কার বিষয়টি নিয়ে বিরোধীরা আগামী দিনে নতুন করে ময়দানে নামবেন। এই পরিস্থিতিতে মামলাটির শুনানিতে আগামী দিনে হাইকোর্ট কি পর্যবেক্ষণ শোনায় সেদিকেই নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।