নিজস্ব প্রতিনিধি: মুখ্যমন্ত্রীর মুখে প্রধানমন্ত্রীর স্তুতি! সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর এক মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তুঙ্গে। উল্লেখ্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং ইডি রাজ্যে অতি সক্রিয়তা দেখাচ্ছে, এই অভিযোগ এনে সোমবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে বিধানসভায় নিন্দা প্রস্তাব এনেছে তৃণমূল সরকার। আর নিন্দা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বলেছেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অতি সক্রিয়তার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দায়ী নন। উল্টে নাম না করে তিনি বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ইশারাতেই অতি সক্রিয় হয়েছে সিবিআই-ইডি। তারা যে লাগাতার অভিযান চালাচ্ছে তার পেছনে এই দুই নেতার হাত দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই কংগ্রেস এবং বাম নতুন করে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে ‘সেটিং তত্ত্ব’ তুলে ধরে দিদি-মোদির মধ্যে আঁতাতের অভিযোগ করছে। মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় স্পষ্ট বলেন,” সিবিআই এখন প্রধানমন্ত্রীর দফতরে নেই, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে আছে। কলকাতায় ২১টা ইডি রেড হয়েছে। এক মাসে ১০৮টা কেস করেছে সিবিআই, ইডি। আমি বিশ্বাস করি না এটা নরেন্দ্র মোদি করছেন। বিজেপি নেতারা এসব করছেন। কিন্তু তোমরা বুনো ওল হলে আমি বাঘা তেঁতুল৷” শুভেন্দু-সহ বিজেপি বিধায়কদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীকে এমন কথা বলতে শোনা গিয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে মমতা এভাবে নরম অবস্থান নেওয়ায় বিষয়টিকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
ওয়াকিবহাল মহল বিষয়টি নিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জমানার মিল পাচ্ছে। সেই সময় সুশীল সমাজ, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সংবাদ মাধ্যমের একটা বড় অংশে এটাই প্রতিফলিত হয়েছিল যে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ভাল কাজ করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু সিপিএম তথা আলিমুদ্দিন একেবারেই ঠিক নয়। মমতার বক্তব্যে সেই ছায়াই দেখা যাচ্ছে। উল্লেখ্য রাজ্যের জন্য বেশ কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মাস দেড়েক আগেই সাক্ষাৎ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। যে সাক্ষাৎ নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে যায়। বাম-কংগ্রেস অভিযোগ করে বলতে থাকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা যেভাবে বাংলায় সক্রিয় হয়েছে সেখান থেকে মুক্তি পেতেই মোদির দ্বারস্থ হয়েছেন মমতা। মোদি-মমতার মধ্যে ‘সেটিং’-এর অভিযোগ তুলে সরব হয় তারা। সেই আক্রমণ ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে। সবচেয়ে বড় কথা সাম্প্রতিককালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কোনও সাক্ষাৎ হয়নি। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি গিয়ে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এছাড়া তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল বিগত বেশ কিছুদিন ধরে মোদির বিরুদ্ধে তৃণমূলকে ততটা আক্রমণাত্মক দেখাচ্ছে না। সেখানে শাহের বিরুদ্ধে তৃণমূল অনেক বেশি আক্রমণাত্মক হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘ইন্ডিয়াস বিগেস্ট পাপ্পু’ বলে কটাক্ষ করছে তৃণমূল। এমনকী গরু পাচার, কয়লা পাচার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কেলেঙ্কারি, এমন বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে ততটা সুর চড়াতে দেখা যাচ্ছে না।
ঠিক এই জায়গা থেকেই প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে নরম অবস্থা নিয়েছেন তাতে কি রাজ্যে জমি ফিরে পাবে বাম-কংগ্রেস? কারণ এটা সকলেই জানেন সংখ্যালঘু ভোটের সিংহভাগ তৃণমূলের দিকে থাকাটাই সেটা তাদের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই জায়গা থেকে মোদি সম্পর্কে মমতার এই অবস্থানে সংখ্যালঘু ভোটে চিড় ধরাতে এবার উঠে পড়ে লাগবে বাম-কংগ্রেস। তাতে তারা কিছুটা হলেও সফল হবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। যদিও বিষয়টি নিয়ে বিজেপি শিবির মনে করছে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টির জন্যই মুখ্যমন্ত্রী এমন কথা বলেছেন। বিজেপি নেতাদের দাবি তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর পাতা ফাঁদে পা দেবেন না। সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যে রাজ্য রাজনীতিতে যথেষ্ট সেনসেশন তৈরি হয়েছে। বিষয়টি আগামী দিনে কোন দিকে গড়ায় এখন সেটাই দেখার।