নিজস্ব প্রতিনিধি: পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মুখে এবার ষড়যন্ত্র তত্ত্ব! উল্লেখ্য এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার কয়েক দিন পর মন্ত্রিত্ব থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সরিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন কেউ দোষ করলে তিনি যত বড় নেতাই হোন না কেন তাঁকে রেয়াত করা হবে না। আর সেই সূত্রে তখন পার্থকে বলতে শোনা গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন। এরপর দুর্নীতি কাণ্ড তথা টাকার পাহাড় উদ্ধার করা নিয়ে পার্থকে কোনও মন্তব্য করতে শোনা যায়নি। তবে শুক্রবার পার্থ যে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। পার্থকে জোকার ইএসআই হাসপাতালে ইডি রুটিন মাফিক শারীরিক পরীক্ষা করাতে নিয়ে গিয়েছিল। আর সেখানে পার্থ রীতিমতো মুখের মাস্ক নামিয়ে বলে ওঠেন, ‘আমি ষড়যন্ত্রের শিকার’। মুখের মাস্ক নামিয়ে একথা বলার অর্থ একটাই, পার্থ চেয়েছিলেন তাঁর কথা যাতে সবাই পরিষ্কারভাবে শুনতে পান। শুধু তাই নয়, তাঁকে দল থেকে যেভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে তা নিয়েও মুখ খুলেছেন রাজ্যের সদ্য প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী। এ সম্পর্কে তাঁর জবাব, সময় সব কথা বলবে। আর পার্থর এই দুই সংক্ষিপ্ত মন্তব্য নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।
সবার একটাই প্রশ্ন, ষড়যন্ত্রের শিকার বলে পার্থ চট্টোপাধ্যায় কার দিকে ইঙ্গিত করতে চাইছেন? মজার কথা এক্ষেত্রে পার্থ বিজেপির বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। তাঁর সংক্ষিপ্ত জবাব এবং শরীরী ভাষা বলে দিচ্ছে দলের কারও দিকেই তিনি এই ইঙ্গিত সম্ভবত করতে চেয়েছেন। আর সেই অনুমান যদি সত্যি হয় তাহলে পার্থর নিশানায় রয়েছেন কে? উল্লেখ্য তৃণমূলে প্রবল ক্ষমতাধর এক যুব শীর্ষ নেতার সঙ্গে পার্থর সম্পর্ক কোনও দিনই মসৃণ ছিল না। কয়েক মাস আগের কথা, পার্থকে অত্যন্ত ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে বলতে শোনা গিয়েছিল যতদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন ততদিন তিনি দলে আছেন। সেই সময় পার্থর এমন মন্তব্য নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে যথেষ্ট চর্চা শুরু হয়। এবার পার্থ যে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব তুলে ধরতে চাইছেন তাঁর গ্রেফতারি নিয়ে, তার সঙ্গে পার্থর আগের মন্তব্য মিলিয়ে অনেকেই দুইয়ে দুইয়ে চার করার চেষ্টা করছেন। যদিও পার্থর এই মন্তব্য নিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, তিনি এ কথা গ্রেফতারের এতদিন পরে বলছেন কেন? স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীরা বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলকে নতুন করে তোপ দাগতে শুরু করেছেন। এ সম্পর্কে বিরোধীদের কটাক্ষ, পার্থ এবার ক্ষোভের সঙ্গে অনেক নাম বলে দিলে তৃণমূলের রাতের ঘুম চলে যাবে। তাঁদের আরও অভিযোগ, একা পার্থকে বলির পাঁঠা করে লাভ নেই। যে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার হয়েছে তার দায় তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে নিতে হবে। এই পরিস্থিতিতে পার্থ যেভাবে ষড়যন্ত্রের শিকার হওয়ার কথা বলেছেন তাতে তিনি দলের কাউকে ইঙ্গিত করছেন বলেই রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছেন। ইতিমধ্যেই মন্ত্রিত্ব খোওয়ানোর পাশাপাশি দল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ড হয়েছেন তিনি। আর তৃণমূল চাইছে পার্থ ইস্যু দ্রুত ক্লোজড চ্যাপ্টারে পরিণত হোক। ঠিক সেই সময় পার্থ যেভাবে ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ তুলেছেন তাতে গোটা বিষয়টি আগামী দিনে কোন দিকে মোড় নেয় সেদিকেই নজর থাকবে রাজনীতি সচেতন মানুষের।