পঞ্চায়েতের আগে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে বারবার সিঙ্গুর প্রসঙ্গ কেন? কী বার্তা দিতে চাইছেন মমতা?

পঞ্চায়েতের আগে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে বারবার সিঙ্গুর প্রসঙ্গ কেন? কী বার্তা দিতে চাইছেন মমতা?

 

নিজস্ব প্রতিনিধি: আগামী বছরের গোড়ার দিকেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে গ্রাম বাংলায় কার্যত ‘স্বাধীন সরকার’ তৈরি হয় বলেই ওয়াকিবহাল মহলের মত। সেই নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে কৃষক পরিবারগুলির। আর পঞ্চায়েত নির্বাচনের কয়েক মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে বার বার ঘুরে ফিরে আসছে সিঙ্গুর প্রসঙ্গ। তবে কি কৃষক সমাজকে বিশেষ বার্তা দিতেই মুখ্যমন্ত্রী দেড় দশক আগের ঘটনা প্রবাহ নতুন করে তুলে ধরতে চাইছেন? এই চর্চা যথারীতি শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির পাশাপাশি একাধিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে রাজ্য সরকার যখন মারাত্মকভাবে বিদ্ধ, তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধারাবাহিকভাবে সিপিএম এবং বিজেপিকে পাল্টা আক্রমণ করে চলেছেন। বৃহস্পতিবার মধ্য কলকাতার জানবাজারে একটি কালীপুজোর উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী সিঙ্গুর প্রসঙ্গ ফের তুলে এনে সিপিএমকে কৃষক বিরোধী আখ্যা দিয়ে তীব্র আক্রমণ করে বলেন, খড়্গপুর গিয়ে দেখে আসুন। আইটি সেক্টর ঘুরে আসুন। কি করে শিল্প করা যায় তা জানতে হবে। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, সিপিএম কৃষকদের জমি জোর করে কেড়ে নিয়েছে। তাপসী মালিকের মতো মেয়েকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে বলে ফের সিপিএমকে নিশানা করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে মমতা জানিয়েছেন, এ রাজ্যে যে সব সংস্থা বিনিয়োগ করতে এসেছে, কারও মধ্যে তাঁর সরকার বিভেদ করেনি। এমনকী টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গেও নয়। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, জোর করে কৃষকদের জমি না কেড়ে নিয়ে বিকল্প উপায়ে জমি নিতে হবে। কৃষকদের উচ্ছেদ করে তৃণমূল সরকার যে জমি অধিগ্রহণ করবে না, সেকথা ফের স্পষ্ট করেছেন তিনি।

পঞ্চায়েত অর্থাৎ গ্রাম বাংলার এই নির্বাচনে কৃষক পরিবারগুলির একটা বড় ভূমিকা থাকে। সেই জায়গা থেকে মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে কৃষক স্বার্থের কথা তুলে ধরার জন্য পরপর দু’দিন সিঙ্গুর প্রসঙ্গের অবতারণা করলেন, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছেন, তৃণমূলের বিরুদ্ধে যখন ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তখন বিরোধীদের পাল্টা এভাবেই চাপে ফেলতে চাইছেন মমতা। এছাড়া তৃণমূল সরকার  শিল্পায়নে কতটা আগ্রহী সে কথাও ফের বোঝাতে চেয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, জঙ্গলমহল সুন্দরী, ৭২ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট করছে রাজ্য সরকার। ডানকুনি থেকে পানাগড়, পানাগড় থেকে রঘুনাথপুর পর্যন্ত ট্রেড করিডর হচ্ছে। সেই সূত্রে মমতা দাবী করেছেন ভারতবর্ষে চল্লিশ শতাংশ বেকার বাড়লেও বাংলায় চল্লিশ শতাংশ কর্মসংস্থান বেড়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে রাজ্যে কর্মসংস্থানের ছবিটা বেশ উজ্জ্বল, এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই একদিকে সিঙ্গুর প্রসঙ্গ তুলে ধরে কৃষকদের বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের কথা বলে বেকার যুবক-যুবতীদের মুখ্যমন্ত্রী আশার আলো দেখাতে চাইছেন বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − 15 =