নিজস্ব প্রতিনিধি: পঞ্চায়েত নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে বহুদিন ধরেই আলোচনা চলছে নানা স্তরে। বিগত বেশ কয়েক মাস ধরেই রাজ্য প্রশাসনের অলিন্দে এমন কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল যে নির্ধারিত সময়ের বহু আগেই চলতি বছরের শেষে পঞ্চায়েত নির্বাচন হতে পারে। এরপর জেলা সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়। ঝাড়গ্রামে একটি জনসভা থেকে পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক করে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের যাঁরা রয়েছেন তৃণমূলের, আমি দলের মিটিং-এ তাঁদের নির্দেশ দিচ্ছি মানুষের কাজ ফেলে রাখবেন না। বর্ষা আসার আগে টেন্ডারগুলি সম্পূর্ণ করে দ্রুত কাজ শুরু করে দিন।” সেই সূত্রে তখন মুখ্যমন্ত্রীকে আরও বলতে শোনা গিয়েছিল, “বর্ষা এসে পড়লে তিন মাস কাজ হবে না। ফলে কাজ পড়ে থাকবে। তাই বর্ষার আগেই কাজ শুরু করে দিন। তারপরেই পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা করে দেব। তখন কাজ করার সুযোগ পাবেন না। সুতরাং কাজ করুন চটপট, মানুষ দেখুক ঝটপট।”
এটা গত মে মাসের শেষের দিকের কথা। তখনই জল্পনা শুরু হয় সম্ভবত ডিসেম্বরে পঞ্চায়েত নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বলছে সেটা আদৌ সম্ভব নয়। বিশেষ সূত্রে খবর, ডিসেম্বরে নয়, ফেব্রুয়ারিতে পঞ্চায়েত নির্বাচন হতে পারে। কারণ আসন পুনর্বিন্যাসের কাজ এখনও শেষ হয়নি। এছাড়া শেষ হয়নি আসন সংরক্ষণের কাজও। তাই চলতি বছরে ভোট হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। সূত্রের খবর, জানুয়ারি মাসে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হতে পারে। তবে খাতায়-কলমে এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট করার কথা। জানা গিয়েছে ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জেলাগুলিকে আসন পুনর্বিন্যাসের কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। এরপর ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আসন সংরক্ষণের কাজ শেষ করতে হবে। এরপর সেগুলি খতিয়ে দেখে পুনর্বিন্যাসের পর কমপক্ষে ৭৫ দিন এবং সংরক্ষণের ৯০ দিন পর নির্বাচন করা সম্ভব। অর্থাৎ এগুলি শেষ করতেই প্রায় ডিসেম্বর মাস শেষ হয়ে যাবে। এ বিষয়ে রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিক জানান, এখন যা গতিপ্রকৃতি দেখা যাচ্ছে তাতে ফেব্রুয়ারির আগে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোট করা সম্ভব নয়। তবে ফেব্রুয়ারিতে রাজ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষা রয়েছে। তাই ভোট এবং পরীক্ষা একই সময় কতটা করানো সম্ভব সেটা নিয়েও চিন্তা ভাবনা করতে হবে প্রশাসনকে।
যদিও ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে যে সময় মুখ্যমন্ত্রীর কথায় পঞ্চায়েত ভোট বেশ কয়েক মাস আগে হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল, তখন পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অনুব্রত মণ্ডল কাণ্ড সামনে আসেনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচন হলে শাসকদলের নেতাকর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তার প্রভাব পড়তে পারে নির্বাচনে। তবে কি সেই কারণেই পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আনার কথা ভাবা হলেও বাস্তবে সেটা করা হচ্ছে না? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে। যদিও রাজ্যের তৃণমূল নেতারা বারবার দাবি করছেন পঞ্চায়েত নির্বাচনে দল আগের চেয়েও ভাল ফল করবে। পাল্টা বিরোধীরা পঞ্চায়েতে ভাল ফল করার ব্যাপারে আশাবাদী। সব মিলিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন চলতি বছরের শেষে হবে কিনা তা নিয়ে সবারই কৌতূহল ছিল। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আরও কয়েক মাস বাকি রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। গ্রামবাংলায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিরোধীদের তোলা দুর্নীতির অভিযোগ কতটা প্রভাব ফেলে এখন সেটাই দেখার।